একটা সময় ছিল, যখন রিয়ালের মাঝমাঠে ঠান্ডা মাথার এক শিল্পী নামতেন, জাবি আলোনসো। সময় বদলেছে, এখন তিনি মাঠের পাশে, স্যুট পরে দাঁড়ান। চেহারায় সেই পুরনো ক্লাস, চোখে একই নি:শব্দ তীক্ষ্ণতা।
কিন্তু, সান্তিয়াগো বার্নাব্যুর নয়, এবার তাঁর যুদ্ধ ক্লাব বিশ্বকাপের মঞ্চে। রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে কোচিং ক্যারিয়ারে প্রথম ম্যাচেই ড্র, আলোনসোর কাঁধ যেন তখন ভারী হয়ে আসে অদৃশ্য এক পাহাড়ের চাপে।
মেক্সিকান ক্লাব পাচুকার বিপক্ষে তাই রিয়ালের ডাগআউটে দেখা গেল এক মরিয়া আলোনসোকে। শোনা যায়, অনুশীলনে ড্রোন উড়িয়ে দল গোছান তিনি। কিন্তু দিনশেষে ফুটবল তো কেবল পরিকল্পনার খেলা নয়, আবেগ, বুদ্ধি আর সাহসের লড়াইও বটে।
ব্যাঙ্ক অব আমেরিকা স্টেডিয়ামে সেই লড়াই শুরু হল নাটকীয়তায়। ম্যাচের সপ্তম মিনিটেই লাল কার্ড! রাউল অ্যাসেনসিও, সলোমন রনডনের গতির মুখে পথরোধ করলেন বক্সের ঠিক বাইরে। লাস্ট ম্যান চ্যালেঞ্জ!
ফলে মাঠ ছাড়তে হল রিয়ালের এক গুরুত্বপূর্ণ ডিফেন্ডারকে। তখন থেকেই রিয়াল খেলতে থাকে ১০ জন নিয়ে। ‘লস গ্যালাকটিকোস’রা হঠাৎ যেন দাঁড়িয়ে যায় এক অসম যুদ্ধের ময়দানে।
কিন্তু সেখানেই ফুটে উঠলো রিয়ালের আসল রূপ। বল দখলে পিছিয়ে থেকেও বেলিংহামদের চোখে ছিল আগুন, পায়ে ছিল আত্মবিশ্বাস। পাচুকার ২৫টি শটের বিপরীতে রিয়ালের শট সংখ্যা ছিল মাত্র ৮। তিনটি অন টার্গেট শটে তারা গোল করলো তিনটিতেই!
৩৫ মিনিটে শুরুটা করলেন ইংলিশ তরুণ বেলিংহাম, দুর্দান্ত এক ফিনিশিংয়ে। রিয়ালের জার্সিতে যেন ধীরে ধীরে একটা ক্যারিশমা হয়ে উঠছেন তিনি। তারপর ৪৩ মিনিটে টার্কিশ বিস্ময় আর্দা গুলের গোল করে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন। আর দ্বিতীয়ার্ধে ফেদে ভালভার্দে শেষ পেরেকটি ঠুকে দেন পাচুকার কফিনে।
শেষদিকে মন্তিয়েল এক গোল শোধ দিয়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু ম্যাচের নিয়ন্ত্রণে তার কোনো প্রভাব ছিল না। কারণ মাঝমাঠে তখনও রাজত্ব করছিলেন কামাভিঙ্গারা, পোস্টে অদম্য প্রহরায় ছিলেন থিবো কোর্তোয়া। ১১টি শট ঠেকিয়ে যেন নতুন এক ইতিহাসই লিখে ফেললেন তিনি, ক্লাব বিশ্বকাপের এক ম্যাচে সবচেয়ে বেশি সেভের রেকর্ড।
একজন কম নিয়েও ৯০ মিনিট ধরে যেভাবে রিয়াল খেলেছে, তাতে মনে হলো এ দল শুধু গোল নয়, গল্পও লিখে। ম্যাচ শেষে আলোনসোর কণ্ঠে ধরা পড়লো সেই অনুভব, ‘প্রেক্ষাপট বিবেচনায় এই জয় মহামূল্যবান। প্রায় পুরো ম্যাচটাই একজন কম নিয়ে খেলা খুবই পরিশ্রমসাধ্য ব্যাপার ছিল। তবে আমরা যেভাবে বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে খেলা পরিচালনা করেছি, তাতে আমি তুষ্ট।’
তুষ্ট? এই তো শুধু শুরু, মিস্টার আলোনসো। জয়ের স্বাদ যেমন মিষ্টি, তেমনি এ জয় যেন বলে দিলো, রিয়াল আবার ঘুরে দাঁড়াচ্ছে, আর তাদের কাণ্ডারির নাম জাবি আলোনসো।