ড্র করলেই শিরোপার নিশ্চিত। এমন এক পরিসংখ্যান নিয়েই ঘরের মাঠে নেমেছিল রিয়াল মাদ্রিদ। স্প্যানিশ ক্লাবটির ঘরের মাঠ সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে এসপানিওলকে আতিথিয়েতা দেয় মাদ্রিদ। যেখানে ড্র করলেই যথেষ্ট সেখানে গুণে গুণে চারখানা গোল করেছেন উড়তে থাকা মাদ্রিদ। এর এতেই চার ম্যাচ বাকি থাকতেই শিরোপা নিজেদের করে নেয় রিয়াল মাদ্রিদ।
কেউ কেউ হয়ত মাদ্রিদের এই শিরোপা জয়ের আড়চোখে তাকাচ্ছেন। তেমনটা করার খুব একটা কারণ নেই। মাদ্রিদ পুরো এই টুর্নামেন্টটা খেলেছে দাপটের সাথে। একটা পরিসংখ্যান দিলে হয়ত বিষয়টা খানিক স্পষ্ট হবে। শেষ যেবার চার ম্যাচ হাতে রেখে শিরোপা জিতেছিল কোন দল সে ঘটনাটা ছিল চার কিংবা পাঁচ বছর আগের। সেবার আর্নেস্তো ভালভার্দের প্রথম মৌসুমের বার্সেলোনা জিতেছিল। দ্বিতীয় স্থানে থাকা অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের সাথে ১৪ পয়েন্টের পার্থক্যে।
আর এবার যখন রিয়াল জিতলো তখন ব্যবধান ১৭ পয়েন্টের। বুঝুন তবে। কিন্তু অনেকে হয়ত রিয়াল মাদ্রিদের এই জয়ের পেছনে অন্যসব কারণ দাঁড় করাতে চাইবে। তবে যত কারণই দাঁড় করানো হোক না কেন তা আসলে খুব একটা ধোপে টিকবে না। হ্যাঁ এটা সত্য যে রিয়াল মাদ্রিদ এবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগে বেশ কষ্টার্জিত সব জয় পাচ্ছে। তবে তাতে তো আর লিগে প্রভাব পড়ার কথা নয়।
১৩তম সপ্তাহ থেকে রিয়াল মাদ্রিদ লা লিগার পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষস্থানটা দখলে রেখেছিল। একটি বারের জন্যে তাঁদেরকে হুমকি দেওয়ার মত কেউ যেন সুযোগই পায়নি। মাদ্রিদ কাওকে সে সুযোগটা দেয়নি। এক্ষেত্রে কোচ কার্লো আনচেলত্তি প্রশংসা পাওয়ার নি:সন্দেহে দাবিদার। তিনি তাঁর দলে থাকা প্রতিটা খেলোয়াড়দের সামর্থ্য পরিমাপ করে সে অনুযায়ী পরিকল্পনা সাঁজিয়েছেন।
ভিনিসিয়াস জুনিয়রের মত একজন দ্রুতগতির খেলোয়াড়কে তিনি কাউন্টার অ্যাটাকে জন্যে ব্যবহার করেছেন। অন্যদিকে করিম বেনজেমাকে খেলিয়েছেন ফ্রি রোলে। বেনজেমা কখনও খেলা সাজিয়েছেন আবার কখনও তিনি হয়ে গেছেন ‘পিওর নাম্বার নাইন’। প্রতিটা ম্যাচে আলাদা কিছু করতে চেয়েছেন কার্লো তা নয়। তিনি তাঁর স্বভাবজাত পরিকল্পনা মোতাবেকই খেলেছেন।
একটি দলকেই সময় দিয়েছেন, তাদেরকেই বারবার খেলিয়েছেন। তবে মাঝে মাঝে তিনি এমন গুরুত্বপূর্ণ সময়ে বদলি খেলোয়াড়দের নামিয়েছেন যখন প্রায় সব শেষ হয়ে যাবে যাবে অবস্থা। ঠিক তখন সে সব বদলি খেলোয়াড়েরা আনচেলত্তির ভরসার প্রতিদান দিতে পেরেছেন। অন্যদিকে খেলোয়াড়দের সম্পর্কে যেন না বললেই নয়।
করিম বেনজেমা এবং ভিনিসিয়াস জুনিয়র এই জুটি বর্তমান সময়ের সেরা। এ নিয়ে দ্বিধা করার বিন্দুমাত্র অবকাশ নেই। এই দুইজনের কাঁধে ভর করেই রিয়াল আক্রমণ সাজিয়ে সফলতা পেয়েছে। অন্যদিকে গোলবারে থিবো কর্তুয়া নিজের ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা একটা সময় পার করেছে। তিনি অতন্দ্র প্রহরী হয়ে পাহারা দিয়ে গেছেন। রিয়ালের থেকে কেবলমাত্র সেভিয়া কম গোল হজম করেছে।
রক্ষণে মিলিটাও, ডেভিড আলাবারা বেশ আঁটসাঁট রাখার চেষ্টা করেছেন। কিছু ক্ষেত্রে তাঁদের বাজে পারফরমেন্স দলকে ভোগালেও তা দীর্ঘস্থায়ী কোন সমস্যায় রুপান্তরিত হয়নি। মধ্যমাঠের লুকা মদ্রিচ এই বয়সেও ছিলেন দূর্দান্ত। তাঁর সাথে ক্যাসেমিরো আর টনি ক্রুস সঙ্গ দিয়ে যাওয়ার চেষ্টাটা করে গেছেন। তবে এই তিনজন যে একেবারে ফর্মের তুঙ্গে ছিলেন তা বলার সুযোগ নেই। মাঝেমাঝে তরুণ এডওয়ার্ডো কামাভিঙ্গা আর ফেডে ভালভার্দেরা জ্বলে উঠেছেন।
বেঞ্চে বসে থাকা খেলোয়াড়রাও সময়মত হাজির হয়ে নিজেদের সেরাটা দিয়েছে বলেই মাদ্রিদ দাপটটা দেখাতে পেরেছে। মোদ্দাকথা মাদ্রিদ এবার একটা ইউনিট হিসেবে খেলেছে বলেই সাফল্য এসে ধরা দিয়েছে। তবে এ কথাও ঠিক রিয়াল মাদ্রিদের প্রতিদ্বন্দী দলগুলো যেমন অ্যাতলেটিকো মাদ্রিদ ও বার্সেলোনা এবারের মৌসুমে ছিল একেবারেই সাদামাটা।
গেল বারের চ্যাম্পিয়ন দল অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ এবার যেন ফর্মহীনতার চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল। তবুও তাঁরা শীর্ষ চারে থেকে শেষ করতে পারবে হয়ত এবারে মৌসুম। অন্যদিকে বার্সেলোনার শুরুটা ছিল আরও বাজে। লিগের প্রথম দিকে নয়ের আশেপাশে ছিল তাঁদের অবস্থান। সেখান থেকে তাঁরা অবশ্য ঘুরে দাঁড়িয়েছে। তবে সেটা মাদ্রিদের শিরোপা জয়ের পথে বাঁধ সাধতে পারেনি।
এসব কারণও হয়ত বড় ব্যবধানে রিয়াল মাদ্রিদকে লিগ জিততে সহয়তা করেছে। তবে মাদ্রিদের ধারাবাহিকতার সামনে আসলে সম্ভব ছিল না তাঁদের কাছ থেকে এবারের মৌসুমের লা লিগা শিরোপা ছিনিয়ে নেওয়া। মাদ্রিদের এখন দারুণ এক সময় পার করছে। তবে এখন তাঁদের প্রধান লক্ষ্য চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনাল পার করা। শিরোপা জয়ের আনন্দে উজ্জীবিত থাকা কার্লো আনচেলত্তির দল নিশ্চয়ই চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা হাতছাড়া করতে চাইবে না।