রশিদ খান ও ফ্র্যাঞ্চাইজি যুগের অলরাউন্ডারশিপ

টি-টোয়েন্টিতে এই অলরাউন্ডদের দুইটা ক্যাটাগারি আছে। যারা ঝড় তুলে টি-টোয়েন্টিতে ব্যাটিং করতে পারেন, সাথে যতটা পারেন বোলিং করেন৷  বোলিংটা কখনোই তাদের নির্ভরতার জায়গা না। যত সময় না ম্যাচের সবচয়ে খারাপ ওভারটা করেন ততসময় অবধি তাদের বোলিং চলতে থাকে৷  ম্যাক্সওয়েল, লিভিংস্টোন, স্টয়নিস,  রাসেল,  পোলার্ড, নিশাম, মইন আলী,  মিশেল মার্শ, হার্দিক পান্ডিয়া এরা হচ্ছে এই ক্যাটাগারিতে পড়ে।  ফ্রি ফ্লোতে ব্যাটিং করতে পারে যে কোনও পজিশনে৷। বোলিংটা অনেকটা সিচুয়েশন ডিমান্ডের উপর। একজন মেইন বোলার প্রথম ওভারে ১০-১৫ রান কনসিড করলেও তাকে পরে ওভার দেয়া হবে। কিন্তু এই টাইপের অলরাউন্ডের ক্ষেত্রে  বেশির ভাগ সময় ব্যাপারটা হচ্ছে, ‘এটা তোমার দিন নয়।’

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে অলরাউন্ডারশিপ ব্যাপারটা অনান্য  ফর্মেট গুলোর মতো জটিল না। টেস্ট ক্রিকেটে একজন অলরাউন্ডার হওয়াটা ভীষণ কঠিন একটা ব্যাপার। দুই দিকেই দক্ষতার সাথে অনেক ক্রিকেট খেলার জন্য সমান স্ট্যামিনাও দরকার।

অলরাউন্ডার নিয়ে আলোচনার আগে টি-টোয়েন্টি নিয়ে কিছু জিনিস বলি। টি-টোয়েন্টি মানেই ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট। বিশ্বকাপ ছাড়া কোনও সিরিজই কেউ খুব গুরুত্ব দিয়ে খেলে না বাংলাদেশ ছাড়া৷ ইভেন আইসিসি সহ কিছু জনপ্রিয় ক্রিকেট সাইট দশক সেরা দল গড়তে রীতিমতো ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট আর বিশ্বকাপের পারফরম্যান্স বিবেচনায় বছর খানেক আগে ডেকেড সেরা কিছু টি-টোয়েন্টি দল দিয়েছেন।

আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি সিরিজ গুলো অনেকটা রেস্টুরেন্টে গুলোয় ওয়েলকাম ড্রিংকস কিংবা খাবার শেষে কমপ্লেমন্টরি ডেজার্টের মতো। কোনও একটা টেস্ট বা বড় ওডিআই সিরিজ শেষে ২/৩ ম্যাচের একটা সিরিজ রাখা বা শুরুর আগে রাখা। স্পন্সর, টিভি সত্ব এগুলো মাথায় রেখে এগুলো রাখা হয়। তবে ইদানিং সিরিজের ম্যাচের সংখ্যা বাড়ছে। তারপরও দলগুলো খেলোয়াড়দের দিয়ে রোটেট করে এই ফরম্যাট খেলে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) ছাড়া বাকি বোর্ডগুলোর আয়টাই আসল হিসাবে দেখে টি-টোয়েন্টি থেকে৷ বিসিবি তো দ্বিতীয় সারির দলকে ১২ ওভারে ঘরে হারাতে পারলেই মহাখুশি।

টি-টোয়েন্টি এবং ফ্র্যাঞ্চাইজির ক্রিকেটে খুব একটা পছন্দ না করলেও সত্যিটা হচ্ছে এখান থেকে পিছে যাবে না এই ক্রিকেটটা। উল্টা সামনের দিনে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট আরও বেশি মডিফাই হতে যাচ্ছে। আরও দল বাড়বে, ড্রাফট থেকে বেরিয়ে অকশনও যাবে সামনের দিকে। আরও অনেক নতুনত্ব আসতে পারে। বিশ্ব ক্রিকেটের  জন্য  কতটুকু ভালো না খারাপ সেটা বড় আলোচনা তবে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট চাহিদার আরও বড় হবে৷

এখানে সবচেয়ে বেশি চাহিদা হচ্ছে একজন অলরাউন্ডারের। দলের সবচেয়ে বড় সম্পদ মানা হয় তাদের।

টি-টোয়েন্টিতে এই অলরাউন্ডদের দুইটা ক্যাটাগারি আছে। যারা ঝড় তুলে টি-টোয়েন্টিতে ব্যাটিং করতে পারেন, সাথে যতটা পারেন বোলিং করেন৷  বোলিংটা কখনোই তাদের নির্ভরতার জায়গা না। যত সময় না ম্যাচের সবচয়ে খারাপ ওভারটা করেন ততসময় অবধি তাদের বোলিং চলতে থাকে৷  ম্যাক্সওয়েল, লিভিংস্টোন, স্টয়নিস,  রাসেল,  পোলার্ড, নিশাম, মইন আলী,  মিশেল মার্শ, হার্দিক পান্ডিয়া এরা হচ্ছে এই ক্যাটাগারিতে পড়ে।  ফ্রি ফ্লোতে ব্যাটিং করতে পারে যে কোনও পজিশনে৷। বোলিংটা অনেকটা সিচুয়েশন ডিমান্ডের উপর। একজন মেইন বোলার প্রথম ওভারে ১০-১৫ রান কনসিড করলেও তাকে পরে ওভার দেয়া হবে। কিন্তু এই টাইপের অলরাউন্ডের ক্ষেত্রে  বেশির ভাগ সময় ব্যাপারটা হচ্ছে, ‘এটা তোমার দিন নয়।’

আরেকটা ক্যাটাগারি আছে যারা পারফেক্টলি নিজের স্পেল শেষ করতে পারেন সাথে ব্যাটিংও পারেন। সাকিব, অশ্বিন, জাদেজা, অক্ষর প্যাটেল, ব্রাভো,হোল্ডার, ক্রিস ওকস, অ্যাস্টন অ্যাগার, স্ট্যান্টনার, কামিন্স, নবী,হাসারাঙ্গা, ক্রিস মরিস, ঠাকুর এই টাইপের আরও অনেকেই আছে, এরা হচ্ছে একটা ক্যাটাগরির মধ্য পড়ে।  এদের থেকে নিশ্চিতভাবে বেশির ভাগ সময়ই চারটা ওভার আপনি পাবেন। যে কোনও ডিমান্ডিং সিচুয়েশনে তাদের বোলিং আনতে পারেন। একটা বিগ ওভার কনসিড করলেও তাদের স্পেল শেষ করাতে বেশির ভাগ সময়ই অধিনায়ক হিসাবে সাহসী হবেন।

টি-টোয়েন্টিতে গ্যারি সোবার্স টাইপ অলরাউন্ডার কেউ খুঁজে না। বা খুব একটা দরকার ও নাই। মাত্র ১২০ বলের খেলা। এখানে সময় সুযোগ দুইটাই সীমিত। আরও উপরে নিচে এত কোয়ালিটিফুল ক্রিকেটার থাকে, যে আপনি যেটুক সুযোগ পাবেন সেটুক কাজে লাগাইতে পারেন  তাইলে এই ফরম্যাটে মোস্ট ইমপ্যাক্টফুল প্লেয়ার।

ক্যাটাগারির ২ ক্ষেত্রে আবার দুইটা পার্ট আছে। এক পক্ষ যারা ক্যামিও সেভাবে খেলতে পারেন না। অশ্বিন, প্যাটেল, স্ট্যান্টনার, সাকিব, অ্যাগ্যাররা এটা পারেন না। মরিস, হোল্ডার, আগে ফকনার , ওডেন স্মিথ, রাদারফোর্ড,  ছিলো এরা আবার পারে এদের উপর ফ্রানচাইজিগুলো সব পটেনশিয়াল বাজি লাগায় দেয়। যে কোনও মূল্য এইসব প্লেয়ার নিতে চায়।

এই দুই ক্যাটাগরির বাইরে আরেকটা এলিট শ্রেনী আছে। যাদের সার্মথ্যে আছে ১০ ইনিংস শেষে নিজের স্ট্রাইকরেটেটা ১৫০ উপরে রাখার,  একটা দুইটা বড় ৭০,৮০ বা সেঞ্চুরি মারার সাথে ১০ ইনিংসে সমান তালে বল করার। পাওয়া প্লে, ডেথ সব খানেই স্পেল করবেন, সহনীয় ইকোনমি রাখতেও সক্ষম, উইকেটও অনেক পেতে পারেন। শেন ওয়াটসন, ফ্লিনটফ কিংবা বেন স্টোকসরা হচ্ছে এই ক্যাটাগরির।  এরা সবসময়ই  অকশন শেষে সবচেয়ে দামী ক্রিকেটার হন৷ ২০০৮ সালে ফ্লিনটফ সবচেয়ে দামী ক্রিকেটার হয়েছিলেন।

চড়া মূল্য পেয়েছিলেন। শ্রীলঙ্কার অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজ যখন রেগুলার বল করতে পারতেন ঐসময় তিনিও চড়া মূল্য পেয়েছিলেন। শেন ওয়াটসন রাজস্থান থেকে সবসময় রিটেন হলেও রাজস্থানের নিষেধাজ্ঞার পর অকশন সবচেয়ে বেশি মূল্য পান।  বেন স্টোকস দুইবার অকশনে উঠেছেন দুইবারই চড়া মূল্য পেয়েছেন, সবচেয়ে দামী ক্রিকেটার হয়েছেন। ২০২৩ যদি নিলামে আসেন, এবং পুরো টুর্নামেন্ট খেলার এবং বোলিং করার প্রতিস্রূতি আগে থেকেই ক্লিয়ার করেন তার বর্তমান ফর্মের অবস্থা যাই থাক তিনি সর্বোচ্চ দাম নিয়ে যাবেন।

এই শ্রেনির অলরাউন্ডারা কম হওয়াতে ফ্রানচাইজি গুলো মূলত বাজিটা থাকে ক্যাটাগরির দুই যাদের কথা বললাম সেই সব ক্রিকেটারের দিকে। যারা ৪ টা ওভার বল করতে পারবেন৷ সাথে ১০-১২ বল পেলে সেটাও কাজে লাগাবেন। ক্রিস মরিস বা কাইল জেমিসনের মূল্য কিংবা এই মৌসুমে হাসারাঙ্গার মূল্য নিয়ে যতোই মজা করেন না কেন। ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর মোটিভই ছিলো এটা। গত মৌসুমে রাজস্থান ৬/৭ টা ম্যাচ জিতে তার মধ্যে ৩ টা ম্যাচের মরিসের ক্যামিও গুলোর অবদান ছিলো।  আরও ২ টা ম্যাচ মরিস অবদান রাখতে পারলেই তারা হয়তো প্লে অফে চলে যেতো। তখন পয়সাটা উসুশ মনে হতো।

অশ্বিন এত বছর খেলেন, ভারতের মিডিয়া তাকে অলরাউন্ডার রুপে অনেক কিছু বললেও সে  আইপিএলে খুব উচ্চ মূল্যের প্লেয়ার না। ৬-৭ এর মধ্যে ডিল পান। তাকে অলরাউন্ডার মানলেও তার পক্ষে এই ক্যামিও গুলো খেলা সম্ভব না। দলগুলো তাই খুব বেশি দর হাকায় না। ঐ দিকে ঠাকুর ক্যামিও খেলতে পারেন দেখে, ফ্রানচাইজি গুলো তার উপর ১০-১২ কোটি  লাগায় দেয়। জাদেজাকেও টি২০ তে অশ্বিনের মতোই চিন্তা করা হইতো। তার মূল্যও আকাশ ছোঁয়া কখনোই ছিলো না। কিন্তু গত দুই আসরে ব্যাটিংটায় নিজের সক্ষমতা প্রমান করে সবচেয়ে বেশি মূ্ল্য রিটেন হয়েছেন এইবারই।

এই ক্যাটাগারিতে সবচেয়ে ইফেক্টিভ হওয়ার রাস্তায় আছেন রশিদ খান। টি২০ ক্রিকেটে তো তিনি নেক্সট বিগ থিং অনেক আগেই । এখন তিনি হতে যাচ্ছেন সবচেয়ে ভ্যালুয়েবেল এ্যাসেট। বল হাতে তার চারটা ওভার তো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এর পাশাপাশি এখন দারুণ ক্যামিও খেলেন। ফ্রানচাইজিগুলো যেগুলো খোঁজেন দলের জন্য রশিদ এখন সেই ক্যাটাগারিতে পড়েন। তার শেষ ২ ইনিংস তার ব্যাট হাতে ক্যামিও খেলার ধারনা দেয়৷ রশিদ খানের আইডল হচ্ছেন শহীদ আফ্রিদি।

কোনও একটা সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন তিনি আফ্রিদির মতো অলরাউন্ডার হতে চান। তিনি তার হিটিং এবিলিটি নিয়ে কাজ করতেছেন, তিনি তার ব্যাটিং নিয়ে কাজ করতেছেন। আইপিএলের ব্যাটিং যদি ফ্লুক মনে হয়। সে পিএসএলেও এমন কিছু ইনিংস খেলছেন। বিগ ব্যাশেও খেলছেন। অর্থ্যাৎ কাজ তিনি করতেছেন। সানরাইজ হায়দ্রাবাদের থেকে ১৫ কোটি চাওয়া একজন বোলার হিসাবে বেশি মনে হলেও তিনি ভুল কিছু চাননি।

রশিদ খানের রাইজিংটা দারুণ উপভোগ্য। আফগানিস্তানের মতো জায়গা থেকে উঠে এসে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের সবচেয়ে ভ্যালুয়েবল ক্রিকেটার হওয়টা মুখের কথা নয়।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...