‘কিংবদন্তি’র বিদায়

২০১৫ সালে লিভারপুলের জার্সির মায়া ত্যাগ করেন রাহিম স্টার্লিং। ম্যানচেস্টার সিটির আকাশী নীল জার্সিটা গায়ে জড়িয়ে নেন ইংল্যান্ডের এই তারকা ফুটবলার। এরপর কেটে যায় দীর্ঘ সাতটি মৌসুম। সময়ের পরিক্রমায় তিনি সিটিজেনদের আক্রমণের মধ্যমণি হয়ে ওঠেন। শিরোপা জয়ের কাণ্ডারি হয়ে ওঠেন।

দীর্ঘ এই সময়ে স্টার্লিং চারটা প্রিমিয়ার লিগ, পাঁচটা লিগ কাপ, একটা এফএ কাপ এবং চ্যাম্পিয়ন্স লিগের রানার্সআপ মেডেলও জিতেছেন। এক কথায় বলতে গেলে তিনি ছিলেন ক্লাবের কিংবদন্তি। প্রায় প্রতিটি শিরোপা জয়েই তিনি রেখেছেন অবদান। সিটির আক্রমণের নিজের একটা ছাপ সবসময়ই রেখে যাওয়ার চেষ্টা করে গেছেন স্টার্লিং।

এই সাত মৌসুমের যাত্রায় স্টার্লিংয়ের চাইতে বেশি মিনিট মাঠে নামেননি কোন খেলোয়াড়। কেবলমাত্র সার্জিও অ্যাগুয়েরো ক্লাবের হয়ে গোল করেছেন স্টার্লিংয়ের চাইতে বেশি। আর কেভিন ডি ব্রুইন অ্যাসিস্টের সংখ্যায় রয়েছেন স্টার্লিংয়ের উপরে। এমন একজন খেলোয়াড়কে হঠাৎ করেই ছেড়ে দেওয়ার কারণে খানিকটা জল ঘোলা হয়েছে ঠিক। প্রশ্নবাণ ছুটে যাচ্ছে এক দিক থেকে অন্যদিক।

কারণ তো বিশেষ রয়েছেই। প্রথমত অর্থের বিষয়টা মুখ্য। স্টার্লিংয়ের সাথে সিটির চুক্তির মেয়াদ আছে আর বড়জোর এক মৌসুমের। আগামী গ্রীষ্মকালীন দলবদলেই হয়ত দল ছাড়তে হত স্টার্লিংকে। সেক্ষেত্রে সিটি কোন প্রকার অর্থ উপার্জন করার সুযোগ থাকতো না। ব্যবসার দিক দিয়ে স্টার্লিংয়ের দল ছাড়াটা সিটির জন্যে একপ্রকার লাভজনক এক দলবদল।

তাছাড়া ম্যানচেস্টার সিটির কোচ পেপ গার্দিওলার সাথেও সম্পর্কের খানিকটা অবনতির আভাস পাওয়া যাচ্ছিল গেল মৌসুমে। মূলত খুব বেশি খেলার সুযোগ পাচ্ছিলেন না স্টার্লিং। আর তা নিয়ে মোটেও খুশি ছিলেন না ২৭ বছর বয়সি ইংল্যান্ডের এই তারকা ফুটবলার। আর তা নিয়েই কোচের সাথে কথার লড়াই হয়েছিল খানিকটা।

স্টার্লিং একদফা বলেছিলেন, ‘যদি অন্য কোথাও পর্যাপ্ত ম্যাচ টাইম পাওয়ার সুযোগ থাকে, আমি যেতে প্রস্তুত আছি।’ তিনি নিজেকে সিটির একাদশে থিতু এক অবস্থানে দেখতে চাইছিলেন। তবে কোচ পেপে নিজের দর্শনে অনড়। দলের প্রতিটা খেলোয়াড়দের নিজেদের প্রমাণ করেই একাদশের জায়গা দখল করতে হবে। তিনি বলেন, ‘যখনই তুমি সুযোগ পাও খেলার, আমাকে খেলে দেখাও।’

মূলত পেপ চান তাঁর একাদশে খেলা প্রতিটা খেলোয়াড়দের সামর্থ্যের সবটুকু উজাড় করে দিতে পারেন যেকোন সময়ে। তবে সে কাজটা স্টার্লিং খুব সম্ভবত করতে পারছিলেন না। তাই তিনি খুব বেশি খেলার সুযোগ পাচ্ছিলেন না। আর সে সুযোগটা আগামী মৌসুমে পাওয়ার সম্ভাবনাও ছিল অত্যন্ত ক্ষীণ। এবারের গ্রীষ্মকালীন দলবদলে আক্রমণের ভাগের বেশ কিছু তরুণ খেলোয়াড়দের অন্তর্ভুক্ত করেছে সিটি।

তাছাড়া দলের উইংয়ে রিয়াদ মাহারেজ পেপের আস্থাভাজনদের একজন। গেল মৌসুমে তিনি পারফরমও করেছেন, আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন। অন্যদিকে ১০০মিলিয়ন ডলার খরচ করা জ্যাক গ্রিলিশ এখনও অপেক্ষায় রয়েছেন নিজেকে সিটিজেনদের একজন হিসেবে প্রমাণ করবার। সেদিক বিবেচনায় এই দুইজনে প্লেয়িং টাইম পাওয়ার সুযোগ অনেকটাই বেশি।

এসব কারণেই স্টার্লিংকে ছাড়তে হয়েছে নিজের দীর্ঘদিনের ক্লাব। তবে শেষকালে যথাযথ সম্মান অন্তত পেতে পারতেন স্টার্লিং। এই দীর্ঘ সময়ের অনেক কিছুই তিনি করেছেন ক্লাবের জন্যে। তবে মূলত কোচের সাথে দ্বন্দেই স্টার্লিংকে চুক্তি শেষ হওয়ার আগেই ছাড়তে হচ্ছে ক্লাব। আর তাঁর জন্যে চেলসির থেকে ভাল স্থান দ্বিতীয়টি হতে পারত না।

অর্থের দিক বিবেচনায় এটা দুই পক্ষের জন্যেই একটা ভাল ফলাফল হিসেবেই বিবেচনা করা যেতে পারে। অন্যদিকে নতুন এক চ্যালেঞ্জে নিজেকে আবিষ্কার করতে নিশ্চয়ই মুখিয়ে থাকবেন রাহিম স্টার্লিং। যদিও তাঁর ইচ্ছে ছিল ভিনদেশের কোন লিগে খেলার। তবে সে ইচ্ছেটা আপাতত পাশে রেখেই স্টার্লিংকে নামতে হবে মাঠে। আর জয় করতে হবে চেলসির কোচ টমাস টুখেল মন। সেই সাথে হতে হবে চেলসি সমর্থকদের প্রিয় একজন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link