বিরাটে ‘বিরাট’ গণ্ডগোল

বিরাট মূলত ফেঁসে গিয়েছেন নিজের তৈরি করা স্ট্যান্ডার্ডের গ্যাঁড়াকলে। সমালোচনা ও নিন্দার যোগ্য জাবাব দিতে হলে শীগ্রই তাঁকে ফর্মে তো ফিরতে হবেই, সেই সাথে হয়ে উঠতে হবে পুরনো সেই 'বিরাট'।

সাম্প্রতিক সময়ে ভারতীয় দলের সবচেয়ে চর্চিত ক্রিকেটারের নাম হলো বিরাট কোহলি। সমালোচনার তীর সবদিক থেকে আসছে তাঁর দিকে। বিরাট তো ছিলেন এককালে দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ের বিরাট এক নাম। শচীন টেন্ডুলকারের পর ভারতীয় ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে সফল ব্যাটার হিসেবে তাঁকে বিবেচনা করা হলেও আজ সবই অতীত।

বিরাট মূলত ফেঁসে গিয়েছেন নিজের তৈরি করা স্ট্যান্ডার্ডের গ্যাঁড়াকলে। সমালোচনা ও নিন্দার যোগ্য জাবাব দিতে হলে শীগ্রই তাঁকে ফর্মে তো ফিরতে হবেই, সেই সাথে হয়ে উঠতে হবে পুরনো সেই ‘বিরাট’।

এই জাদুকরী ব্যাটার প্রায় তিন বছর ধরেই ফর্মে ফিরতে পারছেন না। বিরাটের বিধ্বংসী ব্যাটিং দেখার জন্য বিরাট ভক্তকুল উন্মুখ হয়ে আছে। বিরাট ক্যারিয়ারে শেষ সেঞ্চুরিটি পেয়েছিলেন ২০১৯-এর নভেম্বরে। এজবাস্টন টেস্টে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বিরাটের নিকট দারুণ কিছুর প্রত্যাশা ছিল বিরাট ভক্তদের।

কিন্তু, হতাশ করেছেন বিরাট। রানখরায় ভুগতে থাকা বিরাট প্রথম ইনিংসে মাত্র ১১ রান ও দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ২০ রান করতে সক্ষম হয়েছেন। এই শেষ টেস্টটি ভারত হেরে যাওয়ায় পাঁচ টেস্টের সিরিজটি ২-২ তে ড্র হলো। 

বিরাটের ক্যারিয়ার টেস্ট গড় হলো ৪৯.৫৩। যা আপাতদৃষ্টিতে যথেষ্ট মনে হলেও গত এক বছরে তাঁর ব্যাটিং গড় ত্রিশের নিচে নেমে গিয়েছে। যেখানে তিনি মোট ১০ টি টেস্টের ১৮ টি ইনিংসে ব্যাটিং এর সুযোগ পেয়েছিলেন।

এই দশ টেস্টের ৩ টি ঘরের মাঠে এবং বাদ বাকী সাতটি ভিনদেশের মাতিতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ১৮ ইনিংসে ব্যাট করে বিরাট ২৯.২৭ গড়ে কেবল ৫২৭ রান করেছেন, যার মধ্যে কেবল তিনটি অর্ধশতক রয়েছে । এই পরিসংখ্যানগুলো মোটেও বিরাট-সুলভ নয়।

বিরাট কোহলির অফ ফর্ম নিয়ে কপিল দেব বেশ সমালোচনামূলক বিবৃতি দিয়েছেন। যা নিয়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছে ভারতীয় ক্রিকেটে। তিনি প্রশ্ন তুলেন রবিচন্দ্রন অশ্বিনের মতো বিশ্বের দুই নম্বর টেস্ট বোলারকে যদি টেস্টে বাদ দেওয়া যায়, তাহলে এক নম্বর ব্যাটারকেও তো বাদ দেওয়া যায়। তা করা হচ্ছেনা কেন! কপিল দেব থেকে অজয় জাদেজার মতো প্রাক্তন ভারতীয়রা কোহলিকে দলে জায়গা দেওয়া নিয়েই সওয়াল করেছেন।

এবার ভারতের সাবেক ফাস্ট বোলার ভেঙ্কটেশ প্রসাদও বলেছেন যে, ‘ফর্মে না থাকলে, শুধু সুনামের ভিত্তিতেই দলে থাকা যায় না। অতীতে অফ ফর্মে থাকার জন্য সৌরভ গাঙ্গুলি, বীরেন্দ্র শেবাগ, যুবরাজ সিং, জহির খান, হরভজন সিং – সবাই বাদ পড়েছেন। তাহলে কোহলির ক্ষেত্রে কেন ব্যতিক্রম হবে।’

টাইমস অফ ইন্ডিয়াকে দেয়া সাক্ষাৎকারে সাবেক ব্রিটিশ ক্রিকেটার মন্টি পানেসার মত প্রকাশ করেছেন ভারতীয় বোর্ডের পক্ষে কেন কোহলিকে বাদ দেওয়া সম্ভব নয় সেই ব্যাপারটি নিয়ে।

তিনি বলেন, ‘কোহলির প্রসঙ্গটা ঠিক ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর মতো। যখনই রোনালদো ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে খেলতে মাঠে নামে, লোকে তখন ফুটবল দেখে। কোহলির ক্ষেত্রেও হয়েছে তাই। ওর বিপুল অনুরাগীর পাশাপাশি মাঠে তাঁর উপস্থিতির আলাদা আকর্ষণ রয়েছে।’

ম্যাচের ফলাফল যাই হোক না কেন, কোহলি রান পেলেন কি পেলেন না, তাতে বোর্ডের কিচ্ছু যায় আসে না। আসলে ভারতীয় ক্রিকেটর সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিসিসিআই স্পনসরদের খুশি করার জন্যই সম্ভবত কোহলিকে বাদ দেওয়ার সাহস দেখাচ্ছে না। কারণ, কোহলি না খেললে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডকে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। ফর্মে না থাকা সত্ত্বেও কোহলির ক্রমাগত ম্যাচ খেলে যাওয়া প্রসঙ্গে এমনটাই ধারণা পোষণ করছেন সাবেক ইংলিশ তারকা পানেসার।

তবে কারণ যাই হোক না কেন, কোহলি এককালে ভারতীয় দলকে অনেক দিয়েছেন। এখন ফর্মে না থাকা সত্ত্বেও তাই বোর্ড তাঁকে ছুড়ে ফেলে না দিয়ে বারবার সুযোগ দিয়ে যাচ্ছে। হাজার হাজার ক্রিকেট ভক্তও অপেক্ষায় আছেন কোহলির প্রত্যাবর্তনের। কোহলি নিজেও হয়তো চাইছেন নিজের সেরা ফর্ম ফিরে পেতে। সব সমালোচনা ছাপিয়ে যেয়ে বিরাট কোহলি দ্রুতই তাঁর চিরচেনা রূপে ফিরে আসুক, সেই প্রত্যাশা রইল।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...