রেকর্ড জয়ের উল্লাসধ্বনি বাংলাদেশের
তাতেই যেন ভয়ংকর হওয়ার সব রসদ। দিনের শুরুতেই এবাদতের আঘাত। প্যাভিলিয়নে আগের দিনের অপরাজিত থাকা নাসির জামাল। ক্যাচটা জমা পড়ে অধিনায়ক লিটনের হাতে। কি এক অদ্ভুত অনুভূতি! বনেদী ফরম্যাটের কাপ্তানির অভিষেকে রেকর্ড গড়া জয়ের হাতছানি।
আগের দিনের বৃষ্টি, এই উত্তপ্ত শহরে একরাশ স্বস্তি নিয়ে এসেছিল। তবে স্বস্তি থেকেও খানিকটা চিন্তার উদ্রেক হয়েছিল বাংলাদেশ শিবিরে। মঞ্চ তো তৈরি। বিশাল এক জয় কেবলই সময়ের অপেক্ষা। কেবলমাত্র বেরসিক বৃষ্টিই পারে বাংলাদেশকে হারাতে। যদিও তাতে ম্যাচ হারে না বাংলাদেশ। তবে এবারে ড্র হলে তো তা হতো হারের থেকেও বড় কিছু।
চতুর্থ দিন সকাল বেলা আকাশে ছিল মেঘের আনাগোনা। মেঘকে ফাঁকি দিয়ে, সূর্য তার তাপ বিকিয়েছে। মেঘ আর রোদের খেলায় তাপের তারতম্য আর ঘটেনি। প্রচণ্ড গরমের অনুভূতি হোম অব ক্রিকেটে সকাল থেকে। তবে সেই অনুভূতিতে খানিকটা বহমান বাতাসের স্নেহের পরশ। পেসারদের খানিকটা আরাম।
তাতেই যেন ভয়ংকর হওয়ার সব রসদ। দিনের শুরুতেই এবাদতের আঘাত। প্যাভিলিয়নে আগের দিনের অপরাজিত থাকা নাসির জামাল। ক্যাচটা জমা পড়ে অধিনায়ক লিটনের হাতে। কি এক অদ্ভুত অনুভূতি! বনেদী ফরম্যাটের কাপ্তানির অভিষেকে রেকর্ড গড়া জয়ের হাতছানি।
ক্রমশ সেই জয়ের দিকে নিয়ে গেছেন বাংলাদেশের পেস ব্যাটারি। শরিফুলের যেন বড্ড তাড়া। গরমটা তার ঠিক অসহ্য ঠেকছিল। তাইতো বিরতি দিয়ে নিয়ে নেন দুই উইকেট। আফসার জাজাইয়ের সাথে কনকাশন সাব হিসেবে নামা বাহির শাহের উইকেট শরিফুলের পকেটে। ঘন্টার কাটা সরে যাওয়ার আগেই পাঁচ উইকেট নেই আফগানদের।
টেস্ট ক্রিকেটে সবচেয়ে বড় জয় প্রাচীন যুগের ইংল্যান্ডের। প্রায় একশত বছর আগে সেবার ৬৭৫ রান ব্যবধানে জিতেছিল ইংল্যান্ড। এরপর বড় জয় হয়েছে আরও। বাংলাদেশও পেয়েছে নিজেদের ইতিহাসের বড় জয়। ২০০৫ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সেবার ২২৬ রান ব্যবধানে জিতেছিল হাবিবুল বাশারের দল। সে রেকর্ড যেন নস্যি। লিটনের দল তেমনটাই অনুভব করতে করেছে বাধ্য।
সব পেসাররাই যখন উইকেট নেওয়ার উৎসবে মাতোয়ারা, সেখানে তাসকিন আহমেদ পিছিয়ে থাকবেন ভাবাটাই তো বোকামি। তিনিও এগিয়ে এলেন। তিনিও দলের জয় তরান্বিত করলেন। করিম জানাতের উইকেট উপড়ে ফেলার আগে রহমত শাহের উইকেট জমা করেছেন লিটনের দস্তানায়।
প্রথম ইনিংসে উইকেট শূন্য থাকা তাসকিন দ্বিতীয় ইনিংসে তুলে নেন চার খানা উইকেট। ইনজুরি যত বাঁধাই হোক, তাসকিন যেন দমে যাওয়ার নয়। তিনি সে প্রমাণটাই আরও একবার রাখলেন। আগের দিনের এক উইকেটের সাথে এদিন প্রথম সেশনেই বাগিয়েছেন আরও তিনটি উইকেট। মধাহ্ন বিরতির আগেই এসে যায় সেই কাঙ্ক্ষিত জয়। জহির খান ইনজুরি আক্রান্ত হয়ে মাঠ ছাড়লে বাংলাদেশ জয়লাভ করে ৫৪৭ রানে।
আকাশ ছোঁয়া ব্যবধানে জয় বাংলাদেশের। বিশ্ব টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসের, তৃতীয় সর্বোচ্চ ব্যবধানের জয় এটি। কি এক দাপুটে জয়! এত বড় জয় তো নতুন দিনের বার্তাই দেয়। লজ্জার অনেক স্মৃতি ছাপিয়ে এই জয়টা যেন মরুর বুকে স্বস্তির বারিধারা।
ভাবা যায় চারদিনেই শেষ টেস্ট ম্যাচ! এবার পরাজিত সৈনিক হয়ে আর মাঠ ছাড়েনি বাংলাদেশ। বরং বীরদর্পে ছেড়েছে মাঠ। দাপটের চূড়ান্ত উদাহরণের ছাপ। ঠিক এমনটাই তো হবার কথা। অপেক্ষাকৃত দূর্বল দলকে তো এভাবেই তুলোধুনো করতে হয়। এভাবেই তো পার্থক্যটা বুঝিয়ে দিতে হয়। এতদিন যার শিকার বাংলাদেশ।