ফিফা বিশ্বকাপ শেষ হয়েছে আরও এক সপ্তাহ আগে, তবে সেটির রেশ রয়ে গিয়েছে এখনও। বিশ্বকাপ ফাইনালের ছয় গোলের ধ্রুপদী লড়াই আর টাইব্রেকারের স্নায়ুযুদ্ধ এখনও বিশ্ব জুড়ে আলোচনার শীর্ষে। এবার নতুন এক বিতর্ক শুরু হয়েছে ফাইনালের সেই রোমাঞ্চকর ম্যাচকে ঘিরে; লিওনেল মেসির করা দ্বিতীয় গোলটি নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে ফুটবলপ্রেমীদের মাঝে।
নতুন এই বিতর্কের শুরুটা হয়েছে একটি ছবির মাধ্যমে; যেখানে দেখা যায় লিওনেল মেসির গোল করার সময় মাঠের ভিতরে ছিল আর্জেন্টিনার ডাগ আউটে থাকা দুই ফুটবলার। ইন্টারন্যাশনাল ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন বোর্ডের আইনে লিখা আছে যে, কোন দল গোল করার সময় যদি তাদের বদলি খেলোয়াড়রা মাঠের ভিতর অবস্থান করে তবে রেফারিকে অবশ্যই সেই গোল বাতিল করতে হবে। আর এই নিয়মটি উল্লেখ করেই মেসির গোল বাতিলের দাবি জানায় ফরাসি গণ মাধ্যম এল’ইকুয়েপ।
এই অদ্ভুতুড়ে ব্যাপারটি নিয়ে ফাইনালের রেফারি সাইমন মারসিনিয়াককেও পড়তে হয়েছে বিব্রতকর অবস্থায়। সামাজিক মাধ্যম সহ নানাভাবে এই অভিজ্ঞ রেফারিকে হেনস্তা করা হচ্ছে বলেও জানা গিয়েছে। আর্জেন্টাইন অধিনায়কের শট জালে জড়ানোর আগেই আলবিসেলেস্তাদের দুইজন বদলি খেলোয়াড় মাঠে প্রবেশ করার পরেও গোল বাতিল না করায় কড়া সমালোচনা সহ্য করতে হচ্ছে তাঁকে।
অবশ্য বেশি সময় চুপ করে থাকেননি পোলিশ রেফারি সাইমন মারসিনিয়াক। সংবাদ সম্মেলনে তিনি হাজির হয়েছেন নতুন এক ছবি নিয়ে। নিজের ফোনে থাকা এই ছবিটি পরবর্তীতে উপস্থাপন করেন তিনি যেখানে দেখা যায় ঠিক উল্টো চিত্র। অর্থাৎ কিলিয়ান এমবাপ্পে গোল করার আগ মুহূর্তে মাঠের ভিতর ঢুকে দাঁড়িয়েছেন সাতজন ফরাসি ফুটবলার যারা কিনা একাদশের অংশ ছিলেন না সে সময়।
সাইমন মারসিনিয়াক বলেন, ‘ফরাসিরা এই ছবিটি উল্লেখ করেনি। যেখানে আপনারা দেখতে পারছেন যে ফ্রান্সের সাতজন বদলি খেলোয়াড় মাঠেই ছিলেন যখন কিলিয়ান এমবাপ্পে গোল করেছিলেন।’
৪১ বছর বয়সী সাইমন মারসিনিয়াক অবশ্য দুর্দান্ত ছিলেন ফাইনালের সেই স্মরণীয় লড়াইয়ে। ম্যাশের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বলের কাছাকাছি ছিলেন তিনি। তাঁর সিদ্ধান্তেগুলোতেও ছিল না বিতর্কের কোন সুযোগ। পেনাল্টি বক্সে ডাইভ দেয়ার জন্য ফ্রান্সের ফরোয়ার্ড মার্কাস থুরামকে হলুদ কার্ড দেখিয়ে নিজের সতর্ক চোখজোড়ার কথাই জানান দিয়েছিলেন এই পোলিশ রেফারি।
পাল্টাপাল্টি এসব অভিযোগের মত শ্বাসরুদ্ধকর ফাইনাল ম্যাচটিতেও উত্তেজনা ছড়িয়েছিল কিলিয়ান এমবাপ্পে এবং লিওনেল মেসিকে ঘিরে। দুই দেশের দুই সুপারস্টার সামনে থেকে এগিয়ে নিয়েছিলেন দলকে। আর্জেন্টিনার হয়ে মেসি করেছিলেন জোড়া গোল আর ফ্রান্সের জার্সিতে সেদিন হ্যাটট্রিক করেছিলেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। তবে সতীর্থদের ভুলে শেষ হাসি হাসতে পারেননি এই তরুণ।
শুধু ফাইনালে নয়, পুরো টুর্নামেন্ট জুড়েই নিজের দেশের সেরা পারফর্মার ছিলেন কিলিয়ান এমবাপ্পে এবং লিওনেল মেসি। একদিকে ২৪ বছর বয়সী এমবাপ্পে করেছিলেন আট গোল এবং দুই অ্যাসিস্ট, অন্যদিকে লিওনেল মেসি করেছেন সাত গোল এবং তিন অ্যাসিস্ট। ফরাসি তারকার হাতে উঠেছিল টুর্নামেন্টের গোল্ডেন বুট আর আর্জেন্টাইন অধিনায়ক জিতেছিলেন টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার গোল্ডেন বল।
গোল বাতিলের অভিযোগের মাঝেই এক উদ্ভট কাজ করে বসেছে ফ্রান্সের ভক্ত-সমর্থকরা। কাতার বিশ্বকাপের ফাইনাল পুনরায় আয়োজন করার দাবি জানিয়ে তাঁরা একটি পিটিশন দায়ের করেছে যেখানে ইতোমধ্যে প্রায় ২৫০০০০ মানুষ স্বাক্ষর করেছে।