কাণ্ডজ্ঞান-দায়িত্বজ্ঞান ও রোহিত শর্মা

ভারতীয় ক্রিকেট দলের বর্তমান হেড কোচ রবি শাস্ত্রীর নিশ্চয়ই মনে আছে, যেহেতু তিনি ওই দলের নিয়মিত খেলোয়াড় ছিলেন। ১৯৮৪ সালে ফিরোজ শাহ কোটলাতে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে এক ভারতীয় ৬০ রান করার পরেও দলের দ্বিতীয় ইনিংসে পঞ্চম দিন যখন ভারত ম্যাচ বাঁচানোর জন্য লড়ছিলো তখন দায়িত্বজ্ঞানহীন ভাবে ছয় মারতে গিয়ে আউট হওয়ার পর হনুমন্ত সিং পরিচালিত নির্বাচক কমিটি পরের কলকাতা টেস্টের জন্য সংশ্লিষ্ট খেলোয়াড়টিকে শাস্তি স্বরূপ বাদ দেন।

আর এই সংশ্লিষ্ট খেলোয়াড়টি হলেন ঠিক তার এক বছর আগে ভারতকে বিশ্বকাপ জেতানো অধিনায়ক কপিল দেব নিখঞ্জ। সেই সিদ্ধান্ত কতটা ঠিক বা ভুল ছিল সেই বিতর্কে না ঢুকে এটুকু বলতে চাইছি যে তৎকালীন ক্রিকেট পরিচালক এবং দল পরিচালনা কমিটির এই মেরুদণ্ডটুকু ছিল যে তারা সঠিক পদক্ষেপ তা নিতে পারতো।

আর আজ এই রোহিত শর্মা-ঋষভ পান্তদের ডেকে অবিবেচকের মতো শট খেলার কারণ জিজ্ঞাসা করার লোক নেই বলেই হয়তো তারা দিনের পর দিন এই ভঙ্গিমায় আউট হয়ে ফিরে আসতে পারেন। প্রতিটা ইনিংসে খুব ভাল শুরু করেও রোহিত শর্মা বাজে শট খেলে আউট হয়ে ফিরে আসছেন। আর কবে তিনি দায়িত্ব নিয়ে বিদেশের মাঠে টেস্টে ভাল খেলবেন?

আর ঋষভকে দেখলে তো মনে হয় যে ড্রেসিংরুমে চা ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে। গত ম্যাচেও একটা অসম্ভব ম্যাচকে নিজের ক্যারিশমাতে টেনে এনে যখন নিশ্চিত জয় দেখা যাচ্ছে তখন অবিবেচকের মত আউট হয়ে চলে এলেন। আর ব্রিসবেনের কথাতো কহতব্য নয়। অনায়াসে বলটা ছেড়ে দিতে পারতেন। সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয় শট। মেলবোর্নেও তাই করেছেন ইনি, জাদেজা এসে বাঁচিয়ে দিয়েছিলেন। তৃতীয় দিন সুন্দর-ঠাকুর দাঁড়িয়ে না গেলে দিনের শেষে অস্ট্রেলিয়া ২০০ রানের লিড নিয়ে বসে থাকতো।

যদিও শর্মাজি জানিয়ে দিয়েছেন যে ভবিষ্যতেও তিনি এই ধরনের শট খেলবেন কারন এটাই তাঁর ন্যাচারাল গেম। শুনে খুব ভাল লাগলো। অতীতে বীরেন্দ্র শেবাগও এরকম শট খেলে কখনো কখনো আউট হয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি বিদেশের মাঠে বহু স্মরণীয় টেস্ট ইনিংসও খেলেছেন। সবসময় রোহিতের মতো ব্যর্থ হননি (বিদেশে)।

খেরোর খাতা এটাই বলছে যে বর্তমান টিম ম্যানেজমেন্ট ব্যাট ধরতে না পারার জন্য যে ঋদ্ধিমান সাহাকে দলে সুযোগ দেয় না, বিদেশের মাঠে টেস্টে সেই ঋদ্ধিমান সাহা আর রোহিতের ব্যাটিং গড় সমান। শুধু পার্থক্য এটাই যে ঋদ্ধির তাও একটা শতরান আছে, রোহিতের সেটাও নেই। না, আমি একবারও ঋদ্ধি কে রোহিতের থেকে বড় ব্যাটসম্যান বলছি না, যেটা বলছি সেটা হলো বড় বড় কমেন্ট করার আগে বড় পারফরমেন্স না থাকলে ওই কমেন্টটা একদিন বুমেরাং হয়ে ফিরে আসবে।

উল্টো দিকে দেখুন হনুমা-অশ্বিন বা আজকের ওয়াশিংটন সুন্দর-শার্দুল ঠাকুররা জীবন বাজি রেখে বারবার অসম লড়াই জিতছে। কোনো ধরনের প্রশংসাই বোধহয় এদের জন্য যথাযথ নয়। তাঁরা প্রতিটা বল খেলছেন আর যেন মনে হচ্ছে এটাই তো টেস্ট ক্রিকেট, যেন মনে হচ্ছে বলছেন আমি এই টেস্টে অভিষেক করলে কি হবে, ৩৫ টেস্ট খেলা রোহিত শর্মা এসে দেখে যাও দায়িত্ব নেওয়া কাকে বলে!

টপ অর্ডারের একটু দায়িত্বশীল ব্যাটিং এর সঙ্গে সুন্দর-শার্দূল এর এই বিনা যুদ্ধে নাহি দিব সূচাগ্ৰ মেদিনী সম লড়াই যুক্ত হলে অস্ট্রেলিয়াকে আজ সিরিজ বাঁচানোর কথা ভাবতে হতো।

যদিও চিন্তার কিছু নেই। কয়েকদিন পরেই ইংল্যান্ড আসছে ভারতে। তখন আর এই ‘ঠাকুর’ দের দরকার নেই, ওই রোহিতরাই ‘শার্দুল’ রূপে ইংল্যান্ড শিকারে বেরিয়ে পড়বেন আর ইংলিশ বোলারদের ছিঁড়ে খাবেন। পরিসংখ্যানবিদরা অনুগ্রহ করে খাতা পেন নিয়ে প্রস্তুত হয়ে যান। থার্ড বেল পড়লো বলে!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link