ক্রিকেট ভদ্রলোকের খেলা হিসেবে যেমন স্বীকৃত তেমনি মজার খেলা হিসেবেও সমাদৃত। এটি দর্শকদের পাশাপাশি খেলোয়াড়দেরও বিনোদনের খোরাক জুগিয়ে থাকে। যদিও এমন কয়েকজন ক্রিকেটার রয়েছেন যারা খেলাটিতে জড়িয়ে বেশ বিচিত্র সব কারণে বিপাকে পড়েন এবং একসময় ক্রিকেট থেকে নিজেদের গুটিয়ে আনেন।
এবার সেরকম কয়েকজন ক্রিকেটারের দিকে নজর রাখতে যাচ্ছি যারা ক্যারিয়ারের শুরুর দিকেই নিজেদের ব্যাট-প্যাড তুলে রেখেছেন। পেশাদার ক্রিকেট ক্যারিয়ার তাঁদের জন্য বিরাট এক আক্ষেপের নাম।
- ক্রেইগ কিসওয়েটার
২০১৪ সালের কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপে নর্দাম্পটনশায়ারের বিপক্ষে খেলতে নেমে মুখে প্রবলভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হন সামারসেট ও ইংল্যান্ড জাতীয় দলের এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান। ম্যাচে পেসার ডেভিড উইলির একটি শর্ট বল হেলমেটের গ্রিলের ফাঁক দিয়ে ঢুকে সরাসরি তাঁর নাক ও চোখে আঘাত হানে। প্রথমদিকে কিসওয়েটারের এই চোটটাকে খানিকটা হালকা করে দেখা হয়েছিল। কিন্তু এতে তাঁর অক্ষিকোটর ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে পরবর্তীতে জানা যায়।
এ ইনজুরির পর ইংল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকার ঘরোয়া ক্রিকেটে কিছু সময়ের জন্য খেলেছিলেন কিসওয়েটার। তবে পুরনো ছন্দটা ঠিক খুঁজে পাননি। চোখে বল অস্পষ্ট দেখায় খেলা চালিয়ে যেতে বেশ অসুবিধায় পড়তে হয় তাকে। তাই ২০১৫ সালে মাত্র ২৮ বছর বয়সে ক্রিকেটীয় জীবনের যবনিকাপাত টানতে বাধ্য হন তিনি।
- বিজয় ভরদ্বাজ
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ারটা স্বপ্নের মতো শুরু হয়েছিল বিজয় ভরদ্বাজের। ১৯৯৯ সালে কেনিয়ায় অনুষ্ঠিত চার জাতি ক্রিকেট টুর্নামেন্টে অভিষেক হয় তাঁর। আর অভিষেক সিরিজেই ব্যাটে-বলে পারফর্ম করে সিরিজসেরা নির্বাচিত হন এই ভারতীয় অলরাউন্ডার। স্বাগতিক কেনিয়া, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা ও জিম্বাবুয়েকে নিয়ে আয়োজিত ওই টুর্নামেন্টে ৪ ম্যাচে ১০ উইকেট ও ৮৯ রান সংগ্রহ করেন তিনি।
বিজয় ভরদ্বাজ মূলত একজন ব্যাটিং অলরাউন্ডার। ব্যাটিং দক্ষতার পাশাপাশি কার্যকরী অফস্পিনে দ্রুত উইকেট তুলে নেওয়ায় ছিল তাঁর পারদর্শিতা। তবে দুর্ভাগ্যবশত একটি অপরেশনের কারণে প্রতিশ্রুতিশীল ক্রিকেট ক্যারিয়ারটা তিনি দীর্ঘ করতে পারেননি। চোখের সমস্যায় তাকে একসময় অস্ত্রোপচারের টেবিলে যেতে হয়। অপারেশনের পর থেকে বেশিক্ষণ চোখ খোলা রাখতে পারতেন না বিজয় যা তাঁর খেলায় বিরূপ প্রভাব ফেলে। তারপর ২০০৬ সালে সব ধরনের ক্রিকেটকে বিদায় জানান তিনি।
- সৈয়দ সাবা করিম
বর্তমানে ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গলের (সিএবি) এই পরিচালক খেলোয়াড়ি জীবনে একজন উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান ছিলেন। উইকেটের পেছনে দুর্দান্ত গ্লাভওয়ার্কের জন্য পরিচিত ছিলেন তিনি। বাংলাদেশের অভিষেক টেস্টে ভারতের উইকেট রক্ষক ছিলেন তিনি।
১৯৮৯ সালে উইন্ডিজ সফরে প্রথমবারের মতো ভারত দলে ডাক পেলেও সাবা করিমের অভিষেক ঘটে ১৯৯৭ সালে। তবে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনায় অভিষেকের মাত্র চার বছরের মাথায় থেমে যায় তাঁর ক্যারিয়ারের চাকা। ২০০০ সালের এশিয়া কাপে ঘটে সে দুর্ঘটনা।
ওই টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের বিপক্ষে উইকেটরক্ষণের সময় স্পিনার অনিল কুম্বলের হঠাৎ লাফিয়ে ওঠা একটি বল সাবা করিমের চোখে আঘাত হানে। চোট গুরুতর হওয়ায় চোখে অস্ত্রোপচারও করাতে হয় তাকে। মূলত এ ইনজুরিটিই তাঁর ক্যারিয়ারের সমাপ্তিরেখা টেনে দেয়।
- জোনাথন ট্রট
২০০৯ সালের অ্যাশেজের পঞ্চম টেস্টে প্রথমবারের মতো খেলতে নেমে শতক হাঁকিয়ে নিজের সামর্থ্যের জানান দেন জোনাথন ট্রট। তিন নাম্বারে ব্যাটিংয়ের জন্য তিনি ছিলেন ইংল্যান্ডের পরম নির্ভরযোগ্য একজন ব্যাটসম্যান।
যদিও ২০১৩ সালের অ্যাশেজে মিশেল জনসনের ক্রমাগত বাউন্সারের সামনে সতীর্থদের মত তিনিও মুখ থুবড়ে পড়েন। বাউন্সারে বিপর্যস্ত ট্রট চাপজনিত অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে সিরিজের মাঝখানেই দেশে ফিরে আসেন। তখন দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ-সংক্রান্ত অসুস্থতায় ভোগায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে নির্বাসনে যান তিনি। তারপর দীর্ঘ বিরতি কাটিয়ে ২০১৫ সালে উইন্ডিজ সফরের দলে পুনরায় ফিরলেও বাজে পারফরম্যান্স করায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর সিদ্ধান্ত নেন ট্রট।
- জেমস টেলর
২০১১ সালে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম আত্মপ্রকাশ করেন জেমস টেলর। তাঁর ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের ওপর ভর করেই ২০১৬ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ঐতিহাসিক সিরিজ জয় লাভ করে ইংল্যান্ড।
দুর্ভাগ্যক্রমে একই বছর দুরারোধ্য হৃদরোগে আক্রান্ত হন তিনি। রোগটির নাম অ্যারিথমোগেনিক রাইট ভেন্ট্রিকুলার কার্ডিওমায়োপ্যাথি (এআরভিসি)। তখন চিকিৎসকের পরামর্শে খেলা থেকে চিরতরে সরে দাঁড়ান এই ডান-হাতি ব্যাটসম্যান। বর্তমানে তিনি ইংল্যান্ডের নির্বাচন কমিটিতে দায়িত্বরত আছেন।