You either die as a hero or you live long to see yourself become villain – ইংরেজি এই লাইনটির বাংলা করলে ভাবার্থ দাঁড়ায় যে, সঠিক সময়ে থামতে পারলে কিংবদন্তির মর্যাদা মিলে আর তা নাহলে নিন্দুকের নিন্দার চাপ কেবলই বাড়ে। তাই তো বিদায় নেয়ার জন্য বেছে নিতে হয় সেরা মুহূর্ত।
ঠিক সময়ে বিদায় নেয়ার যে আর্ট, সে আর্ট অন্তত বাংলাদেশ ক্রিকেটের কেউ ভাল জানেন বলে মনে হয় না। অন্তত দেশের সেরা ক্রিকেটারদের সরে দাঁড়ানোর মুহুর্ত কল্পনা করলে বিতর্ক ছাড়া চোখে পড়ে না কিছুই। মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ কিংবা মাশরাফি কারোই শেষটা হয়নি মন মতো। সেই তালিকায় এবার যোগ হয়েছে তামিম ইকবালের নামও।
প্রথম ওয়ানডের আগে সংবাদ সম্মেলনে ফিটনেস নিয়ে কথা বলেছিলেন তামিম ইকবাল, তাতে অবশ্য আলোচনা সমালোচনা শুরু হয়েছিল ক্রিকেট পাড়ায়। আমি শতভাগ ফিট নই, কিন্তু আগামীকালের ম্যাচ খেলবো। এমনটাই বলেছিলেন সাবেক এই ওপেনার। এছাড়া ম্যাচ খেলার পর নিজের ফিটনেস সম্পর্কে জানতে পারবেন বলে মন্তব্য করেছেন এই বামহাতি৷
আর তাতেই ক্ষেপেছেন কোচ চান্দিকা হাতুরুসিংহে। বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনকে ফোনকলে নিজের অসন্তুষ্টিও জানিয়েছেন তিনি। এরপরই আগুনের উত্তাপ আরো বাড়িয়ে সাংবাদিকদের ডাকেন তামিম, আর সেখানে বলেন বাংলাদেশের জার্সি তুলে রাখার কথা।
এর আগে মুশফিকুর রহিমও হুট করে টি-টোয়েন্টি থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন। জিম্বাবুয়েতে টেস্ট খেলতে নেমে ম্যাচের মাঝপথে রিয়াদ জানিয়েছিলেন অবসরের ঘোষণা। আবার সফলতম ক্যাপ্টেন মাশরাফি মর্তুজা তো এখনো অবসরই নেননি ওয়ানডে আর টেস্ট ফরম্যাট থেকে; আর টি-টোয়েন্টি থেকে এই পেসারের অবসরের কথা জানা গিয়েছিল টসের সময়।
মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ কিংবা মাশরাফি, তামিম – বাংলাদেশ ক্রিকেট এদের শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে সন্দেহ নেই কারো। অথচ বঙ্গ ক্রিকেট মাতার শ্রেষ্ঠ সন্তানেরাই জানেন না কখন, কিভাবে বিদায় বলতে হয়। অযাচিত বিতর্ক, অপেশাদারি আচরণের দেখা মিলেছে প্রতিবারই।
ক্যারিয়ারের শেষদিকে প্রায় সবারই ফিটনেস নিয়ে সমস্যা হয়; সেই সাথে ভাটা পড়ে ফর্মেও। ফলে সমালোচনাও চেপে বসে তখন। তাই নিজের সেরা ছন্দে থাকা অবস্থাতেই ব্যাট বল তুলে রাখাটাও সেরা খেলোয়াড়ের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য।
অতীতে কি করেছেন, সেটা বর্তমান ভুলিয়ে দিতে পারে। তাই দলের সেরা খেলোয়াড়ও যদি ব্যাড প্যাচে পড়ে তখন তাঁর আগের সব রেকর্ড তখন নিতান্ত সংখ্যাই পরিণত হয়। নিজের লিগ্যাসি আর ভক্তদের ভালবাসা ধরে রাখতে ঠিক সময়ে ছাড়তে হয় ক্রিকেটের বাইশ গজ, যা করে দেখিয়েছেন কুমার সাঙ্গাকারা, রিকি পন্টিংরা।
অথচ উল্টো চিত্র দেখা যায় বাংলাদেশে; অফ ফর্ম লুকিয়ে খেলে যেতে চান কেউ কেউ। স্বাভাবিকভাবেই ট্রল আর সমালোচনার শিকার হতে হয় তাঁকে, ফলে হুট করেই অবসর নিতে হয় এক পর্যায়ে।
এজন্য ফেয়ারওয়েল ম্যাচ কিংবা গ্যালারি ভর্তি দর্শকদের হাত নেড়ে বিদায় বলার মত দৃশ্য দেখা যায় না লাল-সবুজ ক্রিকেট পাড়ায়। বদ্ধ রুম, কয়েকজন সাংবাদিক আর আবেগতাড়িত কণ্ঠস্বর – ঘুরেফিরে এসবই দেখতে হয় ক্রিকেট সমর্থকদের।
পরবর্তী প্রজন্মের ক্রিকেটারদের পথ দেখান তামিম, সাকিবরা। তবে এই যদি হয় পেশাদার ক্রিকেটারদের আচরণ তবে তরুণরা কিভাবে পাবেন বিদায়ী পথের দিশা?