পেইনকিলার নয়, কৌশলে খেলুন

আপনি যদি একটা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট দলের অধিনায়ক হন, তাহলে দল ও দলের সমর্থকেরা আপনার কাছে সেন্সিবল কিছু সিদ্ধান্ত চাইবে। খুব সম্ভবত সেটাই স্বাভাবিক। সেইসাথে যদি আপনি দলের সবচেয়ে সিনিয়র ক্রিকেটার হন তাহলে দল ও দলের সমর্থকেরা আপনার কাছে চাইবে আরো বেশি দায়িত্ববোধ। আপনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট দলের অধিনায়ক হলে অবশ্য এই সেন্সিবিলিটি আর দায়িত্ববোধের কিছুটা আপনার মধ্যে দেখা যেতে পারে, তবে আপনি হন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ তাহলে- লবডঙ্কা!

প্রেস কনফারেন্সে এসে পেইন কিলারের দোহাই বাদ দিলাম। মাঠের বাইরে দেশের প্লেয়াররা অনেক বছর ধরেই অপেশাদার। রিয়াদকে সেই কাতারেই ফেলে দিলে অন্তত মাঠের মধ্যে আমরা রিয়াদের কাছ থেকে কিছু দায়িত্ববোধ আশা করতেই পারি, নয় কি?

মুস্তাফিজুর রহমানের মত একজন বোলার, যার বোলিং এর মূল অস্ত্র কাটার, সেই বোলার বোলিংয়ে আসলে আমি যদি স্লিপে একটা ফিল্ডার আশা করি তাহলে সেই আশাটা কি খুব বাড়াবাড়ি হবে? খুব সম্ভবত না। অথচ রিয়াদকে স্লিপে ফিল্ডার দিতে খুব একটা আগ্রহী মনে হয়নি। মুস্তাফিজের প্রথম ওভারেই স্লিপে ক্যাচ উঠেছে, বাউন্ডারি হয়েছে। স্লিপে ক্যাচ উঠেছে ম্যাচের আশা শেষ হওয়ার পরও, নাসুমের বলের সেই ক্যাচ কেউ ধরতে পারেনি। রিয়াদ যে ক্যাচ ধরার জন্যে কাউকে সেখানে রাখেইনি।

পাওয়ারপ্লে শেষ হওয়ার পর দেখা গেল আশালঙ্কা জেঁকে বসেছেন, নিয়মিত বোলাররা কেউই সুবিধা করতে পারছেন না। ক্রিকেটের স্বাভাবিক নিয়মে এই সময় আনঅর্থোডক্স কিছুই চেষ্টা করবে যেকোন অধিনায়ক। সেই আনঅর্থোডক্স কিছু হতে পারে রিয়াদের নিজের বোলিংয়ে আসা, কিংবা আফিফকে বোলিংয়ে পাঠানো। কিন্তু তিনি সেটা করলেন না। তিনি নিয়মিত বোলার দিয়েই বল চালিয়ে গেলেন।

নিয়মিত বোলাররা অবশ্য রিয়াদকে আশাহত করলেন না। সপ্তম ওভারে মেহেদী ভাল বল করলেন, অষ্টম ওভারে সাকিব ম্যাজিক দেখালেন, নবম ওভারে সাইফউদ্দিন ব্রেক থ্রু এনে দিলেন, দশম ওভারে মেহেদী আবারও ভাল বল করলেন। বাংলাদেশের দিকে যখন ম্যাচ একটু ঝুঁকে এসেছে, নিয়মিত বোলাররাই ভাল বল করছেন, সেই সময় রিয়াদ পার্ট টাইমার নিয়ে এলেন। একাদশ ওভারে তিনি নিজে আর দ্বাদশ ওভারে আফিফকে বলে নিয়ে আসার পেছনে রিয়াদের কাছে কি যুক্তি থাকতে পারে?

ক্রিকেটের ঠিক কোন যুক্তিতে, কোন নিয়মে, কোন ধারা অনুসারে, কোন স্ট্রাটেজিতে স্ট্রাইক বোলারদের ভাল স্পেলের মাঝে টানা দুই ওভার দুজন পার্ট টাইমার বল করতে পারেন? অথচ ষষ্ঠ ওভারে পাওয়ারপ্লের পর, মুস্তাফিজের বেমক্কা মার খাওয়ার পর যখন একজন পার্ট টাইমারকে দিয়ে চারিথ আসালাঙ্কার উইকেট নেওয়ার একটা চেষ্টা করার দরকার ছিল- রিয়াদ তখনই সেই কাজটা করলেন না। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের এই অদ্ভুতুড়ে অধিনায়কত্বের একটাই ব্যাখ্যা থাকতে পারে সেটা হল তিনি একটা আন্তর্জাতিক দলের অধিনায়ক হওয়ার মত যথেষ্ট যোগ্যই নন।

আজকের ম্যাচে আমাদের ম্যাচ থেকে ছিটকে দিয়েছেন লিটন দাস। প্রথম ক্যাচটা মিসের পর আসালাঙ্কার ক্যাচ মিসের পরই নিশ্চিত হয়ে যায়- এই ম্যাচ অন্তত আমরা হারতে চলেছি। অথচ প্রথম দিকে একটা দুর্দান্ত ডাইভ বাদ দিলে পুরো ম্যাচেই লিটনের অবস্থা ছিল ম্যাড়মেড়ে। লিটন এমনিতেই রান পাচ্ছেন না, মানসিকভাবেই তো তিনি মাঠে সাবলীল নন, শক্ত নন। এর ওপর প্রথম ক্যাচ মিসের পরই যেকোন অধিনায়ক লিটনকে উঠিয়ে নিয়ে ডাগআউটে থাকা যেকোন ফিল্ডার নামাবে। রিয়াদ তা করলেন না! মাঠের অধিনায়কত্ব মানেই যে শুধু বোলিং চেঞ্জ করা নয় এই ব্যাপারটা তিনি আর কবে শিখবেন!

রিয়াদ খুব সম্ভবত যখন মাঠে নামেন, খুব জোরে মুখস্থ করে নামেন- বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যানের বলে বাঁহাতি বোলার আনা যাবেনা, ডানহাতির বিপক্ষে আনা যাবেনা ডানহাতি। অথচ রাজাপাকশের উইকেটটা শেষ অব্দি নিয়েছেন ঐ বাঁহাতি নাসুমই।

ক্রিকেটের এই মুখস্থ ধারা এখনকার ক্রিকেটে রিয়াদ ছাড়া কি আর কেউ আউড়ে চলে? দলের সেরা বোলারের ম্যাজিক্যাল স্পেলের মাঝে তিনি দুটো ওভার করিয়ে নিলেন পার্ট টাইমারদের দিয়ে, স্রেফ বাঁহাতি বলে তিনি সাকিব আর নাসুমের ওভারগুলো জমতে দিলেন। কাজের কাজ কি কিছু হল? এই ডানহাতিদের জায়গায় নাসুম-সাকিব-মুস্তাফিজের কেউ হলে তাঁরা কি রান এদের চাইতে বেশি দিত?

রিয়াদ পেইন কিলার নিয়ে খেলতে পারেন বটে, তবে ন্যূনতম বুদ্ধি নিয়ে যে খেলেন না এটা কি প্লিজ কেউ তাকে বলে দেবে?

লেখক পরিচিতি

আদ্যোপান্ত স্টোরিটেলার!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link