নতুন মৌসুম, নতুন এক শুরু। আগের আসরে বেঞ্চ গরম করলেও এবার মাঠ মাতাচ্ছেন প্রথম ম্যাচ থেকেই। প্রয়োজন ছিল একটা সুযোগের। সেটি পেয়েছেন। আর তা কাজে লাগিয়ে নিজেকে নতুন করেন প্রমাণ করছেন রবিন উথাপ্পা।
৩৬ রানে ২ উইকেট হারিয়ে তখন বিপাকে চেন্নাই। ব্যাট করতে নেমে একদিকে তখন তাণ্ডব শুরু করেছেন শিভাম দুবে। আরেকপ্রান্তে উইকেটে বাঁচিয়ে ধীরেসুস্থে খেলছিলেন উথাপ্পা। শিভাম দুবের যখন ২৩ বলে ৩৮ রান, উথাপ্পা তখন ২৫ বলে ২৭ রানে অপরাজিত। ১২ ওভার শেষে দলের রান তখন ২ উইকেটে ৮৬।
এরপরই শুরু উথাপ্পার বিধ্বংসী ব্যাটিং। ১৩ তম ওভারে গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে হাঁকালেন তিন ছক্কা! এরপর চার-ছক্কার ফুলঝুরিতে ৩৩ বলে ফিফটি তুলে নেন উথাপ্পা। এবারের আসরের দ্বিতীয় আর আইপিএল ক্যারিয়ারের ২৭তম ফিফটি। একপ্রান্তে দুবে, আরেকপ্রান্তে উথাপ্পা – দু’জনের তাণ্ডবে বিধ্বস্থ রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর বোলিং শিবির।
দলীয় ২০১ রানে যখন ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার বলে আউট হন উথাপ্পার সংগ্রহ তখন ৫০ বলে ৮৮ রান! ৯ ছক্কা ও চার বাউন্ডারিতে স্ট্রাইক রেট ১৭৬! দু’জনে মিলে তৃতীয় উইকেটে গড়েন ১৬৫ রানের দুর্দান্ত জুটি।
ব্যাট হাতে বেশ সময় পার করছিলেন উথাপ্পা। আগের আসরে খেলেছিলেন মাত্র চার ম্যাচ। এই চার ম্যাচে ২৯ গড়ে করেন মাত্র ১১৫ রান। ১৩৭ স্ট্রাইক রেট, ফিফটিও একটি। ব্যাট হাতে খুব যে ব্যর্থ ছিলেন সেটা বলা যাবে না। কিন্তু টিম কম্বিনেশনের কারণে নিজেকে একাদশে ঠাঁই মেলাতে ব্যর্থ হন এই ব্যাটার। ফাফ ডু প্লেসিস, রুতুরাজ গাইকোড়রা সেবার ফর্মে থাকায় ডাগ আউটেই টুর্নামেন্টের সিংহভাগ সময় পার করেছেন উথাপ্পা।
তবে এবার ফাফ না থাকায় ভাগ্যটা সুপ্রসন্ন বলা চলে উথাপ্পার। ওপেনিংয়ে জায়গা পেতে মোটেও বেগ পেতে হয়নি তাঁকে। প্রথম ম্যাচেই খেলেন ২১ বলে ২৮ রানের ইনিংস। পরের ম্যাচে লখনৌর বিপক্ষে মাত্র ২৭ বলে করেন ফিফটি। এরপর পাঞ্জাব কিংস ও সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের বিপক্ষে দুই ম্যাচ মিলে করেন মাত্র ২৮ রান। চেন্নাইয় সুপার কিংসও হেরে যায় প্রথম চার ম্যাচ।
টানা দুই ম্যাচ ব্যর্থতায় ওপেনিংয়ে উথাপ্পার সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। বয়সটাও ৩৬। আরেকপ্রান্তে রুতুরাজ গাইকোড় এবার চরম বাজে ফর্মে। সব মিলিয়ে ওপেনারদের নিয়ে সমালোচনাটা একটু বেশিই ছিল। তবে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর বিপক্ষে দাপুটে ইনিংস খেলে সব প্রশ্নের জবাবটা ব্যাট হাতেই দিলেন রবিন উথাপ্পা। ৫০ বলে ৮৮ রানের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে শিভাব দুবের সাথে অনবদ্য জুটিতে চেন্নাইকে জয় এনে দিলেন ২৩ রানের।
এবারের আসরে এখন পর্যন্ত ৫ ম্যাচে ৩৯ গড়ে ১৬৩ স্ট্রাইক রেটে রান করেছেন ১৯৪। আছে দুই ফিফটি। টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায় শিভাম দুবের পরেই তৃতীয়তে আছেন তিনি।
গেল আসরে হন্য হয়ে সুযোগ খু্ঁজতে থাকা উথাপ্পা এখন টুর্নামেন্টের সেরা তিন রান সংগ্রাহকের একজন। দলের হতাশাজনক পারফরম্যান্সেও ব্যাট হাতে দ্যুতি ছড়াচ্ছেন এই ওপেনার। যেন প্রতিনিয়তই বয়সকে দেখিয়ে চলছেন বুড়ো আঙুল।
বয়সটা স্রেফ একটা সংখ্যা মাত্র তা ক্রিকেট পাড়ায় নিয়মিতই প্রমাণ করে চলেছেন অনেক ক্রিকেটার। তাদের মধ্যেই একজন উথাপ্পা। আগের দুই আসর মিলিয়ে ১২ ছক্কা হাঁকানো এই তারকা এই আসরে প্রথম ৫ ম্যাচেই মেরেছেন ১২ ছক্কা! বয়সের ভারে যে ন্যুব্জ হয়ে যাননি তার প্রমাণটা ব্যাট হাতেই দিচ্ছেন রবিন উথাপ্পা।