ভারত ক্রিকেট দল ঘিরে পরিবর্তনের হাওয়ার সাথে খুব অল্প করে মিশে আছে গুজব কিংবা গুঞ্জন। দলের কোচের পালাবদলের সাথে পরিবর্তন এসেছে রঙিন পোশঅকের নেতৃত্বে। তাতেই যেন মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে নানা সব গুজব। এসব কিছুর মধ্যখানে বিরাজ করছেন সাদা বলে ভারতকে নেতৃত্বের দায়িত্ব পাওয়া রোহিত শর্মা এবং সাদা বলের সদ্য সাবেক হওয়া অধিনায়ক বিরাট কোহলি।
নি:সন্দেহে ভারতীয় ক্রিকেটে এই দুই ব্যাটারের কৃতিত্ব বলে শেষ করা খুব দুষ্কর। রোহিতের সব ফরম্যাট মিলিয়ে রান ১৫ হাজারের বেশি অন্যদিকে বিরাটের রান ছাড়িয়েছে ২৩ হাজারের ঘর। এ রানের পুরোটাই করেছেন তাঁরা জাতীয় দলের হয়ে। দলের জন্যে অবদান রাখতে সদা সচেষ্ট রয়েছে এই দুই তারকার ব্যাট। তবে ভারতের ক্রিকেট মহলে ভেসে বেড়ায় রোহিত-বিরাটের দূরত্বের গল্প। সেই গল্প কিংবা গুজব অথবা গুঞ্জনের পালে হাওয়া দিচ্ছে আসন্ন দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে রোহিত-বিরাটের একসাথে না খেলা।
হ্যাঁ, এটা সত্য যে তাঁরা দুইজন একসাথে খেলবেন না আসন্ন সফরে। রোহিত খেলছেন না টেস্ট সিরিজে এবং বিরাট খেলবেন না ওয়ানডে সিরিজ। এর পেছনে তাঁদের রেষারেষির যেই গন্ধ পাচ্ছেন দর্শক, সমর্থক কিংবা নিন্দুকেরা তা হয়ত পুরোপুরি ভুল নয়। তবে তাঁদের এই খেলতে না পারার পেছনে রয়েছে ভিন্ন কারণ এবং একটি অতর্কিত, অপ্রত্যাশিত এবং অপরটি আগে থেকেই জানানো। ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোতেও এই ইস্যুতে বেশ তোলপাড় হচ্ছে।
ভারতের এখন অধিনায়ক দুইজন। একজন সাদা বলের আরেকজন লাল। লাল বলের অধিনায়কত্ব এখন পর্যন্ত ছাড়েননি বিরাট কিংবা তাঁকে সেখান থেকে অব্যাহতি দিতে চায়নি বোর্ড কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে তিনি স্বেচ্ছায় ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন টি-টোয়েন্টির অধিনায়কত্ব। সেটা ঘোষণাও দিয়েছিলেন বেশ আগেভাগেই। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর বিরাটের স্থলাভিষিক্ত হন রোহিত। টি-টোয়েন্টি অধিনায়কের দায়িত্ব ছেড়ে দিতে চাইলেও বিরাট চেয়েছিলেন ওয়ানডেতে ২০২৩ বিশ্বকাপ অবধি দায়িত্ব না ছাড়তে।
কিন্তু সাদা বলের দুই ফরম্যাটে দুই অধিনায়ক রাখতে নারাজ বিসিসিআই। তাইতো দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ দিয়েই ওয়ানডেতে অধিনায়কত্বের যাত্রা শুরু করবেন রোহিত শর্মা। যেহেতু বিরাট ছাড়তে চাননি সেহেতু নতুন করে আবার দানা বেঁধেছে পুরোনো গুঞ্জন, দু’জনের ব্যক্তিগত ঝামেলা। আবার এখন নতুন করে দুইজনের দুই ভিন্ন ফরম্যাটে অনুপস্থিতি কাজ করছে আগুনে ঘি ঢালার মতো।
কিন্তু রোহিত টেস্ট খেলছেন না ইনজুরির কারণে, অপরদিকে বিরাট পারিবারিক কারণে থাকছেন না ওয়ানডে সিরিজে। দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের কথা মাথায় রেখে নেটে ব্যাটিং অনুশীলনে মশগুল রোহিত পড়ছেন সাইড স্ট্রেইনের ইনজুরিতে। খুব বেশি গুরুতর না হলেও তাঁকে মাঠের বাইরে থাকতে হবে বেশকিছুদিন। সে দিক বিবেচনায় তিনি মিস করবেন টেস্ট সিরিজের তিনটি ম্যাচ। তাঁর স্থানে দলের ডাক পেয়ছেন ভারত ‘এ’ দল থেকে প্রিয়াঙ্ক পাঞ্চাল।
অন্যদিকে বিরাট জানুয়ারিতে ছুটি চেয়েছিলেন বহু আগে থেকেই। বোর্ডও তাঁর ছুটি মঞ্জুর করেছে। মূলত তাঁর সন্তানের প্রথম জন্মবার্ষিকি-কে সামনে রেখে ছুটি চেয়েছিলেন বিরাট। সেই ছুটি মঞ্জুর হওয়ায় তিনি থাকছেন না দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষের ওয়ানডে সিরিজে। ব্যক্তিগত মনোমালিন্য কিংবা আক্রোশ থেকে তাঁরা না খেলার সিধান্তে উপনীত হননি তা মোটামুটি স্পষ্ট।
বিগত চার-পাঁচ বছরে ক্রমান্বয়ে বিরাট এবং রোহিত নিজেদের সামর্থ্য প্রমাণ করেছে ভারত জাতীয় দলে। বনে গেছেন দলের আস্থার প্রতীক। তবে তাঁদের এই ব্যক্তিগত আক্রোশ দলের জন্যে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। যদিও সাবেক কোচ রবি শাস্ত্রীর তত্ত্বাবধানে এই দুই খেলোয়াড় তাঁদের ব্যক্তিগত মনোমালিন্য দূরে রেখে মনোযোগি হয়েছিলেন পেশাগত দায়িত্বে।
এখন দেখবার পালা নতুন কোচ রাহুল দ্রাবিড়ের অধীনে রোহিত-বিরাটের পেশাগত সম্পর্ক কোনদিকে মোড় নেয়। তবে ভারতের সাঁজঘরে এমন রেষারেষি প্রথমবারের মতো ঘটেনি। অহমের এক দাম্ভিকতার পাল্লা চলছে বহুকাল আগে থেকেই।
কপিল দেব-সুনীল গাভাস্কার, মোহাম্মদ আজাহারউদ্দিন- শচীন টেন্ডুলকার, মহেন্দ্র সিং ধোনি- গৌতম গম্ভীরদের মধ্যেও ছিল এমন ব্যক্তিগত কোন্দল। তবে সবকিছু উপেক্ষা করে তাঁরা দলের প্রয়োজনের পেশাদারিত্বের জায়গা থেকে নিজেদের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করে গিয়েছেন। বিরাট-রোহিতদের ক্ষেত্রেও তাই ঘটবে, কেননা তারাই যথেষ্ট পেশাদার, এমনটাই মনে করেন দলের সাথে থাকা ব্যক্তিরা।