রুতুরাজ ‘রজনীকান্ত’ গায়কড়!

চেন্নাইয়ের হয়ে ‘গায়কড়’রা নাকি বরাবরই হিট। দাবি করলো ভারতীয় ভক্ত-সমর্থকদের টুইট। কিভাবে? সিনেমার সুপারস্টার রজনীকান্তের নাম তো মূলত শিবাজিরাও গায়কড়। পর্দায় তিনি কতশত অসম্ভবকে সম্ভব করেন – সেটা কে না জানেন!

বাস্তবে ক্রিকেট মাঠে তেমনই এক কাণ্ড ঘটালেন আরেকজন গায়কড়। তিনি রুতুরাজ গায়কড়।

দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে চেন্নাই সুপার কিংসের সমর্থকদের তখন পিন পতন নিরবতা। আরেকদিকে, মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের সমর্থকদের উল্লাস! কারণ ম্যাচের শুরুতেই মাত্র ২৪ রানে চেন্নাইর ৪ উইকেট তুলে নিয়ে ম্যাচে নিয়ন্ত্রণ তখন মুম্বাইয়ের। মুখ থুবড়ে পড়া চেন্নাইর ব্যাটিং অর্ডারে ত্রানকর্তা হিসেবে রূপ নেন ওপেনার রুতুরাজ গায়কড়।

আগের পর্বের সাত ম্যাচে করেছিলেন ১৯৬ রান! বেশ দাপুটে ব্যাটিংই করেছিলেন। ওপেনিংয়ে এবার চেন্নাইর অন্যতম ভরসাও ছিলেন তিনি। আর সেই ভরসার প্রতিদানটাও দিলেন পরের পর্বের প্রথম ম্যাচেই! দুবাইতে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) এবারের আসরের দ্বিতীয় পর্বের প্রথম ম্যাচেই রুতুরাজ গায়কড়ের ব্যাটিং দাপটে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের বিপক্ষে দারুণ জয় পায় চেন্নাই।

শুরু থেকেই উইকেট হারিয়ে বিকল চেন্নাই শিবির। ৭ রানে ৩ ও ২৪ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে চেন্নাই তখন ডুবন্ত অবস্থায়! ওপেনিংয়ে নামা রুতুরাজ গাইকড় এই যাওয়া আসার মিছিলটা দেখছিলেন আর ভাবছিলেন দলকে এই বিপদ থেকে উদ্ধারের উপায়। দলের বিপদে ব্যাট হাতে জ্বলে উঠার আজই তো মোক্ষম সময়! সেই ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিতে ধীরে ধীরে একপ্রান্তে ভীত গড়তে লাগলেন তিনি। এরপর রবীন্দ্র জাদেজার সাথে ৭১ রানের জুটির পথে করলেন এবারের আসরের তৃতীয় হাফ সেঞ্চুরি।

ধীরে ধীরে দলকে টেনে তুললেন খাদের কিনারা থেকে। গায়কড় ফিফটি করলেও দলের রানের চাকা তখনো বেশ ধীরগতিতে চলছে। ১৬.৪ ওভারে দলীয় ১০৫ রানে তখন আউট জাদেজাও! প্রেডিক্টেড স্কোর তখনো ১৩৫-৪০ এর কাছাকাছিই ছিলো। সেখান থেকে ষষ্ঠ উইকেটে ক্যারিবিয়ান অলরাউন্ডার ডোয়াইন ব্রাভোর সাথে ১৬ বলে ৩৯ রানের ঝড়ো জুটি গড়েন গায়কড়। ব্রাভো ফিরলেও ইনিংসের শেষ বলে নান্দনিক এক শটে ছক্কা মেরে ৮৮ রানে অপরাজিত থাকেন গায়কড়!

৫৮ বলে ৪ ছক্কা ও ৯ চারে ৮৮ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস দলকে উপহার দেন তিনি। তাঁর ইনিংসেই শেষ পর্যন্ত ১৫৭ রানের শক্তিশালী টোটাল দাঁড় করায় চেন্নাই। সেখান থেকে ২০ রানের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে চেন্নাই সুপার কিংস। ডুবতে থাকা দলকে বাঁচিয়ে ম্যাচের নায়ক বনে যান তরুণ গায়কড়।

ম্যাচের শুরু থেকেই আধিপত্য বিস্তার করা ট্রেন্ট বোল্ট, অ্যাডাম মিলনেরা যেখানে নাকানিচুবানি খাইয়েছেন বাকিদের, সেখানে একপ্রান্তে সাবলিল ব্যাটিং করে চেন্নাইকে ম্যাচে টিকিয়ে রেখেছিলেন গাইকড়। বুমরাহ, বোল্টদের একপ্রকার পাত্তাই দেননি চেন্নায়ের এই ওপেনার। এর মধ্যে সুইপ করে বুমরাহকে যে একটা ছক্কা হাঁকালেন – সেটা অনেকদিন আইপিএলের বিজ্ঞাপন হয়ে থাকবে।

এখন পর্যন্ত এবারের আসরে ৮ ম্যাচে প্রায় ৪১ গড়ে রান করেছেন ২৮৪! যার মধ্যে ফিফটি আছে তিনটি। ১৩৫ স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করা গাইকড় এবারের আসরের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায় আছেন সেরা পাঁচেও! লক্ষ্যটা এবার হয়তো একটু দূরেই। নির্বাচক সহ পুরো ক্রিকেট দুনিয়ার নজর যেহেতু এখানে, নিজের সেরাটা দিয়ে প্রতিভা ও সামর্থ্যের সবটা জানান দিতেই যেন প্রতিজ্ঞাবদ্ধ গায়কড়!

সর্বশেষ শ্রীলঙ্কা সফরে দলে ছিলেন গায়কড়। সেখানে অবশ্য নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি। সেই দুই ইনিংস দিয়েই অবশ্য কেউ কেউ তাঁর শেষ দেখে ফেলেছিলেন। তবে, রুতুরাজের ব্যাট প্রমাণ করল, হারিয়ে যেতে আসেননি তিনি। ধারাবাহিকতা রাখতে পারলে নিশ্চয়ই আবারও শরীরে চাপাতে পারবেন ভারতের নীল জার্সি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link