ফিফা র্যাংকিং ও বাংলাদেশের হতাশা
কিন্তু, বছর পাচেঁক আগে যে ভুতটা চেপে বসেছিল সেটি যেন আবারো ঘুরপাক খাচ্ছে। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সর্বশেষ নির্বাচনের আগে ফিফা র্যাংকিং এ ১৫০ এর মধ্যে থাকার যে লক্ষ্যের কথা শোনা গিয়েছিল সেটি বড় রকমের ধাক্কা খেয়েছে। ২০২০ সালের নির্বাচনের সময় আগামী চার বছর অর্থাৎ ২০২৪ মাসের মধ্যে র্যাংকিং এ দেড়শ’র মধ্যে থাকার কথা বেশ জোর দিয়ে বলেছিলেন। কিন্তু সর্বশেষ প্রকাশিত র্যাংকিং এ ১৮৯-তে থাকায় আবারো চুড়ান্তভাবে হতাশ হতে হয়েছে।
পেছাতে পেছাতে ফিফা র্যাংকিং এ বাংলাদেশের অবস্থান এখন ১৮৯! সর্বশেষ র্যাংকিং এ একধাপ পিছিয়ে এই অবস্থানে রয়েছে রাল সবুজ প্রতিনিধিরা। আগষ্টের পর সেপ্টেম্বরেও অবনতি হয়েছে জামাল ভুইয়ার দলের। বাংলাদেশের পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশ ভারতেরও অবনমন হয়েছে।
তারা দুই ধাপ পিছিয়ে ১০৫ থেকে নেমে ১০৭ নম্বরে নেমে গেছে তারা। আবারো পেছনে হাটা শুরু করেছে বাংলাদেশের ফুটবল। ফিরে আসল ২০১৬ সালে সেই দু:সহ স্মৃতি। আবারো ফিফা র্যাংকিং এ ভুটানের মতো ’পুচকে’ দেশের পরে অবস্থান জেমি ডে’র শীষ্যদের। চেনচো জেলস্ট্রেনর দেশকে নিয়ে এই উপাধিতে অনেকের আপত্তি থাকলেও বাংলাদেশের কাছে তো তারা এটিই।
কিন্তু, বছর পাচেঁক আগে যে ভুতটা চেপে বসেছিল সেটি যেন আবারো ঘুরপাক খাচ্ছে। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সর্বশেষ নির্বাচনের আগে ফিফা র্যাংকিং এ ১৫০ এর মধ্যে থাকার যে লক্ষ্যের কথা শোনা গিয়েছিল সেটি বড় রকমের ধাক্কা খেয়েছে। ২০২০ সালের নির্বাচনের সময় আগামী চার বছর অর্থাৎ ২০২৪ মাসের মধ্যে র্যাংকিং এ দেড়শ’র মধ্যে থাকার কথা বেশ জোর দিয়ে বলেছিলেন। কিন্তু সর্বশেষ প্রকাশিত র্যাংকিং এ ১৮৯-তে থাকায় আবারো চুড়ান্তভাবে হতাশ হতে হয়েছে।
ফিফা র্যাংকিংকে বলা হয় একটি দেশের ফুটবল আয়না। উন্নতি-অবণতির প্রমাণ যে এটি দিয়ে বোঝা যায়। এবার আগাই মাস পর ফিফা অধিভুক্ত দেশগুলোর কি অবস্থান সেটি জানানো হয়েছে। ২১০ টি দেশের মধ্যে এখন বাংলাদেশের অবস্থান পিছিয়েছে আরও চার ধাপ। সে হিসেবে বাংলাদেশের পরে আছে কেবল ২১টি দেশ! যাদের নাম-পরিচয় খুব কম মানুষই জানে।
তাদের পরিচয় অচেনা আর ছোট রাষ্ট্র হিসেবে। মূলত সর্বশেষ বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচ দিয়েএ এটি করা হয়েছে। কাতার বিশ্বকাপের বাছাইপর্বের এই প্রতিযোগিতায় ১২ ম্যাচেই জয়হীন বাংলাদেশ। দুই ড্রয়ে মাত্র দুটি পয়েন্ট অর্জনের প্রভাবটা পড়েছে র্যাংকিংয়ে। যার কারণে রেটিংয়ের আট পয়েন্ট কমে এখন দাড়িয়েছে ৯০৯।
অথচ যে ভারতকে একটা সময় বাংলাদেশের প্রবল প্রতিদ্বন্ধী হিসেবে ভাবা হতো তারা এখন ১০৭ এ অবস্থান করছে। এই দেশটি নিজেদের ইতিহাসে ৯৬ পর্যন্ত উঠে গিয়েছিলেন। ২০২৬ বিশ্বকাপে খেলার লক্ষ্য রয়েছে ভারতের। সেখানে বাংলাদেশের অবস্থান অনেকটাই তিমিরে রয়েছে। যে মালদ্বীপকে একটা সময় ৮-০ গোলে উড়িয়ে দিত সেই দ্বীপ রাষ্ট্রটি রয়েছে ১৫৮ নাম্বারে।
এই স্থান আবার বাংলাদেশের কাছে স্বপ্ন। এছাড়া কাতার বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে চাইনিজ তাইপের বিপক্ষে দুটি ম্যাচ জিতে ছয় পয়েন্ট নিয়ে ৪ রেটিং পয়েন্ট বাড়িয়ে ১৬৮ তে রয়েছে নেপাল। ভুটার ট্যাজেডির পর ২০১৮ সালের জুনে বাংলাদেশ যেখানে ছিল ১৯৪ সেখানে তারা ছিল ১৮৩।
২০১৯ সালে ঢাকায় দুটি প্রীতি ম্যাচে বাংলাদেশের কাছে পরাজিত হওয়ার পর আর আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে পারেনি। কাতার বিশ্বকাপ বাছাইপর্বও তাই খেলা হয়নি। তারপরও ভুটান এখন ১৮৭ তে থেকে বাংলাদেশ থেকে একধাপ উপরে রয়েছেন। সে হিসেবে লাল সবুজ জার্সিধারীদের পিছিয়ে থাকাটা কিছুটা আশ্চর্যেরও বটে।
ভুটানের মতোই ২০১৯ সালে কম্বোডিয়ার বিপক্ষে বিপক্ষে শেষ ম্যাচ খেলার পর থেকে নিষিদ্ধ হওয়া পাকিস্তান রয়েছে ১৯৮ নাম্বারে। সাংগঠনিক ব্যর্থতায় ২০৫ এ থেকে দক্ষিন এশিয়ার মধ্যে শ্রীলঙ্কাকার সবার পেছনে থাকাটা তাই খুবই স্বাভাবিক ব্যপার। কিন্তু বাংলাদেশ কেন প্রত্যাশামতো উন্নতি করকে পারছে না সেটি প্রশ্ন স্বাপেক্ষ বিষয়। রুগ্ন অবস্থা থেকে স্বাস্থবান তো হতেই পারছেনা, মোটামোটি পর্যায়েও থাকতে পারছে না।
অথচ ৬০ থেকে ৬৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বছরে পারিশ্রমিক পেয়ে থাকেন ফুটবলাররা। বিদেশিদের দিয়ে হিসাব করলে সংখ্যাটা আরো বেশি। কিন্তু আন্তর্জাতিক ফুটবলে যেই বাংলাদেশকে দেখা যাচ্ছে। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে ১৮৭ র্যাংকিং এ থাকার সময় বাফুফে সভাপতি বলেছিলেন, আন্তর্জাতিক ম্যাচ না খেললে র্যাংকিং এ উন্নতির কোন সম্ভাবনা নেই।
কিন্তু জাতীয় দলকে ম্যাচ খেলার ব্যবস্থাটা করে দিতে বাফুফেকে। কিন্তু সেটি যে দেশের ফুটবল পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানটি করতে পারছেন না। তৃতীয় মেয়াদ শেষে চতুর্থ মেয়াদের সভাপতি হলে র্যাংকিং এ ১৫০ এর মধ্যে নিয়ে আসার কথা বলেছিলেন। কিন্তু তার কাছাকাছিও যেতে পারছেনা। চতুর্থ মেয়াদে সভাপতি হওয়ার পর প্রায় এক বছর হতে চলল। অনেকটা তৈলাক্ত বাশ বেয়ে বানরের উপরের ওঠা মতো। উন্নতির পরিবর্তে এখন দুই ধাপ এগিয়ে চারধাপ পিছিয়ে লাল সবুজের ফুটবল।
সমস্যাটা অবশ্য বাফুফে নিজেরাই তৈরি করেছে। এখন যে ফিফা আন্তর্জাতিক উইন্ডোতে ম্যাচ খেলার জন্য ব্যকুল থাকে দেশের ফুটবলের নিয়ন্ত্রা সংস্থাটি আগে তাও করতেন না। সে কারণে ফিফা উইন্ডো বাফুফের কাছে তেমন একটা গুরুত্ব পেতনা। এখন অর্থ সংকটের জন্য ম্যাচ খেলা কঠিন বলে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রনালয়ের কাছে আর্থিক সহায়তা কামনা করেছেন।
বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন বলেন, ‘আমি সভাপতি বলে বলছিনা, যেই বাফুফে সভাপতি হোন না কেন টাকা ছাড়া আন্তর্জাতিক ম্যাচ পরিাচলনা করা সম্ভব নয়। এখন সরকারকে টাকা দিতে হবে। নয়তো যেমন করে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা সম্ভব নয় ঠিক তেমনি র্যাংকিংয়ে উন্নতি গড়াও সম্ভব নয়।’
ঘরোয়া ফুটবলে তাই লাখ লাখ টাকা পাওয়া ফুটবলারদের সাফল্যের ছাপ আন্তর্জাতিক ম্যাচগুলোতে পড়ছেনা। জাতীয় দলের জন্য সব ধরনের সুযোগ সুবিধা রাখলেও নিয়মিত ম্যাচ খেলতে না পারলে উন্নতি হওয়ার কোন সুযোগ নেই। তাই ম্যাচ না খেলে র্যাংকিং এ উন্নতি হবেনা। কারণ ভুলে গেলে চলবেনা, চতুর্থ মেয়াদে সভাপতি হওয়ার আগে নির্বাচনী ইশতেহারে র্যাংকিংয়ে ১৫০ এর মধ্যে বাংলাদেশকে নিয়ে আসার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। অথচ ১৯৯৩ সালে ১১৬ থেকে এখন আশির ঘর পেরিয়ে নব্বইয়ের ঘর ছুই ছুই।
অথচ সেই সময়ে ১২৫ এ থাকা ক্রোয়েশিয়া ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলেছে! ২০১৬ সালে বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের খেলা ভুটানের কাছে ৩-১ গোলে পরাজয়ের পর তিন বছরের জন্য নির্বাসনে চলে যেতে হয়। ফলাফল র্যাংকিং এ অবস্থান হয় ১৯৭ তে। কোচ জেমি যে নিয়মিত আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার পাশাপাশি ভালও খেলার কথা বলেছেন। ক্রমানবতির এই ধারাটা কতদিন অব্যহত থাকবে সেটা কেউ বলতে পারছে না।
তবে কিরগিজস্তানে সর্বশেষ খেলা ত্রিদেশীয় সিরিজের তিনটি ম্যাচরে সবকটিতেই পারজিত হয়েছে বাংলাদেশ। ফিলিস্তিনের কাছে ০-২ গোলে পরাজয় দিয়ে শুরু। এরপর কিরগিজস্তানের বিপক্ষে ১-৪ গোলে পরাজয়ের পর একই দেশের অনুর্ধ্ব-২৩ দলের কাছে হেরেছে ২-৩ গোলে। সে কারণে র্যাংকিং এ পিছিয়ে যেতে ভুমিকা রেখেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
এদিকে সমালোচনা মেনে নিয়েছেন বাফুফে সভাপতি কাজী মোহাম্মদ সালাউদ্দিন। ভাল খেলতে না পারলে প্রত্যাশার কাছাকাছি যাওয়া সম্ভব নয়। বাংলাদেশ যেমন অনেক বছর পর গত বছর নেপালের বিপক্ষে ফুটবল সিরিজ জিতেছিল। সাফের সাফল্য তো দূরের বাতিঘর হয়ে গেছে। ২০০৩ সালে ঘরের মাঠে সর্বশেষ ও একমাত্র হিসেবে শিরোপা জিতেছিল।
তারও চার বছর আগে ১৯৯৯ সালে প্রথমবার জিতেছিল সাফ গেমস ফুটবলের শিরোপা। আর ২০১০ সালে ঘরের মাঠে অনুর্ধ্ব-২৩ অলিম্পিক দল জিতেছিল এসএ গেমস ফুটবলের শিরোপা। তারপর থেকেই ব্যর্থতার বৃত্তে ঘুরপাক খাওয়া। সর্বশেষ পাঁচটি সাফের গ্রুপ পর্ব হতে বিদায় নেওয়ার লজ্জা পেতে হয়েছে।
র্যাংকিং এ আবারো পিছিয়ে পড়ার কারণে উন্নতির লক্ষ্যে সেপ্টেম্বর মাসে আবারো ফিফা উইন্ডোতে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার পরিকল্পনা করেছে বাফুফে, কিন্তু দলের খেলায় কোন উনইতই হয়নি। যদিও কিরগিজদের ১০১ আর ফিলিস্তিনের ১০২ র্যাংকিং এর সাথে বাংলাদেশের পেরে ওঠার কথা নয়। কিন্তু এরচেয়ে শ্রেয়তর প্রতিপক্ষ পাওয়া যায়নি।