টালমাটাল এক পরিস্থিতি। ঝড়ের আগের পূর্বাভাস নেই। হুট করেই এলো ঝড়। সে ঝড়ের তাণ্ডব চলছে বহুকাল। বাংলাদেশ ক্রিকেট তো ধুকছে দুই ফরম্যাটে একেবারে শুরু থেকেই। কিছুতেই যেন কিছু হচ্ছেনা এই দুই ফরম্যাটে। আর কোন উপায়ন্তর খুঁজে না পেয়ে পেছন ফিরে তাকাতে হচ্ছে বিসিবিকে।
সে পেছনের ফিরে তাকাতে সবার আগেই সম্ভবত সাব্বির রহমান রুম্মানকেই চোখে পড়েছে নির্বাচকদের। তবে এই নির্বাচনটা ঠিক কিসের ভিত্তিতে হয়েছে সে নিয়ে একটা বিস্তর আলোচনা সভার আয়োজন করা যেতে পারে। কিন্তু আলোচনা থাক, কথা হোক বরং সম্ভাবনা নিয়ে।
সাব্বির রহমান বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রতিভাবান ক্রিকেটারদেরই একজন সে নিয়ে সন্দেহর বিশেষ সুযোগ নেই। ক্রিকেট বলকে ক্লিনহিট করতে পারা ব্যাটারদের মধ্যে তিনি নিঃসন্দেহে থাকবেন সামনের সাড়িতে। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের মঞ্চে তিনি বহুবার তাঁর প্রতিভার ঝলক দেখিয়েই জায়গা করে নিয়েছিলেন জাতীয় দলে। সুযোগের সদ্ব্যবহারটা তিনি ঠিক কেন যেন করতে পারেননি।
তাই বলে যে একেবারেই অন্ধকার গহীনে তাঁকে ছুড়ে ফেলে দিতে হবে এমন কোন বিশেষ কারণও ঘটেনি। তবুও তিনি ছিলেন নির্বাসনে প্রায় তিন বছর। জাতীয় দলের বাইরে থেকেছেন। অপেক্ষা করেছেন। মাঝে আবার ইনজুরিও দিয়েছিল হানা। সব মিলিয়ে তিনি আলোচনার বাইরেই ছিলেন।
হঠাৎ এলেন টি-টোয়েন্টি দলে। তাও আবার এশিয়া কাপের দলে। এই এশিয়া কাপে অবশ্য তিনি তাঁর টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের একটি অর্ধশতকের দেখা পেয়েছিলেন। সেটাও আবার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। কি দুর্দান্ত এক ইনিংস তিনি সেদিন খেলেছিলেন। চার-ছক্কার পসরা সাজিয়ে ব্যাট করেছিলেন ১৪৮.১৪ স্ট্রাইকরেটে। ৮০ রান এসেছিল তাঁর সে ইনিংস থেকে।
যা ছিল দলীয় রানের প্রায় অর্ধেক। সেবার ম্যাচটা জিতেছিল বাংলাদেশ। আরও একটি দুর্দান্ত ইনিংসের স্মৃতি নিশ্চয়ই মনে পড়ার কথা। ম্যাচটা ছিল ভারতের বিপক্ষে। নিদাহাস ট্রফির ফাইনাল ম্যাচ। ম্যাচটা অবশ্য় শেষ ওভারের নাটকীয়তা হেরেছিল বাংলাদেশ। তবে সে ম্যাচেও আলো ছড়িয়েছিলেন সাব্বির রহমান। তাঁর ব্যাটটা সেদিন রীতিমত ছিল তরবারি।
৭৭ রানের সে ইনিংসটায় তিনি রান তুলেছিলেন প্রায় দেড়শ স্ট্রাইকরেটে। সাত চার ও চার ছয় এসেছিল তাঁর ব্যাট থেকে। এবার দলীয় রানের অর্ধেকের একটু কম। এসব পুরোনো স্মৃতি মনে করে দেওয়ার একটাই কারণ। বড় মঞ্চে সাব্বিরের টেম্পারমেন্ট তুলে ধরা। এশিয়া কাপকে সামনে রেখে সাব্বিরকে দলে অন্তর্ভুক্ত করাটা একটা জুয়া খেলার মতই।
তবে এই জুয়ার ফলটা পক্ষে আসার সম্ভাবনার পাল্লাটাই ভারি। সাব্বিরের দিনে তিনি ভয়ংকর, ভীষণরকম ভয়ংকর। তিনি অন্তত বোলারদের চোখে চোখ রেখে লড়াইটা করতে পারেন। তাছাড়া যেদিন ছন্দে থাকবেন সাব্বির সেদিনটা বাংলাদেশের করে নিতে স্রেফ বাকিদের সামান্য একটু ইচ্ছে শক্তিই যথেষ্ট। কিন্তু তবুও একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খায়, সাব্বির ঠিক পারবেন তো প্রত্যাশার বাঁধা উৎরে যেতে?
সে প্রশ্ন হয়ত সাব্বির মাঠের ক্রিকেটেই দেবেন। মুখিয়ে তিনি রয়েছেন নিশ্চয়ই। এবারের সুযোগটা হতে পারে শেষ। সেটাও নিশ্চয়ই তিনি বেশ ভালই বোঝেন। তবুও এত এত চাপ সামলে নেওয়াটাও তো সবার নিত্যদিনের গল্প নয়। তবে সাব্বিররা তো ভিন্ন। নয় কি!