ক্রিকেটের আদিলগ্ন থেকেই অস্ট্রেলিয়া সফর প্রতিপক্ষের জন্য কঠিন একটি বিষয় ছিল।
সবুজ ঘাসের মাঠ, পিচের কুইক স্কিডিং, আবহাওয়া, জেনুইন ফাস্ট বোলারদের প্রাবল্য, আধুনিক দর্শকদের সাপোর্ট, টিজিং সবকিছু মিলিয়ে বিশেষত ব্যাটসম্যানদের ভাল পরীক্ষা নিত। আর সেটা যদি হয় টেস্ট ফরম্যাট তবে তো কথাই নেই!
অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে অস্ট্রেলিয়ার সামনে লড়তে পারলে পাঁচ দিনে পাঁচরকম অবস্থা দেখা যায় এক টেস্টেই।
অস্ট্রেলিয়ার সেই প্রবল প্রতিপক্ষদের একটি ভারত। বিশেষত গত দুই দশক যাবত ধারাবাহিকভাবে অজিদের মাঠেই অজিদের চোখে চোখ রেখে লড়াই করার সামর্থ্য রাখা অন্যতম প্রতিপক্ষ ভারত বললেও খুব বেশী ভুল হবেনা। আজকাল তো অনেকে অ্যাশেজের চেয়েও এই বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফিকে এগিয়ে রাখছেন।
সেই লড়াইয়ে অন্যতম কাণ্ডারি যে শচীন টেন্ডুলকার, তা বুঝতে গণক হতে হয়না!
সৌরভের আমলের সফরগুলিতে দ্রাবিড়, লক্ষ্মণরা, তার আগে আজহারউদ্দিন, শাস্ত্রীরা চোখে পড়ার মত কারিশমা দেখালেও নিজের খেলা প্রত্যেকটা সফরে দারুণ ধারাবাহিক ছিলেন এই মাস্টারক্লাস ব্যাটসম্যান।
প্রথম সফরে দল করুণভাবে হারলেও তিনি হয়েছিলেন সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক। টিনেজার শচীন এই সফর দিয়েই প্রমাণ করে দিয়েছিলেন তিনি লম্বা রেসের ঘোড়া।
ক্রিকেট বিশ্লেষক বোরিয়া মজুমদার তাই সম্প্রতি শচীনের সাথে এক আলাপনে প্রশ্ন রাখেন, ওইরকম কম বয়সে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে তাঁদের বন্য পেস সামলাতে শচীন কিভাবে মানসিক প্রস্তুতি নিয়েছিলেন, যা থেকে বর্তমান তরুণ ব্যাটসম্যানরা শিখতে পারে।
শচীন সময়টা মনে করে বলেছেন, ‘অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার আগের সফরগুলোতে আমাকে কোয়ালিটি বোলিং খেলতে হয়েছে। যা বেশ কাজে দিয়েছে। এছাড়া অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার ঠিক আগে ইংল্যান্ডে প্রথম সেঞ্চুরিপ্রাপ্তি আরও বেশী আত্মবিশ্বাস জোগায়। কারণ প্রথম সেঞ্চুরি একজন ব্যাটসম্যানকে এই লেভেলে কিভাবে স্নায়ু শক্ত রেখে বড় ইনিংস খেলতে হবে, সেই তরিকাটা দিয়ে দেয় ‘
তবে শচীন প্রস্তুতি হিসেবে প্রতিপক্ষ, কন্ডিশনের গভীর পর্যবেক্ষণ এবং একটু ভিন্নভাবে অনুশীলনের উপর গুরুত্ব দেন। তিনি প্রথম অস্ট্রেলিয়া সফরের আগে, ভেজা পিচে রাবার বল খেলে প্রস্তুতি নেন। সতীর্থদের বলতেন, গায়ে বল করতে।
কারণ, অস্ট্রেলিয়া সফরে বাউন্সে ভুগতে হয় বেশী। সাধারণ নেট সেশনের চেয়ে এটা বেশ কার্যকরী ছিল। তবে তিনি এও মনে করিয়ে দেন, খেলাটা উপভোগ করতে হবে প্রথমে। অতিরিক্ত চাপ নেয়া, বা বাইরের কোন কিছুতে মনঃসংযোগ নষ্ট করা চলবেনা।
তিনি এ প্রসঙ্গে এক ঘটনা শেয়ার করেন। প্রথম সফরে, তিনি যখন ব্যাট করতে নামতেন, দর্শক থেকে প্লেয়ার অনেকেই টিপ্পনী কাটতো, ওই দেখো স্কুলবয় ব্যাট করতে নেমে গেছে। এটা প্রায় সব সফরেই ছিল নৈমিত্তিক ঘটনা। এছাড়া অজি প্লেয়াররাতো আছেই। তিনি শুনলেও রাও করতেন না। কারণ উত্তর দিলে কথা বাড়বে, যা তাঁকেই বিব্রত করবে।
মাস্টারব্লাস্টারের এই পরামর্শ পৃথ্বী শ, শুভমান গিলরা শুনে কাজে লাগাতে পারে কিনা সেটাই দেখার।