পুনরুত্থান, প্রত্যাবর্তন কিংবা পুনর্জন্ম। একটা গল্প লিখতেই পারতো জিম্বাবুয়ে। কিন্তু সব গল্পের শেষটা তো মধুর হয় না। বিধুরতায় ছেয়ে যায়। জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট দল সেই বিষণ্ন ভরা গল্পই লিখল। যে গল্পে আরো একটি বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্ন হাত ছোঁয়া দূরত্বে শেষ হলো।
বিশ্বকাপের মূলপর্ব নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জিম্বাবুয়ের শুরুটা হয়েছিল দুর্দান্তই। টানা ৪ ম্যাচ জিতে দাপুটে শুরু। এরপর সুপার সিক্সে এসেই যেন জিম্বাবুয়ে যাত্রাপথ উল্টে গেল।
সমীকরণটা সহজই ছিল। স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে জিতলেই বিশ্বকাপের চূড়ান্তপর্বে খেলার টিকিট পেয়ে যেত জিম্বাবুয়ে। কিন্তু ৩১ রানের হারে বিশ্বকাপের বাছাইপর্বেই যাত্রা শেষ করতে হলো ক্রেগ আরভিনের দলকে। গতবারের মতো এবারও বিশ্বকাপে খেলা হচ্ছে না জিম্বাবুয়ের। রোডেশিয়ানদের বিশ্বকাপ খেলার অপেক্ষা গিয়ে বাড়লো এক যুগে।
বাছাইপর্ব থেকে দুটি দল খেলবে বিশ্বকাপের চূড়ান্তপর্বে। আগের ম্যাচে জিম্বাবুয়েকে হারিয়ে শ্রীলঙ্কা আগেই চূড়ান্তপর্বে খেলা নিশ্চিত করেছিল। বাকি ছিল একটি জায়গা।
আর সেই শূন্যস্থান পূরণের জন্য জিম্বাবুয়েকে সম্ভাব্য দল ভাবা হচ্ছিল। কিন্তু স্কটিশদের বিপক্ষে হেরে ৫ ম্যাচে ৬ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট টেবিলের তিনে নেমে গেল জিম্বাবুয়ে। ৩১ রানে হেরে নেট রান রেটে চতুর্থ স্থানে থাকা নেদারল্যান্ডসের চেয়েও পিছিয়ে পড়েছে জিম্বাবুয়ে।
পয়েন্ট টেবিলে তিনে থাকলেও জিম্বাবুয়ের নেট রান রেট আবার নেদারল্যান্ডসের চেয়েও পিছনে। স্কটল্যান্ড আবার নিজেদের শেষ ম্যাচে ডাচদের বিপক্ষেই মুখোমুখি হতে হবে। অর্থাৎ স্কটল্যান্ড হেরে গেলেও দুইয়ে ওঠার কোনো সম্ভাবনা নেই জিম্বাবুয়ের।
বুলাওয়ের কুইন্স স্পোর্টস পার্কে বিশ্বকাপ ওঠার লড়াইয়ে জিম্বাবুয়ের সামনে লক্ষ্যটা মোটেই বড় ছিল না। ২৩৫ রান। কিন্তু ঐ রান তাড়া করতে নেমেই ৯১ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল জিম্বাবুয়ে। যদিও রায়ান বার্ল ও ওয়েলেসলি মাধেভেরে জুটিতে তখন আশা টিকে ছিল জিম্বাবুয়ের।
বার্লের ব্যাটে জিম্বাবুয়ে এগিয়েও গিয়েছিল। কিন্তু যোগ্য সঙ্গীর অভাবে বার্লও শেষ দিকে গিয়ে পরাস্ত হন। জিম্বাবুয়ে যখন জয় থেকে ৩৮ রানের দূরত্বে, হাতে মাত্র ২ উইকেট। ঠিক ঐ সময়েই আউট হন বার্ল।
মাইকেল লিস্কের বলে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে ব্যক্তিগত ৮৩ রানে আটকে যান বাঁহাতি এ ব্যাটার। বার্ল আউট হওয়ার পর ৬ রানের ব্যবধানে শেষ উইকেটটি হারিয়ে ফেলে জিম্বাবুয়ে। ৫৩ বল বাকি থাকতে ২০৩ রানে অলআউট হয় তাঁরা। আর এর মধ্য দিয়ে আরেকটি আক্ষেপময় মুহূর্তের সাক্ষী হয় বুলাওয়ের গ্যালারি।
প্রতাপ দিয়ে শুরু, আক্ষেপ, আফসোসে প্রস্থান। বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে জিম্বাবুয়ের গল্পটা শেষমেশ এমন হৃদয়ভাঙ্গা মুহূর্ত দিয়েই শেষ হলো। যে মুহূর্তটা বড্ড তিক্ততায় পূর্ণ, বিষাদে আচ্ছন্ন। জিম্বাবুয়ের সমর্থকদের অপেক্ষাটা বাড়ছে। ৮ বছর পেরিয়ে সেটি ঠেকতে যাচ্ছে ১২ তে। চোখ রাখতে হচ্ছে ২০২৭-এ। লেখা হবে তো রোডেশিয়ানদের বিশ্বকাপে ফিরে আসার গল্প?