কথা রেখেছেন সাগরিকা

সেদিনের সেই লালকার্ডের ক্ষতি তিনি গোল দিয়ে পুষিয়ে দিতে চেয়েছেন। কিংস এরেনায় তিনি সেটা ঠিকই করে দেখিয়েছেন।

ঢাকার বাতাসে তখনও শোকের ছায়া। তবুও পেশাদারিত্বের খাতিরে বাংলার যুবা মেয়েদের মাঠে নামা। মোসাম্মত সাগরিকার জন্যে অবশ্য ম্যাচটা ছিল প্রত্যাবর্তনের। তিনি একটা জবাব দিতে চেয়েছিলেন। ধূসর বিষন্নতাকে বুকে লালন করে সাগরিকা ঠিকই নিজের জাত চেনালেন।

সাফ অনূর্ধ্ব ২০ নারী চ্যাম্পিয়নশীপের প্রথম ম্যাচে নেপালের বিপক্ষে গোল করেছিলেন সাগরিকা। কিন্তু নেপালের মেয়েদের সাথে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েছিলেন তিনি সেই ম্যাচে। এক প্রকার প্ররোচিত হয়েই ঝামেলায় জড়িয়েছিলেন তিনি। এরপর যথারীতি শাস্তিস্বরুপ রেডকার্ড দেখেন সাগরিকা।

শাস্তির মাত্রা বাড়ে তিন ম্যাচের জন্যে নিষিদ্ধ হলে। মনে মনে একটা আগুন ঠিকই পুষে রেখেছিলেন সাগরিকা। এই নেপালের বিপক্ষে প্রত্যাবর্তনের ম্যাচে তিনি সেই আগুনে ভষ্ম করলেন অতিথি মেয়েদের। গুণে গুণে চার খানা গোল আদায় করেন সাগরিকা।

এবারের সাফ অনূর্ধ্ব ২০ নারী চ্যাম্পিয়নশীপের এক অঘোষিত ফাইনালে মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ ও নেপালের মেয়েরা। বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল স্রেফ ড্র। আর নেপাল জিততে পারলেই করবে শিরোপা উৎসব। তবে নেপালের মেয়েদের সেই স্বপ্নকে মাটি চাপা দিয়েছেন সাগরিকা একা হাতে।

ম্যাচের সপ্তম মিনিটেই গোলের ঠিকানা খুঁজে নেন সাগরিকা। নেপালের মেয়েদের ঘুরে দাড়ানোর কোন সুযোগই দিতে চাননি বাংলাদেশের ‘নাম্বার টেন’। তাইতো দ্বিতীয়ার্ধে তিনি করে বসেন হ্যাটট্রিক। ৫০, ৫৬ ও ৭৬ মিনিটে তিনি গোল করে আরও তিনটি।

সব মিলিয়ে চারটি গোল সাগরিকার নামের পাশে যুক্ত হন। নিজের কথা তিনি অন্তত রাখতে পেরেছেন। সেদিনের সেই লালকার্ডের ক্ষতি তিনি গোল দিয়ে পুষিয়ে দিতে চেয়েছেন। কিংস এরেনায় তিনি সেটা ঠিকই করে দেখিয়েছেন। গেল আসরে যে শিরোপা ভাগাভাগি করতে হয়েছিলেন ভারতের সাথে, সেই শিরোপাকে একান্ত বাংলাদেশের করতে নিজেকে উৎসর্গ করেছেন সাগরিকা।

তার দৃঢ়তা আর মনোবল যেন সাত সাগর সমান বিশাল। তার নামের যথার্থতাই তিনি প্রমাণ করেছেন। লাল-সবুজের জার্সিতে এবারে সাফে আটখানা গোলে তিনি শেষ করলেন টুর্নামেন্ট। মাঝের ম্যাচগুলো খেললে নিশ্চয়ই তিনি বনে যেতে পারতেন টুর্নামেন্ট সেরা গোলস্কোরার। সেসব ছাপিয়ে দলকে শিরোপা জেতাতে পেরে নিশ্চয়ই দারুণ খুশি সাগরিকা। তার হৃদয় জুড়ে নিশ্চয়ই দোলা দিয়ে গেছেন উচ্ছ্বাসের ঢেউ।

Share via
Copy link