‘নরম’ সাজেদুলের সরব আন্তর্জাতিক যাত্রা

‘কিরে সাজিদ এবার বিপিএলে নাই তুই? আম্পায়ার কিন্তু নরম-টরম হলে হবে না।’ ঘটনাটা ২০২৩ সালের। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের নবম আসর তখন চলমান। ফরচুন বরিশালের অনুশীলনে সাকিব আল হাসান ব্যস্ত। এর মাঝেই সেখানে হাজির হয়েছিলেন তার পুরনো সতীর্থ সাজেদুল ইসলাম।

এক সময়ে একসাথে ক্রিকেট খেলেছেন সাজেদুল ও সাকিব। আম্পায়ার বনে যাওয়া সাজিদকে তাই সাকিব দিয়েছেন উপদেশ যে নরম হওয়া যাবে না। সেই সাজেদুল ইসলাম এখন বনে গেছেন আন্তর্জাতিক আম্পায়ার। এই দফা অন্তত তার নমনীয় হওয়ার নেই কোন সুযোগ। সেই সাথে নিষ্ঠাবান তো হতেই হবে।

নিতান্তই এক সাধারণ ঘটনা বলে মনে হচ্ছে নিশ্চয়ই। তবে না সাজেদুলের আন্তর্জাতিক আম্পায়ার হিসেবে পদার্পণ করাটা খুব একটা সাধারণ বিষয় নয়। তিনি যে বাংলাদেশ ক্রিকেট ইতিহাসের এক নতুন অধ্যায় বনে গেলেন। দ্বিতীয় টেস্ট ক্রিকেটার হিসেবে আন্তর্জাতিক আম্পায়ারিং করবার সুযোগ পেলেন তিনি।

এই তো ক’দিন আগে শরফুদ্দৌলা ইবনে শহীদ সৈকত আইসিসির ‘এলিট প্যানেল’ আম্পায়ার হিসেবে যাত্রা শুরু করলেন। প্রথম বাংলাদেশী আম্পায়ার হিসেবে মর্যাদার সেই জায়গায় পৌঁছেছেন সৈকত। এরপরই সাজেদুল ইসলামের নবযাত্রার পথচলা শুরু। এনামুল হক মনির পর দ্বিতীয় টেস্ট ক্রিকেটার হিসেবে সাজেদুল আম্পায়ারিংকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন এবং আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অবধি পৌঁছে গেছেন।

সাজেদুল ইসলাম বাংলাদেশের হয়ে তিনটি টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন। ২০০৮ সালে ৪ জানুয়ারি ডানেডিনে অভিষেক ঘটে তার। তিন টেস্টে তিন উইকেটেই থমকে গিয়েছিল তার টেস্ট ক্যারিয়ার। এরপর অবশ্য একটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচও খেলেছিলেন তিনি। সেই ম্যাচ এই অলরাউন্ডার ছিলেন উইকেট শূন্য।

ঘরোয়া ক্রিকেট অবশ্য তিনি খেলেছেন দীর্ঘ সময় ধরেই। সেই ২০০৫ সালের দিকে যাত্রা শুরু করে ২০১৯ অবধি খেলে গেছেন। এরপরই মূলত আম্পায়ার হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ক্রিকেট ছেড়ে বহুদূরে থাকতে তিনি চাননি। তাছাড়া বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আম্পায়ারিং বেজায় কঠিন এক চ্যালেঞ্জ। কেননা প্রতিনিয়ত বিতর্ক জাপ্টে ধরে। সে প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই এসেছেন সাজেদুল।

একটিমাত্র প্রথম শ্রেণি ম্যাচে আম্পায়ারিং করবার সুযোগ হয়েছিল তার। তবে লিস্ট এ ক্রিকেটে ১৪টি ম্যাচে তিনি ম্যাচ পরিচালনার গুরুদায়িত্ব নিয়ে মাঠে নেমেছেন। এরপরই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। বাংলাদেশ ও ভারত নারী দলের মধ্যেকার টি-টোয়েন্টি সিরিজ দিয়ে যাত্রা শুরু করলেন তিনি।

এর আগে ভারতীয় নারী দলের সদস্যরা বাংলাদেশের আম্পায়ারদের প্রতি অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছিলেন। তাইতো দেশীয় আম্পায়রদের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধানের দায়িত্ব নিয়েই তিনি নেমেছিলেন মাঠে। তাতে বেশ ভালই করেছেন তিনি। খেলোয়াড়দের মাঝে অসন্তুষ্টি ফুটে ওঠেনি। এখন স্রেফ সাজেদুলের দৃঢ়তার সাথে এগিয়ে যাওয়ার পালা। সাকিবের উপদেশ মেনে হতে হবে কঠোর অবশ্যই তা নৈতিকতার পক্ষে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link