আগাগোড়া আভিজাত্যের অগ্রনায়ক

জামনগরে থাকতেন সেলিম দুরানি। জামনগরেরই তো ছিলেন আরেক কিংবদন্তি- রণজিৎ সিংজি। রণজিৎ সিংজিরও মৃত্যুদিন। জামনগরের আরেক প্রিন্স সেলিম দুরানিরও প্রয়াণও একইদিনে। ২৮ বছর বাদে ভারতের বিশ্বজয়ও এদিনেই - দুই এপিলে। একে সমাপতন ছাড়া আর কীইবা বলা যাবে!

আসিফ ইকবাল বললেন, ‘ভেরি স্যাডেন্ড টু হিয়ার অ্যাবাউট সেলিম পাসিং অ্যাওয়ে।’ ওয়েস্ট ইন্ডিজের এক বর্ষীয়ান সাংবাদিক বললেন, ‘হোয়েন দুরানি কেম টু দ্য ওয়েস্ট ইন্ডিজ ইন ১৯৭১, আই ওয়াজ নাইন ইয়ার্স ওল্ড অ্যাট দ্যাট টাইম।’

বিখ্যাত সাংবাদিক রাজদীপ সারদেশাই টুইট করলেন, ‘স্যাড নিউজ! দ্য ওয়ান অ্যান্ড ওনলি প্রিন্স সেলিম অফ ইন্ডিয়ান ক্রিকেট…মাই লেট ফাদার্স লাইফ লং রুমি অন আ হিস্টোরিক টুর অফ ১৯৭১…।’ সকাল সকাল বিয়োগান্তক খবর ভাল লাগে না। এসব দেখে শুনে মনে পড়ছিল, বছর তিনেক আগের এক ঘটনা।

সেদিন ছিল ১১ ডিসেম্বর। শুক্রবার। প্রিন্স সেলিমের জন্মদিন। দু’ দিন আগে রটে গিয়েছিল তিনি মারা গিয়েছেন। মৃত্যুর দু’দিন পরে সশরীরে জন্মদিন পালিত হয়েছিল!এমন অদ্ভূতুড়ে কাণ্ডই ঘটেছিল সেলিম দুরানিকে নিয়ে।

ফেলে আসা ক্রিকেটজীবনে খেয়ালখুশি মতো হাঁকাতেন ছক্কা। ৮৬ বছরের জন্মদিনেও দেখা গিয়েছিল সেই মেজাজ। মৃত্যুর ভুয়ো খবরকেই পাঠিয়ে দিয়েছিলেন জীবনের বাইরে, সোজা গ্যালারিতে।

যদিও জন্মদিন পালনের মতো মনের অবস্থা তখন ছিল না তাঁর পরিবারের। গত বেশ কয়েক বছর ধরে ভাগ্নী ফাজিয়া লালার সঙ্গে জামনগরের বাড়িতেই থাকতেন সেলিম দুরানি। ভাগ্নীই দেখাশুনা করতেন। সেই ভাগ্নী মারা গিয়েছিলেন। শোকের আবহ ছিল। সেই অবস্থায় জন্মদিনে হইচই একেবারেই চাননি প্রবীণ ক্রিকেটার। বলেছিলেন, ‘এই বয়সে আর কীসের জন্মদিন! সেলিব্রেট করার জন্য তো পকেটে পয়সা থাকা জরুরি!’

নিছক পরিসংখ্যানে প্রিন্স সেলিমকে মাপা মুশকিল। তারকার গ্ল্যামার জড়িয়ে ছিল তাঁর ক্রিকেটে। সুদর্শন ক্রিকেটার পা রেখেছিলেন বলিউডেও। ১৯৭৩ সালে করেন ‘চরিত্র’ নামের সিনেমা। পরভিন ববি ছিলেন নায়িকা। সেই শুরু, সেই শেষ। আর সিনেমা করেননি।

শেষের দিকে দিন চলছিল বোর্ডের দেওয়া পেনশনের টাকায়। জামনগরের বাড়ির সদস্যসংখ্যা সাত। বাড়ির চেহারা নেহাতই আটপৌরে। ক্রিকেটারসুলভ চটক নেই একটুও। নেই কোনও গাড়ি। যাতায়াত করতেন শেষ বয়সে অটোরিকশায়।

যেখানে শুধু আইপিএল খেলেই ক্রিকেটারদের জীবনযাত্রায় ঘটেছে আমূল বদল, গাড়ি-বাড়ি-ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স, সেখানে ২৯ টেস্ট খেলা ক্রিকেটার চড়তেন অটো। সেলিম দুরানি অবশ্য এই সব নিয়ে মুখ খুলতেই রাজি ছিলেন না। কখনওই কারও কাছে সাহায্যের জন্য যাননি। সৌরাষ্ট্র ক্রিকেট সংস্থার কাছেও সাহায্যের দরবার করেননি।

সৌরভ গাঙ্গুলি বোর্ড প্রেসিডেন্ট ছিলেন তখন। নিজে বাঁ হাতি বলে সৌরভের উপরে দুর্বলতাও হয়তো ছিল। নইলে বলবেন কেন, ‘বোর্ড ক্রিকেটারদের জন্য অনেক কিছু করেছে। অনেক সুবিধা দিয়েছে। আমরা পেনশন পাচ্ছি। তবে পুরনো ক্রিকেটারদের আরও সাহায্য করা দরকার। বাচ্চারা বড় হয়ে গিয়েছে। তাদের পড়াশোনার জন্য অনেক খরচও হয়েছে। তবে সৌরভ এখন বোর্ড প্রেসিডেন্ট। নিশ্চয়ই ক্রিকেটারদের পাশে আরও বেশি করে থাকবে বোর্ড। আমার সেই বিশ্বাস রয়েছে।’

সাহায্য প্রার্থনা নয়, বরং গলার স্বরে মিশেছিল আভিজাত্য।

জামনগরে থাকতেন সেলিম দুরানি। জামনগরেরই তো ছিলেন আরেক কিংবদন্তি- রণজিৎ সিংজি। রণজিৎ সিংজিরও মৃত্যুদিন। জামনগরের আরেক প্রিন্স সেলিম দুরানিরও প্রয়াণও একইদিনে। ২৮ বছর বাদে ভারতের বিশ্বজয়ও এদিনেই – দুই এপিলে। একে সমাপতন ছাড়া আর কীইবা বলা যাবে!

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...