ইংল্যান্ডের ইনিংসে শেষ ঝড়টা এসেছিল তাঁর ব্যাট থেকে। আবার আজকের ম্যাচে বাংলাদেশের সেরা বোলারটিকে এক মুহূর্তের মধ্যে ম্লান করে দিয়েছিলেন তিনিই। এরপর মিনিট ত্রিশ না পেরোতেই এবার বল হাতে রুদ্রমূর্তি ধারণ। তাঁর পেস আক্রমণে নীল হয়েছে লিটন আর শান্তর ব্যাট। দু’জনকে শূন্য রানে ফেরানোর পর আরেক নির্ভরযোগ্য ব্যাটার মুশফিককেও ফিরিয়েছেন দ্রুতই। ব্যাস! বাংলাদেশের টপ অর্ডার গুড়িয়ে দিয়েছেন ওখানেই।
এই দৃশ্যপটটার ব্যপ্তি বেশি নয়। সব মিলিয়ে ঘন্টা খানেক মতো হবে। কিন্তু পুরো ম্যাচে একক আগ্রাসন কিংবা আধিপত্যের চিত্রটা যেন এ টুকু সময়ের মধ্যেই ফুটে উঠেছে। আর এ দৃশ্যপটের নায়ক হচ্ছেন ইংলিশ অলরাউন্ডার স্যাম কারেন। এই মহূর্তে কেন তিনি সাদা বলের ক্রিকেটে হটকেক তার জন্য সম্ভবত এই এক ম্যাচের পারফরম্যান্স সামনে আনলেই হচ্ছে।
ইংল্যান্ডের ইনিংসে যখন তিনি ব্যাট হাতে নামছেন তখন আর ৩৮ টা বল অবশিষ্ট রয়েছে। ইংল্যান্ড তখন পর্যন্ত ৩০০ এর পথেই ছিল। স্যাম কারেন সেই সংগ্রহটাকে আরেকটু বাড়িয়ে নিতে চাইলেন। কিন্তু এর মধ্যেই আবার দারুণ ব্যাট করতে থাকা মইন আলী আউট হয়ে ফিরে গেলেন। অগত্যা সেই দায়িত্বটা নিজের কাঁধেই তুলে নিতে হলো।
শুরুটা করলেন মুস্তাফিজকে একটা ছক্কা আর চার মেরে। এরপর তখন পর্যন্ত দিনের সেরা বোলার তাসকিন আহমেদকে টার্গেট করলেন। ইনিংসের শেষ ওভারে তাসকিনের টানা দুই বলে মারলেন দুই ছক্কা। আর ওতেই এক লাফে ইংল্যান্ডের দলীয় সংগ্রহ গিয়ে দাঁড়ালো ৩২৬ এ। দুই চার আর তিন ছক্কায় স্যাম কারেন তাঁর ইনিংসটা সাজালেন ১৯ বলে ৩৩ রানে।
স্যাম কারেন পুরোদস্তুর ব্যাটার নন। তাঁর মূল কাজটা বোলিংয়ে। তবে বল হাতে শুরুতেই যে তিনি ভয়ংকর হয়ে উঠবেন কে জানতো! হয়তো ব্যাট হাতে আগ্রাসনের রেশটা বোলিং পর্যন্তও রাখতে চেয়েছিলেন। ৩২৭ রানে লক্ষ্যে বাংলাদেশি ব্যাটাররা শুরু থেকেই চড়াও হবে, এমন আশঙ্কা নিয়েই ইনিংসের প্রথম ওভারে বলে গেলেন।
এবারেও দৃশ্যপটে নায়ক স্যাম কারেন। যা পাল্টেছে তা হলো শুধু তাঁর ভূমিকা। বল হাতে শুরুর ওভারেই টানা দুই বলে ফেরান লিটন দাস আর নাজমুল হোসেন শান্তকে। স্যাম কারেন তখন হ্যাটট্রিকের সামনে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হলো না। কারেনকে হ্যাটট্রিক বঞ্চিত করলেন মুশফিক। তবে সে যাত্রায় মুশফিক বেঁচে গেলেও কারেনের পরের ওভারে আর রক্ষা পাননি। স্যাম কারেনের দুই ওভারের বিধ্বংসী স্পেলে বাংলাদেশের তখন ৯ রানে নেই ৩ উইকেট।
বাংলাদেশ এরপর আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি। ১৯৪ রানেই শেষ হয়ে যায় বাংলাদেশের ইনিংস। ইনিংসের শুরুর মতো শেষ আঘাতটাও হানেন স্যাম কারেন। সব মিলিয়ে ২৯ রান খরচায় ৪ উইকেট নিয়েছেন তিনি।
আগের ম্যাচে ইংল্যান্ডের একাদশে ছিলেন না স্যাম কারেন। ইংল্যান্ডের হয়ে সবচেয়ে কম ম্যাচ খেলেছেন এই ওয়ানডে ফরম্যাটেই। কিন্তু স্যাম কারেনরা যে কোনো পরিস্থিতিতে পারফর্ম করতে জানেন। তাই স্পিন সহায়ক উইকেটেও নিজের পেস আর সুইং দিয়ে আগুনঝরা বোলিং করেছেন। আবার ব্যাট হাতে দুর্দান্ত একটা ক্যামিও খেলেছেন। সাদা বলের ক্রিকেট বাজার এমনিতেই তো চাহিদার শীর্ষে থাকেন না এই অলরাউন্ডার! বলে রাখা ভাল, আইপিএলের ইতিহাসের সবচেয়ে দামী ক্রিকেটার কিন্তু এই স্যাম কারেন!