ব্যাট হাতে মাহমুদুল হাসান জয় ছিলেন প্রতিশ্রুতির প্রতিমূর্তি। অথচ সময় যত গড়িয়েছে, প্রতিশ্রুতির সেই পোস্টার এখন কুঁচকে যাচ্ছে বাস্তবতার রুক্ষ দেয়ালে।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে চলমান সিরিজ শুরুর আগে জয় সর্বশেষ খেলেছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে চারটি টেস্ট ম্যাচ। আট ইনিংসে রান মাত্র ১০৫, গড় ১৩.১২। অথচ, সেই পরিসংখ্যান নিয়েই আবার একাদশে নাম লেখালেন তিনি। সিলেটেও আউট—চেনা ভঙ্গিতে, চেনা ভুলে, ১৪ রান করে। এখন সবশেষ ৯ ইনিংসে তাঁর গড় ১৩.২২, রান মোটে ১১৯।
ব্যাটিংয়ের এই ভয়াবহ ধস নিয়েও যদি কেউ প্রশ্ন তোলে না, তাহলে সেটাকে আর কী বলবেন—অন্ধ বিশ্বাস, নাকি অদক্ষতা? পুরনো একটা কথা নতুন করে বলতে হয় – ভুল থেকে যে শেখে না, তাঁর পতন অনিবার্য।
এই ব্যাটার গত নয় ইনিংসে আটবার আউট হয়েছেন পেছনে ক্যাচ দিয়ে। প্রতিবারই শরীরের বাইরে বল তাড়া করে, প্রতিবারই এজ, প্রতিবারই ব্যর্থতা। ব্যাটিং কোচদের চোখে কি এই প্রবণতা ধরা পড়ে না? নাকি ধরা পড়ে, কিন্তু তাঁরা জানেন, শোধরানোর দায়টা জয় কখনও নেবেন না?
স্রেফ ‘প্রতিভাবান’ তকমাই কি জয়ের ঢাল? প্রতিভা কোনো বর্ম নয়, যে সেটি পরে বারবার উইকেট ছুড়ে দিয়েও দলে জায়গা পাকা রাখা যায়।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে হোম সিরিজে ফিরলেন চোট কাটিয়ে। তারপর ক্যারিবিয়ান দ্বীপে গিয়ে সেই একই ভুল, আবার এজ, আবার ক্যাচ, দুই ইনিংস মিলিয়ে করলেন ১৪ রান। মাঝখানে পাঁচ মাস সময় ছিল, একটু নতুন করে ভাবার। নিজের ভুল শুধরে নতুন করে শুরু করার। কিন্তু, প্রতিভাবান জয়কে সেই তাড়ণা দিয়েছে কে?
আর এটাতেই সবচেয়ে বড় প্রশ্নটার জন্ম হয়। দলের দরজা কি শুধুই নির্বাচকদের নিজস্ব সিন্ডিকেটের জন্য বরাদ্দ? ঘরোয়া ক্রিকেটে পারফর্ম করলেও কেন অনেক নাম রয়ে যাচ্ছে বঞ্চিতের খাতায়।
জাতীয় লিগে অমিত মজুমদার, এনামুল হক বিজয়, ইফতিখার হোসেন ইফতি প্রচন্ড ধারাবাহিক ছিলেন। কিন্তু স্কোয়াডে জায়গা হয় সেই জয়, যিনি টানা ৯ ইনিংসে রান না পেলেও, একই ভুলে একইভাবে আউট হলেও, কোনো প্রতিযোগিতা ছোঁয়াও লাগে না তাঁর গায়ে।
এটা দল নির্বাচন নয়, এটা যেন দৃষ্টিশক্তিহীন এক আনুগত্য। এইরকম নির্বাচনী প্যাটার্ন দলের ভেতরে যেমন ভাঙন ধরে, তেমনি ভুল বার্তা পাঠায় তাঁদের জন্য যারা দলের বাইরে থেকে লড়াই করছেন।
ভবিষ্যত কে বলতে পারে! কিন্তু, বর্তমান বলে – জয়ের ব্যাটিং এখন আর কোনো সম্ভাবনার গল্প বলে না। এই টানা ব্যর্থতার প্রতিধ্বনি থামাতে না পারলে আরও অনেক ‘যোগ্য’ ক্রিকেটারকেই খেসারত দিতে হবে। আর সেটা হলে, নির্বাচকরাও বাঁচাতে পারবেন না দলকে!