তবে কি আবার ভারত জিততে চলেছে বিশ্বকাপ? ভারতের কেরালা প্রদেশের ক্রিকেটে একটা কথা বেশ প্রচলিত আছে- ভারত বিশ্বকাপ জিতবে যদি দলে কোন মালায়ালি ক্রিকেটার থাকবেন। ১৯৮৩ সালে দলে ছিলেন সুনীল ওয়াসন। এরপর ২০১১ সালে যখন আবারও বিশ্বকাপ জিতল ভারত, তখন দলে ছিলেন শান্তাকুমারান শ্রীশান্ত।
শুরুতে করা প্রশ্নের পেছনে অবশ্য রয়েছে কারণ। কেননা বহুল প্রতীক্ষার পর সাঞ্জু স্যামসন যে পাচ্ছেন বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ। ক্রিকেট ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই নিজের প্রতিভার সাক্ষর রাখতে শুরু করেছিলেন সাঞ্জু। তার প্রতিভা নিয়ে সংশয় ছিল না কখনোই। তিনি ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিত রান করাদের একজন।
তবে জাতীয় দলের ক্ষেত্রে তিনি বরাবরই ছিলেন বঞ্চিত। তিনি কখনোই ধারাবাহিক হতে পারেননি সেখানটায়। ২০১৫ সালে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি অভিষেক ঘটে সাঞ্জুর। প্রায় ৯ বছরে মাত্র ২৫টি টি-টোয়েন্টি খেলেছেন তিনি। ওয়ানডে অবশ্য গেল তিন বছরে ১৬টি ম্যাচ খেলেছেন।
ভারতীয় নির্বাচকদের তাইতো প্রায়শই রোষানলে পড়তে হয়েছে। স্যাঞ্জুর দোষটা কোথায়? এমন প্রশ্নও উঠেছে। তবে এবার আর তেমন সমালোচনার অবকাশ নেই। কেননা সাঞ্জু স্যামসন সেই সুযোগটিই তৈরি হতে দেননি। এবারের ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে তিনি রয়েছেন দুর্দান্ত ফর্মে।
অবশ্য তিনি বরাবরই নিজের সামর্থ্যের পরিচয় দিয়ে এসেছেন। কিন্তু এবারের আইপিএল যাত্রা নিঃসন্দেহে অন্য যেকোন সময়ের থেকে আলাদা। তিনি রাজস্থান রয়্যালসকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। অধিনায়ক হিসেবে দলের সম্মুখভাগে দাঁড়িয়ে পারফরম করছেন। ১৬ পয়েন্ট নিয়ে সবার উপরে তার দল।
প্রায় ৭৭ গড়ে রান করছেন সাঞ্জু নিজেও। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩৮৫ রান করেছেন তিনি। স্ট্রাইকরেট ১৬১। সময়টা সাঞ্জু যেমন করে চাচ্ছেন তেমন করেই যাচ্ছে যেন। তবে এই সময় আসবে ভেবেই পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি বেশ আগেভাগেই শুরু করেছেন তিনি। তার ব্যক্তিগত কোচ নাদারাজাপিল্লাই বিজুমন জানিয়েছেন আইপিএলকে সামনে রেখে আগে থেকেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন সাঞ্জু।
কেননা বিশ্বকাপের ঠিক আগ মুহূর্তের আইপিএল যে বেজায় গুরুত্বপূর্ণ হবে সেটা অবধারিত। হয়েছেও তাই। প্রথমবারের মত কোন বিশ্বকাপ খেলার সুযোগটা পেয়ে গেলেন স্যামসন। সে সুযোগ আদায়ের লক্ষ্যে নিজের ব্যাটিংয়েও খানিক পরিবর্তন ঘটিয়েছেন সাঞ্জু।
সে বিষয়ে তার ব্যক্তিগত কোচ বলেন, ‘আমরা তার ব্যাটিং কৌশলে কিছু ছোটখাটো পরিবর্তন করেছি। আপনি যদি এখন লক্ষ্য করেন, তার ব্যাটের সুইং পরিবর্তন হয়েছে এবং এটি আরও ফ্রি ফ্লোয়িং হয়েছে।’ তার ব্যাটিং টেকনিকে কিঞ্চিৎ পরিবর্তনের পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে থাকা অভিযোগ নিয়েও কাজ করেছেন সাঞ্জু স্যামসন।
তিনি নাকি স্পিনারদের বিপক্ষে খেলতে পারেন না। যদিও সেটা মেনে নিতে চাননা বিজুমন। এ নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি এই ধারণার সাথে একমত নই যে সাঞ্জু স্পিনারদের মোকাবেলায় ভাল নয়। কিন্তু সত্যিকারের স্লো বোলারদের বিপক্ষে অনেক সময় ধুকতে হয়েছে তাকে। সেটা মোকাবেলা করতেই তিনি এখন পা বেশি ব্যবহার করতে শুরু করেছেন।’
নিজের দূর্বলতার সমাধান করবার সাথে সাথে, তিনি নিজের অস্ত্রভাণ্ডারও সমৃদ্ধ করছেন। বিজুমন বলেন, ‘কৌশলগত দিক থেকে, তিনি নিজের অস্ত্রাগারে আরও বেশ কিছু শট যুক্ত করেছেন।’ মোদ্দা কথা আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলার উদ্দেশ্যে আদাজল খেয়েই নেমেছিলেন সাঞ্জু স্যামসন।
তবে তার একাদশে সুযোগ পাওয়ার সম্ভবানা অত্যন্ত কম। যেকোন দিন ঋষাভ পান্ত উইকেটরক্ষক ব্যাটার হিসেবে এগিয়ে থাকবেন। স্রেফ তার কিংবা দলের টপ অর্ডারের অফফর্মের বদৌলতে সাঞ্জু পেতে পারেন সুযোগ। আর একাদশে সুযোগ পাওয়া মাত্রই যে তিনি তা লুফে নিবেন, সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তিনি যে সকল প্রস্তুতি নিয়েই অপেক্ষমান।