সরফরাজ খানরা ভয় পেতে শেখেননি!

কখনও হাফ সেঞ্চুরি করেন, কোনোদিন ডাকও মারেন – কিন্তু, সর্বদা থাকেন ‘চিল’ মুডে। পাঁচ ইনিংসে তিন হাফ সেঞ্চুরি – হ্যা, সরফরাজ খান সেঞ্চুরি পাচ্ছেন না। তবে, নিয়মিত রান করে যে তিনি রীতিমত বিরাট কোহলি বা লোকেশ রাহুলদের অভাব ভুলিয়ে দিচ্ছেন – তার রহস্যটা অবশ্যই ওই চিল মুডে থাকতে পারার সামর্থ্যই।

আর এই সামর্থ্যটাই গড়ে দেয় ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেট। ভারত প্রতিভার এক বিরাট সাগর। সেটা সব ক্ষেত্রের জন্যই সত্য। বিশ্বের নামি দামি সব প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীর পদে হয় আছেন ভারতীয়, না হয় কোনো ভারতীয় বংশদ্ভুত।

প্রতিভার এই কথাটা ক্রিকেটের ক্ষেত্রেও খাটে। ভারতে ক্রিকেটারদের বিরাট একটা খনি আছে। আর দেশটির ক্রিকেট কাঠামোটাই এমন যে – সেখানে প্রতিভার কোনো কমতি কখনওই হয়নি।

নিজেদের সেট আপে যা ক্রিকেটার আছে, তা দিয়ে ভিন্ন ভিন্ন ফরম্যাটের জন্যও চাইলে একাধিক দল বানিয়ে ফেলতে পারে ভারত। আর সেটা বাদ দিলেও আইসিসি সহযোগী দেশ গুলোর দিকে তাকালে দেখবেন – সেখানে বিস্তর ভারতীয় বংশদ্ভুত ক্রিকেটার খেলে থাকেন।

মানুষ যত বেশি, প্রতিভাও তত বেশি হবে। এমন কথা চাইলে বলাই যায়। কিন্ত, তাতে ভারতীয় ক্রিকেট কাঠামোকে ছোট করার বিন্দু মাত্র কোনো সুযোগ নেই। বলা যায়, বিশ্বের অন্যতম সেরা ঘরোয়া ক্রিকেট কাঠামো এই ভারতের।

ভারতে রঞ্জি ট্রফি ছাড়াও একাধিক প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট চালু আছে। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) ছাড়াও অনেক রকম ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট হয়। ভারতের তামিল নাড়ু বা কর্ণাটকে যে মানের ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট হয় সেটা অন্য অনেক দেশের মূল ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট থেকে এগিয়ে থাকবে।

বলা যেতে পারে, ভারতে ক্রিকেট একটা প্রার্থনার মত কিংবা উপাসনার মত। কিংবা, ভারত ক্রিকেটের বিরাট একটা বাজার। সেখানে ক্রিকেটে ভোক্তা কিংবা উৎপাদনদাতা দুই-ই বেশি। আর এই ব্যবসাটাকে খুবই ইতিবাচক ভাবে ধরতে পেরেছে বোর্ড অব কনট্রোল ফর ক্রিকেট ফর ইন্ডিয়া (বিসিসিআই)।

ফলে, বিরাট একটা সাপ্লাই-চেইন দাঁড় করানো গেছে। আইপিএল ভারতের টি-টোয়েন্টি দলে খেলোয়াড় যোগান দেয়। আইপিএলকে খেলোয়াড় যোগান দেয় সৈয়দ মুশতাক আলী ট্রফি কিংবা প্রাদেশিক ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টগুলো। এছাড়া স্কাউটিং তো আছেই।

অন্যদিকে, একই কথা খাটে টেস্টের ক্ষেত্রেও। সেখানে রঞ্জি থেকে আসে টেস্ট দলের খেলোয়াড়। রঞ্জি দলগুলোতে জায়গা পেতে চলে বিরাট হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। আর এরও নিচের স্তরে রাখা যেতে পারে দুলীপ ট্রফিকে। সেখানেও সুযোগ পাওয়া মুখের কথা নয়। আর শহরে শহরে স্থানীয় ক্লাব ক্রিকেট বা স্কুল ক্রিকেটের কথা তো বাদই দিলাম।

কাঠামো এমন প্রকাণ্ড ও বিস্তর ডালপালা মেলা থাকলেই – সেখান থেকে বের হয়ে আসেন একজন শচীন টেন্ডুলকার, একজন বিরাট কোহলি কিংবা একজন জাসপ্রিত বুমরাহ। এজন্যই তো সরফরাজ খানরা রঞ্জিতে বছরের পর বছর রান করার পর হাজারো আলোচনার পর জায়গা পান টেস্ট দলে।

আর জায়গাটা পেয়ে যখন খেলতে নামেন তখন তাঁদের চলনবলন দেখলেই বোঝা যায় – এই মঞ্চ তাঁর জন্য নতুন নয়। এই মানসিকতাটা ঘরোয়া ক্রিকেট থেকে নিয়ে তবেই এসেছেন আন্তর্জাতিক ময়দানে।

লেখক পরিচিতি

সম্পাদক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link