ঘরোয়া ক্রিকেটের বাঘ, জাতীয় দলে ব্রাত্য

ঘরোয়া ক্রিকেটে দিনের পর দিন নিজেদের প্রমাণ করার পরও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার সুযোগ পাননা অনেক ক্রিকেটারই।

ঘরোয়া ক্রিকেটে ভাল করলে, তবেই জায়গা মেলে জাতীয় দলে – এই কথাটা না বলে দিলেও চলে। আবার এটাও সত্যি যে, ঘরোয়া ক্রিকেট আর আন্তর্জাতিক মঞ্চের মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য। তাই, তো ঘরোয়া ক্রিকেটে দিনের পর দিন নিজেদের প্রমাণ করার পরও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার সুযোগ পান না অনেক ক্রিকেটারই।

  • জেমি কক্স (অস্ট্রেলিয়া)

নব্বই দশকের শেষের দিকে কিংবা এরপরেও অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং লাইন আপে জায়গা করে নেওয়াটা ছেলের হাতের মেয়া ছিল না। তাই তো, শেফিল্ড শিল্ডের ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক (১০,৮২১) হয়েও অস্ট্রেলিয়ার হয়ে কখনো খেলতে পারেননি জেমি কক্ক। অথচ, ৫১ টি সেঞ্চুরি-সহ প্রথম শ্রেনি ক্রিকেটে আঠারো হাজারের ওপর রান করেন তিনি।

যাকে জাতীয় দলে নেননি নির্বাচকরা, সেই কক্সই পরে নির্বাচক বনে যান। তিনি একবার বলেন, ‘আমাকে এক যুগ ধরে নির্বাচকরা হতাশ করেছে। আমি মনে করি, সেই ঘটনাই আমাকে নির্বাচক হিসেবে সবচেয়ে শক্ত করেছে।’

  • ফরহাদ হোসেন (বাংলাদেশ)

প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে সাত হাজারের ওপর রান করেছেন, এমন বাংলাদেশির সংখ্যা মাত্র আটজন। তাদের একজন হয়েও কখনো জাতীয় দরে খেলেননি ফরহাদ হোসেন। ২০০৮-৯ থেকে ২০১১-১২ মৌসুম – টানা চারবার জাতীয় ক্রিকেট লিগ জিতে রাজশাহী বিভাগ। তখন দলের ব্যাটিংয়ের অন্যতম শক্তির জায়গা ছিলেন এই ফরহাদ।

জাতীয় দলের খুব কাছাকাছি একবার এসেছিলেন। কিন্তু, ‘এ’ দলের হয়ে দু’টি বাজে ম্যাচের পরই তাঁর জন্য জাতীয় দলে ঢোকার রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। তবে, এটা সত্যি যে স্লিপে তাঁর মত তুখোড় ফিল্ডার এখনো আসেনি বাংলাদেশ ক্রিকেটে।

  • ডন শেফার্ড (ইংল্যান্ড)

ইংলিশ কাউন্টির ইতিহাসে প্রকাণ্ড এক ক্রিকেটার হলেন এই ওয়েলশ। মিডিয়াম ফাস্ট বোলার থেকে অফ স্পিনার বনেছেন। গ্লামারগনের হয়ে খেলেছেন দুই দশকেরও বেশি সময়। ৬৬৮ টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলে পেয়েছেন ২২১৮ উইকেট। ভাবা যায়?

শেফার্ড নিজের দিনে কতটা বিভীষিকাময় হয়ে উঠতে পারেন সেটা বুঝেছিল অস্ট্রেলিয়া দল। ১৯৬৪ সালে সোয়ানসিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এক অনুশীলন ম্যাচে একাই ৬৯ ওভার বোলিং করে ৯৩ রান দিয়ে নিয়েছিলেন নয় উইকেট।

  • অমল মজুমদার (ভারত)

অমল যখন তাঁর ক্যারিয়ারের সেরা সময়ে ছিলেন, তখন টেস্টে ভারতের মিডল অর্ডারে ছিলেন রাহুল দ্রাবিড়, শচীন টেন্ডুলকার, ভিভিএস লক্ষ্মণ, সৌরভ গাঙ্গুলি। এর একটু আগেই ছিলেন আজহারউদ্দিন। কখনোই তাঁর অপেক্ষার প্রহরটা শেষ হয় নি, সেটা রঞ্জি ট্রফির ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক (৯২০২) হওয়ার পরও।

একটা গল্প না বললেই নয়, শচীন আর বিনোদ কাম্বলি যখন স্কুল ক্রিকেটে ৬৬৪ রানের পাহাড়সমান রানের জুটি গড়েন, তখন ড্রেসিংরুমে ব্যাট-প্যাড পরে এক ছোকড়া বসে ছিলেন, অপেক্ষায় ছিলেন। তিনি হলেন এই অমল মজুমদার। সেই ক্ষুদে বয়সেই তাঁকে যেন বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছিল, এই লাইমলাইট তোমার জন্য নয়!

  • সাঈদ বিন নাসির (পাকিস্তান)

৪০ জন পাকিস্তানি ব্যাটসম্যান প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ১০ হাজারের ওপর রান করেছেন। এদের মধ্যে মাত্র দু’জন খেলতে পারেননি জাতীয় দলে। তাদের একজন এই সাঈদ বিন নাসির। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ২১ টি মৌসুমে তিনি ১১,০২৫ রান করেন।

২০০৩ সালে বাজে একটা বিশ্বকাপ কাটায় পাকিস্তান। দেশের মাটিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজের দলে ডাক পান নাসির। কিন্তু, কোনো ম্যাচ খেলা হয়নি।

  • জোহান মাইবার্গ (দক্ষিণ আফ্রিকা)

জাতীয় দলের ওপেনার তখন গ্যারি কার্স্টেন ও হার্শেল গিবস। অপেক্ষায় আছেন তরুণ গ্রায়েম স্মিথ। নর্দান্স দলের সতীর্থ জ্যাক রুডলফ দুই দফায় দক্ষিণ আফ্রিকা দলে খেললেও, মাইবার্গের সুযোগ কখনো আসেনি। ১০৮ টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ, ১১৮ টি লিস্ট ‘এ’ ম্যাচ খেলেছেন তিনি।

প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ব্যাটিং গড় ৪১-এর কাছাকাছি। ৯২ টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ১৩০ স্ট্রাইক রেটে ব্যাটিং করেছেন। কে জানে, ক্যারিয়ারের স্বর্ণালী সময়ে টি-টোয়েন্টির জনপ্রিয়তা আজকের মত হলে হয়তো প্রোটিয়াদের হয়ে খেলেও ফেলতেন।

  • সাজিথ ফার্নান্দো (শ্রীলঙ্কা)

খুব কাছে, তবুও দূরে – সাজিথের গল্পটা এমনই। নব্বই দশকের মধ্যবর্তী সময়টা ছিল তাঁর ক্যারিয়ারের সবচেয়ে ভাল সময়। কিন্তু, জায়গা পাবেন কি করে, তখন যে লঙ্কান দলে রাজ করছে ‘ক্লাস অব ৯৬’। ১৯৯৯ বিশ্বকাপ শেষে তাদের অনেকেই যখন অবসরে চলে গেছেন, তখন সুযোগ দেওয়া যেতে পারতো সাজিথকে। কিন্তু, নির্বাচকদের মনে হয়েছিল তাঁর বয়সটা একটু বেশিই হয়ে গেছে।

অথচ, শ্রীলঙ্কা ছাড়াও ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ায় খেলা সাজিথ প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ১০,৭০০ রান করেছেন। অফ স্পিন বোলিংয়ে ২৬৯ উইকেট পেয়েছেন। আজকের দিনে এমন একজন ‘ইউটিলিটি’ ক্রিকেটার পেলে বর্তে যায় শ্রীলঙ্কা।

  • ফ্র্যাঙ্কলিন স্টিফেনসন (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)

দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে বিদ্রোহী সফরে না গেলে হয়তো স্টিফেনসন আশির দশকের সেরা অলরাউন্ডারদের একজন হয়ে যেতেন। তিনি স্যার গ্যারি সোবার্সের উত্তরসূরি। ১৯৮৮ সালে নটিংহ্যাম্পশায়ারে যোগ দিয়েছিলেন স্বয়ং স্যার রিচার্ড হ্যাডলির বদলি হয়ে।

২১৯ টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ ও ২৮২ টি লিস্ট ‘এ’ ম্যাচ খেলেন তিনি। সব মিলিয়ে ১৩ হাজারের বেশি রান ও সাড়ে ১২০০ উইকেট পান এই পেস বোলিং অলরাউন্ডার।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...