হরিপদ কেরানি থুড়ি স্কট স্টাইরিশ

টপ অর্ডারে দ্রুত কয়েকটা উইকেট পড়লে ‘ক্রাইসিস ম্যান’ হিসাবে অবির্ভুত হতেন আবার বিপক্ষের বহুক্ষণ উইকেট পড়ছে না সেখানেও ব্রেক থ্রু দেওয়ার জন্য স্টিফেন ফ্লেমিং বা ড্যানিয়েল ভেট্টোরি - 'দ্য ভাইরাস' এর হাতে বল তুলে দিতে দ্বিধা বোধ করতেন না।

একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে জীবনের প্রথম উইকেট শচীন টেন্ডুলকার আর টেস্ট ক্রিকেটে জীবনের প্রথম উইকেট ব্রায়ান লারা কোন ক্রিকেটারের?

কোনো কুইজে যদি এমন কোনো প্রশ্ন আসে অনেক নামী দামি বোলারের কথা অবশ্যই সবার আগে মাথায় আসবে। কিন্তু বাস্তবে উত্তরটা হবে এমন একজনের নাম, যিনি তাঁর দেশের বড় বড় তারকাদের দলে কোনোদিনই পড়েননি। অথচ ব্যাট কিংবা বল হাতে দরকারের সময় দলকে অসংখ্যবার রক্ষা করে এসেছেন।

তিনি হলেন স্কট স্টাইরিশ। একবিংশ শতকের প্রথম দশকে কিউই লাইনআপে বিশেষত ওয়ান ডেতে যাঁর নামটা চোখ বুজে রাখতেই হতো। রাখতেই হতো কেন বলা? আসলে টপ অর্ডারে দ্রুত কয়েকটা উইকেট পড়লে ‘ক্রাইসিস ম্যান’ হিসাবে অবির্ভুত হতেন আবার বিপক্ষের বহুক্ষণ উইকেট পড়ছে না সেখানেও ব্রেক থ্রু দেওয়ার জন্য স্টিফেন ফ্লেমিং বা ড্যানিয়েল ভেট্টোরি – ‘দ্য ভাইরাস’ এর হাতে বল তুলে দিতে দ্বিধা বোধ করতেন না। হ্যাঁ, স্টাইরিশকে ‘দ্য ভাইরাস’ নামেই ডাকতেন কিউই সতীর্থরা।

ক্যারিয়ারের প্রথম দিকে যদিও ব্যাটিংটা বেশ নড়বড়েই ছিল, ৫০ তম ম্যাচে গিয়ে ব্যাটিং গড় ২০’র ওপর ওঠে, ১২৭ তম ম্যাচে গিয়ে ৩০ এর কোঠা স্পর্শ করে, তবুও মিলিটারি মিডিয়াম পেস আর ৪ বা ৫ নম্বরে নেমে লড়াকু ব্যাটিংই ছিল স্টাইরিশের পরিচয়। বড় মঞ্চে স্টাইরিস কিন্তু বেশ খেলতেন, জীবনের সেরা পারফরমেন্স বোধহয় তুলে রেখেছিলেন বিশ্বকাপের জন্যই।

জীবনের প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরি ২০০৩ বিশ্বকাপে, আর ২০০৭ বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডকে সেমিফাইনালে তুলতে বিরাট ভূমিকা নেয় স্টাইরিশের ব্যাট হাতে প্রায় ৫০০ রান ও ৭টা উইকেট। মনে আছে ভারতের মাটিতে হওয়া ২০০৩-এর টিভিএস কাপ ত্রিদেশীয় সিরিজেও দারুণ খেলেছিলেন সেবার। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ৩৩০+ রান তাড়া করতে একবার ম্যাচ জেতানো সেঞ্চুরি করেন।

টেস্ট ক্রিকেটে ব্যাট হাতে গোটা পাঁচেক সেঞ্চুরি, এমনকি টেস্ট অভিষেকে সেঞ্চুরি থাকলেও টেস্ট খেলেছেন তুলনায় যথেষ্টই কম, মূলত ওয়ানডে স্পেশালিস্ট হিসেবে কিউই দলের মূল স্তম্ভ স্টাইরিস, সমকালীন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারদের মতো নামডাক না থাকলেও কার্যকারিতায় কোনো অংশেই পিছিয়ে ছিলেন না। ক্যারিয়ারের একটা সময়ে এসে যদিও বোলিংয়ের থেকে ব্যাটিংয়েই বেশি মনযোগী হয়ে যান চোট আঘাত থেকে দূরে থাকতে।

ব্রেন্ডন ম্যাককালাম, ক্রেইগ ম্যাকমিলান, শেন বন্ড, ড্যানিয়েল ভেট্টোরি, নাথান অ্যাস্টল, ক্রিস কেয়ার্ন্স কিংবা স্টিফেন ফ্লেমিংদের মতো তারকাদের ভিড়ে স্টাইরিস কোথাও যেন কিউই দলের ‘হরিপদ কেরানি’ গোত্রের মানুষ, যিনি জানেন তাঁর সীমাবদ্ধতাগুলো। যিনি জানেন বন্ডের মতো একটা স্পেলে অস্ট্রেলিয়াকে শেষ করে দেওয়া কিংবা অ্যাস্টলের মতো ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ইংরেজদের উড়িয়ে দেওয়া সেটা তাঁর জন্য নয়।

কিংবা ক্রিস কেয়ার্ন্সের মতো একার হাতে বিপক্ষের মুখ থেকে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনাল জিতিয়ে দেওয়ার মতো মহাতারকা সুলভ ব্যাপার নেই, কিন্তু ‘বিপদে মোরে রক্ষা করো’ ব্যাপারটা চলে এলেই নাদুসনুদুস চেহারার স্টাইরিসকেই পাওয়া যাবে। যেখানে একটা ৭৭ বলে ৬৮ নট আউট কিংবা ৩৫ রানে ২ উইকেটের স্পেল ঐ ১০টা – ৫টার ডিউটির মতোই আসলে স্টাইরিসের কাছে। ‘হরিপদ কেরানি’ থুড়ি স্কট স্টাইরিশরা বুঝি সত্যিই এমনই হন!

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...