মিরপুরের মৌসুমী ফল

সপ্তাহখানেকও হয়নি শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ শেষ হলো। আবার এখনই বাংলাদেশ দলকে চলে যেতে হচ্ছে ওয়েস্ট ইন্ডিজে। লম্বা এই সফরের আগে তাই অনেক ক্রিকেটারই একটু নিজেদের মত ছুটি কাটিয়েছেন। কেউ কেউ দেশের বাইরে ঘুরতেও গিয়েছেন। তবে এই কয়দিন মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে নিয়মিত দেখা গিয়েছে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, মুনিম শাহরিয়ারদের।

টেস্ট ম্যাচ দিয়ে শুরু হচ্ছে বাংলাদেশের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর। ইতোমধ্যেই ছুটি কাটিয়ে দলের একটা অংশ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিমান ধরেছে। তবে মুনিম, সাইফউদ্দিন, রিয়াদরা শনিবারও অনুশীলন করেছেন মিরপুরে। তিনজনের কেউই অবশ্য টেস্ট দলে নেই। তবে রঙিন পোশাকে তিনজনের সামনেই আসছে কঠিন সময়।

তিনজনের কেউই অবশ্য ঠিক অল ফরম্যাট ক্রিকেটার নন। মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনকে কখনোই সাদা পোশাকের জন্য বিবেচনা করা হয়নি। আবার রিয়াদও এখন আর টেস্ট খেলছেন না। আর মুনিম জাতীয় দলে এসেছে টি-টোয়েন্টি মেজাজ নিয়েই। ফলে তিনজকেই মৌসুমী ক্রিকেটার বলা যায়। যদিও নিজেদের ফরম্যাটেও তিনজনের কেউই খুব একটা আরামদায়ক অবস্থানে নেই। তিনজনের সামনেই কঠিন সময়, প্রমাণের অপেক্ষা।

টেস্ট ক্রিকেট থেকে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ অবসর নিয়েছেন গতবছরই। ফলে বেশ অনেকদিন ধরেই খেলার মধ্যে নেই এই টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ দিয়েই আবার মাঠে ফিরবেন তিনি। এছাড়া এরপরই এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপের মত আসরগুলোতে এবছর দলকে নেতৃত্ব দিবেন তিনি। ফলে এই মুহূর্তে তাঁর গুডটাচে থাকাটা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।

যদিও টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে খুব একটা সুখকর অবস্থায় তিনি নেই। ব্যাট হাতে আর এই ফরম্যাটের মেজাজটা ধরতে পারছেন না রিয়াদ। আবার দল হিসেবেও এই ফরম্যাটে ব্যর্থতার বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে বাংলাদেশ। গত বছর বিশ্বকাপের ব্যর্থতার পর তাই এবার বেশ চাপেই থাকার কথা রিয়াদের। এটাই হয়তো নিজেকে প্রমাণের শেষ সুযোগ।

ওদিকে অনেকদিন পর ইনজুরি কাটিয়ে আবার জাতীয় দলে ফিরলেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। দীর্ঘদিন মাঠের বাইরে ছিলেন, ইনজুরির সাথে লড়েছেন। এবারের ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগ দিয়ে আবার মাঠে ফিরেছেন। নিজেকে প্রমাণ করে আবার রঙিন পোশাকের দলে জায়গা করে নিয়েছেন।

যদিও ফেলে যাওয়া জায়গাটা এই পেস বোলিং অলরাউন্ডার আর খুব সহজে পাবেন না। কেননা ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে বাংলাদেশের পেস আক্রমণ এখন বেশ গুছানো। তাসকিন, মুস্তাফিজের সাথে যোগ হয়েছেন শরিফুল ইসলামও। ফলে পেস বোলার হিসেবে একাদশে সাইফউদ্দিনের জায়গা পাওয়াটা বেশ কঠিন। তবে লম্বা সিরিজে কোন ম্যাচে হয়তো সুযোগ আসতেই পারে। আর সেজন্যই দেশ ছাড়ার আগে নিজের প্রস্তুতিটা সেরে রাখছেন সাইফউদ্দিন।

ওদিকে বাংলাদেশ দলের নবীনতম সদস্য মুনিম শাহরিয়ার। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে যাকে নিয়ে বড় স্বপ্নই দেখছে বাংলাদেশ। এবছর বিপিএলেই প্রমাণ করেছেন বোলারদের মেরে ছাতু বানানোর ক্ষমতাটা তাঁর আছে। সেজন্যই আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজে টি-টোয়েন্টি দলে ডাকা হয় মুনিমকে।

ফলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ মুনিমের ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট হয়ে দাঁড়াতে পারে। এই সিরিজে নিজেকে প্রমাণ করতে পারলে সামনে এশিয়া কাপ কিংবা বিশ্বকাপেও লিটনের সাথে তিনিই ওপেনিং এর দায়িত্বে থাকবেন। অথচ বছর খানেক আগেও দৃশ্যপটেই ছিলেন না এই ওপেনার।

এমনকি এবছর বিপিএলেও প্রথমে তাঁকে কেউ দলে নেয়নি। পরে ড্রাফটের বাইরে থেকে তাঁকে দলে ভিড়ায় ফরচুন বরিশাল। আর সেই সুযোগের পুরো সদব্যবহারই করেছেন মুনিম। যার কারণেই এত দ্রুত জাতীয় দলেও ডাক পেয়েছেন।

যদিও মুনিমকে বেশ চাপ নিয়েও ওপেন করতে হবে। কেননা তাঁর কাছ থেকে দলের প্রত্যাশা থাকবে উড়ন্ত শুরু। আবার আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলতে গিয়ে আউট হয়ে গেলে জায়গা হারানোর শঙ্কাও আছে। কেননা এনামুল হক বিজয়ও আছেন এই ফরম্যাটের পরিকল্পনায়। ফলে নিজের জায়গাটা টিকিয়ে রাখতে হলে পারফর্ম করার কোন বিকল্প নেই মুনিমের সামনে।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link