আমি মেলবো না আর স্বপ্নডানা

বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান-বিকেএসপির ট্রায়াল থেকে বাদ পড়াটা কোন ভাবেই মেনে নিতে পারছিলেন না তিনি। ক্রিকেটটাই ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। ওখানেই থেমে যেতে পারতেন শাহাদাত হোসেন দিপু। তবে নিয়তি তাঁকে থামতে দেয়নি। দিবে কী করে? তাঁর হাত ধরেই যে একটা বিশ্বকাপ জয়ের চিত্রনাট্য লিখে রাখা হয়েছে।

২০২০ সালে অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ জয়ী বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং লাইন আপের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন দিপু। পুরো বিশ্বকাপের তাঁর ব্যাটে চড়ে অনেক প্রতিকূলতা পারি দিয়েছিল বাংলাদেশ। মাহমুদুল হাসান জয়, পারভেজ হোসেন এমনদের নিয়ে গড়া ব্যাটিং লাইন আপের মিস্টার ডিপেন্ডেবল হয়ে উঠেছিলেন চট্টগ্রামের এই ব্যাটসম্যান।

অথচ ২০১০ সালে বাবা মারা যাওয়ার পর দিপুর ক্রিকেটে আসার পথটা চিল ভীষণ কঠিন। তবুও চট্টগ্রামে ক্রিকেট খেলে পরিচিত হয়ে উঠেছিলেন। বড় ভাইরা তাঁকে ধরে বেধে নিয়ে গেল বিকেএসপির ট্রায়ালে। অথচ দিপু তখনো কিছুই জানেন না এই ক্রীড়া প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে। এমনকি নামও শুনেননি কখনো।

ট্রায়াল একেবারে মন্দ হলো না। তারপর সুযোগ পেলেন না বিকেএসপিতে। দিপু ভেবে নিয়েছিলেন ঘাটতি টা তারই ছিল। ফলে ক্রিকেট ছেড়ে বাসায় ফিরে যাবেন বলে ঠিক করলেন। ওদিকে বাড়িতেও বাবা মারা যাওয়ার পর বড় ভাই একা হাতে সংসার চালাচ্ছেন। ফলে ক্রিকেট ব্যাপারটাকে তখন বিলাসিতা মনে হচ্ছিল তাঁর। তিনিও সংসারের হাল ধরতে চেয়েছিলেন।

তবে সেইসময় ছোট্ট দিপুর পাশে ছিলেন কয়েকজন বড় ভাই। তারা দিপুকে যেভাবেই হোক ক্রিকেটে রাখতে চেয়েছিলেন। তারা নিশ্চয়ই ছেলেটার মধ্যে কিছু একটা দেখেছিলেন। চট্টগ্রামের ইস্পাহানি ক্রিকেট একাডেমিতেও ভর্তি করানো হলো দিপুকে। ২০১৪ সালে এখান থেকেই চট্টগ্রাম জেলা দলে সুযোগ পেয়ে যান। ব্যস, ওটাই ছিল দিপুর জীবনের সবচেয়ে বড় টার্নিং পয়েন্ট।

সেই সময় অবশ্য দিপুর নিজের ক্রিকেট সরঞ্জামও ছিল না ঠিক করে। সবকিছুর ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন সুদীপ্ত দেব নামে এক বড় ভাই। সুদীপ্ত চট্টগ্রাম মেডিকেলে চাকরি করতেন। পাশাপাশি চট্টগ্রাম প্রিমিয়ার লিগেও খেলতেন তিনি। দিপুর এই এতদূর আশার পিছনে এই মানষটার অবদানই সবথেকে বেশি।

তবে এরপর খুব দ্রুতই অনূর্ধ্ব ১৪ দলে সুযোগ পেয়ে যান। সেখান থেকেই বয়সভিত্তিকের ধাপ গুলো পার করতে করতে অনূর্ধ্ব ১৯ দলে। ২০২০ সালে বাংলাদেশের হয়ে যুব বিশ্বকাপ খেলতে গেলেন দক্ষিণ আফ্রিকায়। ওই বিশ্বকাপে মিডল অর্ডারে বাংলাদেশের প্রাণভমরা ছিলেন। পুরো বিশ্বকাপেই দারুণ ব্যাটিং করেছিলেন। এমনকি সেই বিশ্বকাপে আইসিসির সেরা একাদশেও জায়গা হয়েছিল তাঁর।

তাঁর বন্ধুরা অনেকেই চলে এসেছেন জাতীয় দলে। জয়, শরিফুল, শামিমদের মত দিপুও এখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের পথে এগোচ্ছেন। এবারের ডিপিএলে প্রাইম ব্যাংকের হয়ে সেই পথেই হাটছেন দিপু। ১০ ম্যাচে প্রায় ৪৪ গড়ে করেছেন ৩৯৯ রান। এরমধ্যে লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের বিপক্ষে খেলেছিলেন ১৩১ রানের অপরাজিত ইনিংস। এছাড়া প্রায় প্রতি ম্যাচেই বিজয়ের সাথে মিলে দলকে ভালো শুরু এনে দিচ্ছেন। একটু একটু করে দিপুও এগিয়ে যাচ্ছেন।

বিকেএসপির নাম না শোনা ওই ছেলেটার হাত ধরেই প্রথম একটা বিশ্বকাপ জয় করে ফেললো বাংলাদেশ। বাবার মৃত্যুর পর সরকারি কোয়াটার হারানো ছেলেটাই হয়ে উঠেছিলেন বাংলাদেশের নায়ক। ক্রিকেট ছেড়ে গ্রামে চলে যেতে চাওয়া দিপুই এখন দেশের ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ, প্রানশক্তি।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link