শেষ ব্যাটার ফিরলেন সবার আগে
১৯৮৬ সালে এশিয়ার কাপের প্রথম আসরে শ্রীলঙ্কার মাটিতে অংশ নেয় বাংলাদেশ দল। ওই ম্যাচে বাংলাদেশের হয়ে বল হাতে সূচনা করেছিলেন সামিউর রহমান সামি। আবার ব্যাটিংয়ে নেমে সেদিন শেষ ব্যাটার হিসেবে আউট হয়েছিলেন পাকিস্তানের বিপক্ষে। সেই দলের এক এই সামি বাদে বাকি সবাই জীবিত। সেদিন সবার শেষে প্যাভিলিয়নে ফিরলেও জীবনের বাইশ গজে তিনি ফিরলেন সবার আগেই।
ক্রিকেট থেকে নয়, পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিলেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের প্রথম আন্তর্জাতিক ওয়ানডে একাদশের অন্যতম সদস্য সামিউর রহমান সামি। নানান রোগ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই চিকিৎসা নিচ্ছিলেন সাবেক এই পেসার। দু’বার ব্রেন স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাক করার পর হাটা-চলা করার ক্ষমতাও হারান। এরপর কিছুদিন আগেই ব্রেন টিউমার ধরা পড়লে শারীরিক অবস্থার অবনতি হয় সাবেক এই ক্রিকেটারের। ৬ এপ্রিল রাতে ভেন্টিলেশনে নেওয়া হয় সামিকে।
শারীরিক অবস্থার ধীরে ধীরে আরও অবনতি হতে থাকে। পরীক্ষা নিরীক্ষার পর জানা যায় ব্রেন টিউমার ফোর্থ স্টেজে আছে। এরপর আজ ১৯ এপ্রিল (মঙ্গলবার) সকালে ইবনে সিনা হাসপাতালে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন সাবেক এই পেসার।
১৯৮৬ সালে এশিয়ার কাপের প্রথম আসরে শ্রীলঙ্কার মাটিতে অংশ নেয় বাংলাদেশ দল। ওই ম্যাচে বাংলাদেশের হয়ে বল হাতে সূচনা করেছিলেন সামিউর রহমান সামি। আবার ব্যাটিংয়ে নেমে সেদিন শেষ ব্যাটার হিসেবে আউট হয়েছিলেন পাকিস্তানের বিপক্ষে। সেই দলের এক এই সামি বাদে বাকি সবাই জীবিত। সেদিন সবার শেষে প্যাভিলিয়নে ফিরলেও জীবনের বাইশ গজে তিনি ফিরলেন সবার আগেই।
সত্তর-আশির দশকে বাংলাদেশের ক্রিকেটের অন্যতম সেরা তারকাদের একজন ছিলেন সামি। সামির সাথে তাঁর ভাই ইউসুফ বাবুও ছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের সাবেক তারকা। দুই ভাই মিলে জাতীয় দলের জার্সি গায়ে খেলেছেন আইসিসি ট্রফি। ইউসুফ রহমান বাবু ছিলেন আইসিসি ট্রফিতে বাংলাদেশের হয়ে প্রথম সেঞ্চুরিয়ান।
ছিলেন ডান হাতি পেসার। সেই সাথে লোয়ার অর্ডারে টুকটাক ব্যাটিং করতেন। বাংলাদেশের অভিষেক ওয়ানডেতে দলের বোলিং বিভাগের মূল দায়িত্বে ছিলেন তিনি। আবাহনী, মোহামেডান, ব্রাদার্স ইউনিয়ন ও আজাদ বয়েজের মত একসময়ের সেরা ক্লাবগুলোতে তিনি খেলেছেন লম্বা সময়। ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর পর আম্পায়ার ও ম্যাচ রেফারির দায়িত্ব পালন করেছেন সাবেক এই পেসার।
নব্বই দশক থেকে ২০০০ পরবর্তী কিছু সময় পর্যন্ত ঢাকার ক্লাব ক্রিকেট ও ঘরোয়া ক্রিকেটে আম্পায়ার হিসেবে নিয়মিত মুখ ছিলেন তিনি। এরপর ক্যারিয়ারের শেষ দশ বছর ম্যাচ রেফারি হিসেবেই দায়িত্ব পালন করেছেন সাবেক এই পেসার। সবশেষ ২০১৯ সালেও বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) ম্যাচ রেফারির দায়িত্বে দেখা গেছে সামিকে।
ক্রিকেটের পাশাপাশি বাস্কেটবল খেলায়ও বেশ পারদর্শী ছিলেন তিনি। অবশ্য ইউসুফ ও সামির বড় ভাই জিল্লুর রহমান ছিলেন সেসময়ের অন্যতম সেরা একজন বাস্কেটবল তারকা। তাই সামিও বাস্কেটবল খেলায় পারদর্শী হয়ে ওঠেন। সেসময়ে বাংলাদেশ ক্রিকেটে বেশ নামডাক ছিল সামির। সামির ছেলে রিয়াজুর রহমান রোহানও খেলেছেন ঘরোয়া ক্রিকেটে।
তাঁর সময়ে খেলা সতীর্থ ক্রিকেটাররা সামির নজরকাঁড়া আউটস্যুইংয়ের প্রশংসা হরহামেশাই করেন। লাইন-লেন্থেও ছিলেন দুর্দান্ত। দু’টি ওয়ানডে খেলে কোনো উইকেট না দিলেও ইকোনমি রেট মাত্র তিন!
বছর দুয়েক আগে ২০২০ সালে করোনার প্রকোপের সময় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন সামি। ডায়বেটিসটা আগ থেকেই ছিল। পায়ে ফোস্কা পড়ার পর সেখান থেকে গ্যাংগ্রিন হয়ে যায়। যার কারণে পায়ের একাধিক আঙুলও কেটে ফেলতে হয়েছিল সাবেক এই পেসারের। এরপর আর সুস্থ হতে পারেননি তিনি। হার্ট অ্যাটাক আর সপ্তাহ দুয়ের ব্যবধানে দু’বার ব্রেন স্ট্রোকে চলনশক্তি, বাকশক্তি সবটাই হারিয়ে পড়েছিলেন হাসপাতালের বিছানায়।
ভেন্টিলেশনে নেওয়ার আগে জানা যায় মলদ্বার থেকে রক্ত পড়া শুরু হয় সামির। এরপর রাজধানীর কল্যাণপুরের ইবনে সিনা হাসপাতালেই ভর্তি ছিলেন তিনি। তবে আজ সকালে পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে ৬৮ বছর বয়সে পরপারে পাড়ি জমান বাংলাদেশ ক্রিকেট উজ্জ্বল এই তারকা।