বিশ্বকাপের শুরুতে ভালো করতে না পারার পর তাঁকে ঘিরে বইছিল সমালোচনার ঝড়। ভারতের সাবেক কোচ রবি শাস্ত্রী তো বলেই দিয়েছিলেন, ‘শাহীন আফ্রিদির মধ্যে বিশেষ কিছুই নেই। সে ভাল বোলার। তবে ওয়াসিম আকরামের মতো নয়।’
তবে এমন সমালোচনার পরই যেন নিজের স্বরূপে ফিরতে শুরু করেছেন শাহীন আফ্রিদি। টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারীদের তালিকায় এখন পাকিস্তানের এ পেসার উঠে এসেছেন এক নম্বরে। শুধু তাই নয়, প্রথমবারের মতো আইসিসি র্যাংকিংয়ে ওয়ানডে বোলারদের তালিকায় শীর্ষে উঠে এসেছেন আফ্রিদি।
তবে এসব ছাপিয়ে শাহীন আফ্রিদি এখন আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছেন একটি ডেলিভারি দিয়ে। বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচে ৫৬ রানে ব্যাট করতে থাকা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে বোল্ড করেছিলেন আফ্রিদি। তো সেই বলটি যেভাবে ইনসুইং করে রিয়াদের স্ট্যাম্প ছত্রখান করে দেয়, একই রকমভাবে ১৯৯২ বিশ্বকাপের ফাইনালে অ্যালান ল্যাম্বকে বোল্ড করেছিলেন ওয়াসিম আকরাম। আর এরপর থেকেই শুরু হয়েছে ‘কোন ডেলিভারিটি সেরা’র লড়াই।
পরিস্থিতি বিবেচনায় অবশ্য ওয়াসিম আকরামের করা সেই ডেলিভারিটিই অনেকের কাছে সেরা বলে গণ্য হবে। কারণ ওয়াসিম আকরামের ঐ একটি ডেলিভারিতেই বিশ্বকাপ জয়ের দ্বার উন্মোচিত হয়। দৃশ্যপটটা যদি আরেকটু খোলাসা করে বলা যায়, মেলবোর্নের সেই ফাইনালে প্রথমে ব্যাট করে পাকিস্তান তুলেছিল ২৪৯ রান। জবাবে শুরুতেই উইকেট হারিয়ে চাপে পড়েছিল ইংল্যান্ড।
তবে ৬৯ রানে ৪ উইকেট হারানো ইংল্যান্ড ঠিকই ম্যাচে ফেরে পরবর্তীতে। অ্যালান ল্যাম্ব আর নিল ফেয়ারব্রাদারের দৃঢ়তায় প্রাথমিক সে বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠে ইংল্যান্ড। আর এ দুই ইংলিশ ব্যাটার ৭২ রানে জুটিতে ধীরে ধীরে ম্যাচ জয়ের দিকেই ছুটছিল। পাকিস্তানেরও বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন ফিকে হতে শুরু করেছিল। এমতাবস্থায় প্রয়োজন ছিল একটি ব্রেক থ্রু। এবারও পাকিস্তানের সেই বিপদের সময়ে আবির্ভূত হন ওয়াসিম আকরাম।
অধিনায়ক ইমরান বোলিং প্রান্তে আনেন ওয়াসিমকে। আর এরপর সেই ওভারেই পুরো দৃশ্যপট পাল্টে যেতে শুরু করে। রাউন্ড দ্য উইকেটে বল করে ল্যাম্বকে বোল্ড করলেন দুর্দান্ত এক অফ কাটারে। এর পরের বলেই ক্রিস লুইসকে দারুণ এক ইনসুইংয়ে বোল্ড করেন তিনি।
ওয়াসিম আকরামের ঐ এক ধাক্কায় আর ম্যাচে ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি ইংল্যান্ড। ২৫০ রান তাড়া করতে নামা ইংল্যান্ড গুটিয়ে যায় ২২৭ রানে। ফলত, প্রথম বারের বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ পায় পাকিস্তান।
১৯৯২ বিশ্বকাপের ৩১ বছর পর ২০২৩ বিশ্বকাপে এসে শাহীন আফ্রিদিও এ বলটি করেছিলেন রাউন্ড দ্য উইকেটে। কাকতালীয়ভাবে অ্যালান লাম্বকে যেমন ইন-সুইংয়ে ওয়াসিম পরাস্ত করেছিলেন, এবার শাহীন প্রায় একই ডেলিভারিতে রিয়াদকে বোল্ড করেন।
যদিও কোনো তুলনায় না গিয়ে শাহীন আফ্রিদি নিজেই ওয়াসিম আকরামের ডেলিভারিকে সেরা রায় দিয়ে ফেলেছেন। ম্যাচশেষে তিনি বলেন, ‘আমার মন হয় সেটিই সেরা। আমরা তার কাছে বড়জোর শিখতে পারি, তাঁর মতো হওয়ার চেষ্টা করতে পারি। সে কিংবদন্তি বোলার। তাঁর কাছে অনেক কিছু শেখার আছে।’
বাংলাদেশের বিপক্ষে শাহীন আফ্রিদি এ দিন আরেকটি রেকর্ড নিজের করে নিয়েছেন। ওয়ানডে ক্রিকেট নিজের ৫১তম ম্যাচে এসে ছুঁয়েছেন ১০০তম উইকেটের মাইলফলক। যা ওয়ানডে ক্রিকেট ইতিহাসে পেসারদের মধ্যে সবচেয়ে কম ম্যাচে শত উইকেট উইকেট ছোঁয়ার রেকর্ড।