গতিমান শাহীনের বীরত্ব

শাহীন শাহ আফ্রিদি, সম্ভবত এই সময়ের অন্যতম সেরা পেসারদের একজন তিনি। নির্দ্বিধায় বিশ্বের যে কোন একাদশে প্রথম পছন্দ হতে পারেন তিনি।

ইনসুইংয়ে শুরু। শেষটায় গতিতে চোখ ছানাবড়া, উপড়ে গেল স্ট্যাম্প। মাঝে পকেটে পুরে নিলেন আরও দু’খানা উইকেট। এক ওভারেই শাহীন শাহ আফ্রিদির নামের পাশে চার উইকেট। বিস্ময়ের ছায়াতলে ইংল্যান্ডের ট্রেন্ট ব্রিজ। প্রথম ওভারেই নেই চার উইকেট, এও কি সম্ভব!

শাহীন শাহ আফ্রিদি, সম্ভবত এই সময়ের অন্যতম সেরা পেসারদের একজন তিনি। নির্দ্বিধায় বিশ্বের যেকোন একাদশে প্রথম পছন্দ হতে পারেন তিনি। তাইতো ইংল্যান্ডের ভাইটালিটি ব্লাস্টে সুযোগ পেয়েছেন এই বাঁ-হাতি পেসার। সুযোগ পেয়েই তো বাজিমাত। নিজের সামর্থ্যের প্রমাণটাই যেন আরও একবার রাখলেন তিনি।

১৬৯ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নামা বার্মিংহাম বিয়ার্সের টপ অর্ডারকে টিকতেই দেননি আফ্রিদি। টুর্নামেন্টে মোটামুটি ছন্দেই ছিলেন শাহীন শাহ আফ্রিদি। তবে এতটা বিধ্বংসী হয়ে উঠবেন তিনি, সেটা সম্ভবত একেবারেই ছিল অপ্রত্যাশিত।

অবশ্য বার্মিংহামের বিপক্ষে শুরুটা যে একেবারেই দুর্দান্ত করেছিলেন শাহীন তেমন কিন্তু নয়। প্রথম ওভারের প্রথম বলেই ওয়াইড। সেই বল আবার ছুঁয়েছে সীমানা দড়ি। শুরুতে পাঁচ রান দিয়েই যেন ভয়ংকর এক রুপ ধারণ করেন তিনি। প্রথম উইকেট হিসেবে শিকার করেন অ্যালেক্স ডেভিসের উইকেট। ইনসুইং বল ফেলেন ফুলার লেন্থে। গতি আর ভেতর দিকে হওয়া সুইংয়ে পরাস্ত।

লেগ বিফোরের ফাঁদে আটকা পড়ে শূন্য রানে সাজঘরে বার্মিংহামের অধিনায়ক। এরপরের বলেই আরও এক উইকেট শাহীনের নামের পাশে। এবার স্কুপ করবার প্রচেষ্টা ক্রিস বেঞ্জামিনের। তবে বলের লাইন মিস করলেন। লো ফুলটস বল বুঝে ওঠার আগেই উপড়ে ফেলে স্ট্যাম্প। হ্যাট্রিকের সুযোগ শাহীন আফ্রিদির সামনে।

দুই বলে দুই উইকেট হারিয়ে তখন ভীষণ বিপাকে বিয়ার্স। কোন মত হ্যাট্রিকের সুযোগটাকে নস্যাৎ করে দিলেন ড্যান মৌসলি। তবে সেই মৌসলি যখন আবার স্ট্রাইক প্রান্তে এলেন, তখনই তিনি আফ্রিদের শিকারে পরিণত হলেন। শট কাভার অঞ্চলে থাকা ওলি স্টোন লুফে নেন চোখ ধাঁধানো এক ক্যাচ। তাতেই আফ্রিদির পকেটে তিন উইকেট।

বেশ অবাকই সম্ভবত হয়েছিলেন মৌসলি। সেই দুরন্ত ক্যাচের পর আবারও বেশ সাদামাটা ধাঁচের উইকেটই যেন পেলেন আফ্রিদি। তবে সেখানেও তিনি ব্যাটারকে বোকা বানিয়েছেন গতিতে। ব্যাটার হয়ত মারণাস্ত্র ইনসুইংয়ের অপেক্ষাই করছিলেন। তবে শাহীন আফ্রিদির এবারের বলটা গিয়ে সোজা ফুলার লেন্থে গিয়ে পড়ে। সেখান থেকে উড়িয়ে নিয়ে যায় অফ স্ট্যাম্প। ব্যাস, চতুর্থ উইকেট শাহীনের ট্যালিতে।

একটু পেস সহায়ক কন্ডিশনে শাহীন শাহ আফ্রিদি যে ঠিক কতটা ভয়ানক, সেই প্রমাণটাই যেন তিনি রাখলেন। প্রথম ওভারেই চার উইকেট নিয়ে নেওয়া তো মোটেও চাট্টিখানি কথা নয়। বিশেষ করে বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে তো নয়ই। কেননা প্রায় প্রতিটা দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলা ব্যাটাররা অনেক বেশি অভিজ্ঞ ও পরিণত।

তাছাড়া একটি দলের টপ অর্ডারকে শুরুর ওভারে ফিরিয়ে দেওয়াটাও দারুণ এক দক্ষতা। যারা বিশ্ব ক্রিকেট দাপিয়ে বেড়ায়, তাদের জন্য অবশ্য মামুলি বিষয়। যদিও এমন বিধ্বংসী পারফরমেন্সেও হার এড়াতে পারেননি শাহীন শাহ আফ্রিদি। তার দল নটিংহাম হেরেছে ২ উইকেটে।

দলের বাকি বোলাররা আফ্রিদিকে করতে পারেননি সহয়তা। টপ অর্ডার গুড়িয়ে দেওয়ার পরও তাই পরাজিত দলেই অবস্থান আফ্রিদির। তবে ইনজুরি কাটিয়ে নিজেকে পূর্ণ রুপে খুঁজতে থাকা আফ্রিদি আত্মবিশ্বাস নিশ্চয়ই বাড়িয়ে দেবে এই অসাধারণ পারফরমেন্স। সেটা নিশ্চয়ই পাকিস্তানের জন্য এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপের আগে বেশ স্বস্তির বিষয়।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...