শাহরুখ খান, পাঞ্জাব রাজাদের সম্রাট

বড় আশা নিয়েই তাঁকে দলে ভিড়িয়েছিল পাঞ্জাব কিংস। কিন্তু বেশ কয়েকবার জ্বলে উঠার ইঙ্গিত দিলেও ধারাবাহিকভাবে পারফর্ম করতে পারেননি শাহরুখ খান। এবারের আইপিএলে নিজের শেষ ম্যাচে বিধ্বংসী ব্যাটিং করে অবশ্য বুঝিয়ে দিলেন এখনো ফুরিয়ে যাননি তিনি। 

ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই বহু উত্থান-পতনের সাক্ষী শাহরুখ। তামিলনাড়ু থেকে উঠা আসা এই মিডল অর্ডার ব্যাটার প্রথমবার আলোচনায় আসেন ২০১৪ সালে। সেবারের বয়সভিত্তিক কোচবিহার ট্রফিতে রীতিমতো অতিমানবীয় পারফরম্যান্স দেখান এই তরুণ, ব্যাট হাতে ৬২৪ রানের পাশাপাশি তুলে নেন ১৮ উইকেট।

কিন্তু এমন দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের পরও সেবারের ছোটদের বিশ্বকাপগামী জাতীয় দলের স্কোয়াডে জায়গা মেলেনি তাঁর। তবে শাহরুখ হাল ছাড়েননি, কঠোর পরিশ্রম আর একাগ্রতায় উন্নতি আনতে থাকেন নিজের ব্যাটিংয়ে। ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিত ছক্কা হাঁকানোর সুনাম আছে এই ব্যাটারের। বাকিরা যেখানে বাউন্ডারির সীমানা পার করতেই হিমশিম খান, সেখানে অবলীলায় শাহরুখ বলকে পাঠিয়ে দেন গ্যালারীতে। 

ফলে ঘরোয়া ক্রিকেটের সিনিয়র স্কোয়াডে জায়গা পেতে অসুবিধা হয়নি এই তারকার। ২০১৮ সালে তামিল নাড়ু প্রিমিয়ার লিগে দুরন্ত ব্যাটিং করে গোটা বিশ্বের নজর কাড়েন এই ফিনিশার। ইনিংসের শেষদিকে নেমে বিধ্বংসী সব ইনিংস খেলে দলকে এনে দেন অবিস্মরণীয় সব জয়।

শাহরুখের সবচেয়ে বড় গুণ হলো তিনি তাঁর পেশিশক্তির ব্যবহার করতে জানেন। প্রথাগত ক্রিকেটীয় শট কিংবা নিখাদ টাইমিং নয়, বরং ক্যারিবীয় স্টাইলে গায়ের জোরেই বলকে পাঠিয়ে দেন সীমানার ওপারে। 

তবে ফিনিশারদের চিরায়ত সমস্যাটা শাহরুখের মাঝেও বিদ্যমান। নিজের দিনে একাই ম্যাচের ফলাফল বদলে দেবার সক্ষমতা থাকলেও মোটেই ধারাবাহিক নন এই তারকা। শেষদিকে নেমে শুরু থেকেই আক্রমণাত্নক ব্যাটিং করায় বড় ইনিংস খেলার সুযোগ পান না মোটেই। ফলে বেশ কয়েকবার জাতীয় দলে ডাক পাবার সম্ভাবনা থাকলেও ভাগ্যে শিকে ছেঁড়েনি। 

২০২১ আইপিএলে শাহরুখকে দলে ভেড়াতে রীতিমতো যুদ্ধ শুরু হয়েছিল নিলামের টেবিলে। ঘরোয়া ক্রিকেটের এই ছক্কা মেশিনকে দলে ভেড়াতে উঠেপড়ে লেগেছিল সবগুলো দলই। শেষপর্যন্ত নিজের ভিত্তিমূল্যের চাইতে ২২.৫ গুণ বেশি দামে ৫.২৫ কোটি রুপিতে তাঁকে দলে টানে পাঞ্জাব কিংস। নিজের প্রথম মৌসুমে অবশ্য মন্দ করেননি, ১১ ম্যাচে ১৩৪ স্ট্রাইকরেটে সংগ্রহ করেন ১৫৩ রান।

কিন্তু এবারের মৌসুমে মোটেই নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি এই তরুণ। বেশ কয়েকবার দলকে জিতিয়ে নায়ক হবার সুযোগ থাকলেও কাজে লাগাতে পারেননি। বরং বারবার আউট হয়ে দলের বিপদ ডেকে এনেছেন ক্রমশই। সবাই ধরেই নিয়েছেন ভারতীয় ক্রিকেটের ভবিষ্যত হয়ে উঠার লড়াইয়ে শাহরুখের যাত্রার এখানেই সমাপ্তি।

কিন্তু জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে লড়ে আসা শাহরুখ সহজে হাল ছাড়ার পাত্র নন। চেষ্টাটা তাই চালিয়ে গেছেন নিজের সাথে। মৌসুমে নিজের শেষম্যাচকেই বেছে নিলে ফেরার লড়াইয়ের শুরু হিসেবে।

রাজস্থান রয়্যালসের বিপক্ষে পাঞ্জাবের ব্যাটাররা সুবিধা করতে পারছিলেন না মোটেই। সবমিলিয়ে মাঝারি মানের এক সংগ্রহের দিকেই ছুটছিলো দলটি। কিন্তু শেষদিকে নেমে ঝড়ো ব্যাটিংয়ে দৃশ্যপট বদলে দেন শাহরুখ, ট্রেন্ট বোল্ট কিংবা নবদ্বীপ সাইনিরা কেউই বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারেননি। চারটি চার এবং দুই ছক্কায় ২৩ বলে ৪১ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলে অপরাজিত ছিলেন শাহরুখ। 

আইপিএলে এবারের মৌসুম শেষ শাহরুখের জন্য। তবে পাঞ্জাবের শাহেনশাহ নিশ্চিতভাবেই মুখিয়ে থাকবেন ফর্মটা ঘরোয়া ক্রিকেটেও ধরে রাখতে। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link