দ্য সাকিব-উইন্ডিজ প্যাক্ট

সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বে ফেরা আর ওয়েস্ট ইন্ডিজ – এই দু’টি যেন একই সূত্রে গাঁথা। মজার ব্যাপার হলো প্রথম দুই মেয়াদে সাকিবের অধিনায়কত্বের শুরু হয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের সাথেই। মুুমিনুল হক সৌরভের অধিনায়কত্ব নিয়ে গুঞ্জন শুরু হওয়ার পর থেকেই ক্রিকেটবোদ্ধাদের আগ্রহ ছিল, আসন্ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজেও কি ওই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটবে? হয়েছেও তাই।

সাকিব আল হাসান এই নিয়ে তৃতীয়বারের মতো বাংলাদেশের জাতীয় ক্রিকেট দলের টেস্ট ফরম্যাটে আনুষ্ঠানিকভাবে অধিনায়কের দায়িত্ব পেলেন। যেভাবে হাজার হাজার বাংলাদেশি ক্রিকেটপ্রেমীর কাছে দলের প্রয়োজনে সবচেয়ে ভরসার জায়গার নাম সাকিব, তেমনি দলের  নেতৃত্বের জন্য বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) কাছেও অন্যতম আস্থাভাজন এই অলরাউন্ডার।

ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, ২০০৯ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশ ওয়েস্ট-ইন্ডিজ সফরে প্রথম টেস্টেই অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা ইনজুরিতে পড়লে দলের দায়িত্ব এসে পড়ে সহ-অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের কাঁধে। সেবারই প্রথমবারের মত অধিনায়কত্বের স্বাদ পান এই বর্তমান বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার।

সেই টেস্ট ম্যাচেই সাকিব নিজের জাত চিনিয়েছিলেন। দেখিয়ে দিয়েছিলেন যে তিনি শুধু ভালো খেলোয়াড়ই নন যোগ্য অধিনায়কও। দেশের বাইরে এটাই ছিল বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট জয়। তা এক ঐতিহাসিক ঘটনাই বটে। মাশরাফির ইনজুরিজনিত অনুপস্থিতির কারণে সিরিজের বাকি সময়টায় সাকিবই বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেন।

মাত্র ২২ বছর ১১৫ দিন বয়সে বাংলাদেশের সর্বকনিষ্ঠ ও ইতিহাসের পঞ্চম কনিষ্ঠতম অধিনায়ক হিসেবে যাত্রা শুরু করেন তিনি। সাকিবের নেতৃত্ত্বে বাংলাদেশ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টও জিতে নেয় এবং দেশের বাইরে প্রথমবারের মতো টেস্ট সিরিজ জয়ের স্বাদ পায়। সেবার শুধু টেস্ট সিরিজই নয়, বাংলাওয়াশ করে ওয়ানডে সিরিজটিও জিতে নেয় বাংলাদেশ।

এরপর সে বছরই আগস্টে এলো জিম্বাবুয়ের সফর। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ও অধিনায়কত্ব বহাল থাকলো সাকিব আল হাসান এর উপর। সাকিবের নেতৃত্বে ৪-১ ব্যবধানে সেই ওয়ানডে সিরিজটিও জিতে নেয় বাংলাদেশ। পাশাপাশি ওই বছরই নভেম্বর মাসে ক্রিকেটের বাইবেল নামে খ্যাত ‘দ্য উইজডেন ক্রিকেটার্স’-এর কাছ থেকে পেয়েছিলেন ‘বর্ষসেরা টেস্ট ক্রিকেটার’-এর খেতাব।

অধিনায়ক হিসেবে সাকিবের জন্য টানপোড়েনের জায়গা তখনও ছিল। সেটা হল ব্যক্তিগত অর্জনের বিপরীতে দলীয় অর্জনের অপ্রাপ্তি। সাকিব নিজের জায়গায় সেরাটা দিয়েছেন বরাবরই, কিন্তু দলীয় পরাজয় যেন পিছুই ছাড়ছিল না। ২০১১ সালে জিম্বাবুয়ে সফরের পর অধিনায়ক সাকিব ও সহ-অধিনায়ক তামিম ইকবালকে বরখাস্ত করে বিসিবি। সাকিবের জায়গায় দায়িত্ব দেওয়া হয় মুশফিকুর রহিমকে।

২০১৮ সালে প্রায় সাত বছর পর মুশফিকুর রহিমের জায়গাতেই আবারও টেস্টে নেতৃত্ব পান সাকিব। কিন্তু দ্বিতীয় পর্যায়ের অধিনায়কত্বের সময়টি সাকিবের ক্যারিয়ারের সবচেয়ে আলোচিত-সমালোচিত অধ্যায়। জুয়াড়ির প্রস্তাব গোপন করার দায়ে আইসিসির এক বছরের নিষেধাজ্ঞা পান সাকিব। সাকিবের জায়গায় টেস্টে দায়িত্ব দেওয়া হয় মুমিনুলকে।

নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ২০২১ সালে ফেরেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। অবশেষে আসন্ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের সাথে ফিরল সাকিবের অধিনায়কভাগ্য। তৃতীয়বারের মতো বাংলাদেশ দলের টেস্ট ঘরানার নেতৃত্ব দিবেন সাকিব আল হাসান। সম্প্রতি ২ জুন বিসিবির বোর্ড সভায়  সিদ্ধান্ত আসে, সাকিবের কাঁধেই পড়ছে দলের নেতৃত্বের ভার।

টেস্টে সাম্প্রতিক সময়ে একটু ব্যাকফুটে আছে বাংলাদেশ। তবে, এবার আশার ব্যাপার হল, টস করতে নামবেন সাকিব। যে সাকিবের হাত ধরে বিদেশের মাটিতে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ টেস্ট সিরিজ জয়ের স্বাদ পেয়েছিল, সেই মাটিতেই সাকিবের নেতৃত্বে বাংলাদেশ দল কতটা ভালো করতে পারে সেটাই এখন দেখার বিষয়।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link