ষোল তম ওভারের শেষ বল। নাঈম হাসান সাকিবকে একটা জুসি ফুলটস বল উপহার দিলেন। সাকিবও সেটা টেনে কাওকর্নারের উপর দিয়ে পাঠাতে চাইলেন। ছয়ও হয়েই যাচ্ছিল। তবে বাউন্ডারি লাইনে মুকিদুল ইসলাম মুগ্ধর দারুণ ফিল্ডিং। অনেকটা উপরে লাফ দিয়ে বলটাকে ছয় হওয়া থেকে বাঁচালেন।
ওদিকে ছয় না হলেও প্রান্ত বদল করে নিজের অর্ধশতক পূরণ করে ফেলেছেন সাকিব। মাঠের প্রতিটা ক্যামেরা তাঁর দিকে তাক করা। টিভি স্ক্রিনেও সাকিবকেই জুম করে দেখানো হচ্ছে। এখনই অর্ধশতকের উদযাপন করবেন। ব্যাটটা উঁচিয়ে ধরবেন। কিন্তু সবাইকে হতাশ করে সাকিব শুধু আক্ষেপ প্রকাশ করলেন। ব্যাটে একটা ঘুষি মেরে নিজের রাগ প্রকাশ করলেন।
সাকিবের এই রাগের কারণ বলটাকে তিনি সীমানা ছাড়া করতে পারেননি। মুগ্ধ অসাধারণ ফিল্ডিং করেছেন বটে তবে সাকিব সেটা আরো উপর দিয়ে পাঠাতে চেয়েছিলেন। যেন বলটা ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকে। সাকিব সেটা পারেননি।
একটা বাউন্ডারির সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে। আর এই হতাশাটাই সাকিবের কাছে বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিজের অর্ধশতক, এমন অসাধারণ একটা ইনিংস সবকিছু বৃথা। এভাবেই শুধু একজন ভাল ক্রিকেটার থেকে সাকিব নিজেকে কিংবদন্তীদের কাতারে নিয়ে যান।
নিজের অর্ধশতক পূরণ করেই কাজ শেষ মনে করেননি। আক্রমণাত্মক ব্যাটিং চালিয়ে গিয়েছেন। কুমিল্লার স্পিনারদের বলে কয়ে সীমানা ছাড়া করেছেন। মোসাদ্দেক, নাঈমরা সাকিবের এমন তান্ডব শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে দেখলেন। সাকিব খেললেন ইনিংসের একদম শেষ অবধি।
সাকিব আজ শুরু থেকেই ছিলেন আক্রমণাত্মক। চট্টগ্রামের উইকেটে রান হয়। জিততে হলে বড় টার্গেটই দিতে হবে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে। সেজন্যই একপ্রান্ত থেকে কাউকে বড় ইনিংস খেলতে হবে। অধিনায়ক সাকিবই সেই দায়িত্বটা নিলেন।
একেবারে প্রথম বল থেকেই তাঁর মানসিকতটা স্পষ্ট হয়ে উঠলো। কুমিল্লার প্রায় সব বোলারকেই বাউন্ডারি মেরেছেন। আক্রমণ করার চেষ্টা করেছেন। ইনিংস শেষে সাকিব অপরাজিত ছিলেন ৮১ রান করে। মাত্র ৪৫ বলের এই ইনিংসটিতে ছিল ৮ টি চার ও ৪ টি ছয়। ব্যাটিং করেছেন ১৮০ স্ট্রাইকরেটে।
ইব্রাহিম জাদরানের সাথে গড়েছেন ৫০ রানের জুটি। অন্য প্রান্তের ব্যাটাররা তাঁকে খুব একটা সঙ্গ দিতে না পারলেও তিনি এক প্রান্ত থেকে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে গিয়েছেন। তাঁর ৮১ রানের এই ইনিংসের পর ফরচুন বরিশাল করতে পেরেছে ১৭৭ রান।
সাকিব আল হাসান ইতোমধ্যেই এবারের বিপিএলে পেয়েছেন দুটি হাফ সেঞ্চুরির দেখা। এর আগেরটি করেছিলেন দুইশোরও বেশি স্ট্রাইক রেটে। এছাড়া বল হাতেও নিজের কাজটা ভাল ভাবেই করে যাচ্ছেন। চারবার বিপিএলের ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট হওয়া সাকিব কী আবারো সেই পথেই হাঁটছেন? সাকিবের জন্য নিশ্চয়ই খুব কঠিন কিছু না।
ওদিকে সাকিবের এমন তান্ডবের মাঝেও কুমিল্লার হয়ে অসাধারণ বোলিং করেছেন তানভীর ইসলাম। এই স্পিনার একাই তুলে নিয়েছেন বরিশালের চার উইকেট। চার ওভার বল করে এই স্পিনার খরচ করেছেন ৩৩ রান। আরেক দুই স্পিনার মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ও নাঈম হাসান অবশ্য খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি।
নাঈম তিন ওভারে ৩৫ রান দিয়ে নিয়েছেন এক উইকেট। ওদিকে মোসাদ্দেক চার ওভারে ৩৫ রান খরচ করলেও কোন উইকেট পাননি। তবুও চট্টগ্রামের উইকেটে ১৭৮ রানের টার্গেট চেজ করে জেতা সম্ভব। কুমিল্লার শক্তিশালী ব্যাটিং লাইন আপও নিশ্চয়ই সেই চেষ্টাই করবে।