এক্সট্রা কাভার দিয়ে সাকিবের হাঁকানো ড্রাইভ চলে গেল বাউন্ডারিতে। নন স্ট্রাইকিং এন্ডে মুশফিকের উল্লাস। জড়িয়ে ধরলেন দু’জনে। সাকিব আল হাসান তো বরাবরই বলেন, মুশফিক এমনই, সেই বিকেএসপিতে যেমন দেখেছেন, এখনও তাই।
রাওয়ালপিন্ডির উইকেটে সিজদাহ করলেন মুশফিকুর রহিম, যেমনটা করেন যে কোনো স্মরণীয় মুহূর্তে। জয় নিয়ে সাজঘরে ফিরলেন বন্ধু সাকিবকে সঙ্গী করে। ড্রেসিংরুমের তরুণ ব্রিগেড একে একে নামছে মাঠে। পাকিস্তান দলের সাথে সৌজন্য বিনিময় হল।
উদযাপনটা একেবারেই অনারম্বর। আর সেই পট-পরিবর্তনের সারথি এই মুশফিক কিংবা সাকিবরাই। বাংলাদেশের ওল্ড ব্রিগেড, আতাহার আলী খানের ভাষায় ‘দ্য মোস্ট এক্সপেরিয়েন্সড ক্যাম্পেইনার’। এই অভিজ্ঞতা এসেছে অনেক আগুনে পুড়ে, অনেক সমালোচনায় বিদ্ধ হয়ে।
বাকিরা খসে গেছেন নানা পট পরিবর্তনে। কিন্তু, আজও অবিচল আছেন মুশফিক ও সাকিব। আর পাকিস্তানের বিপক্ষে ঐতিহাসিক টেস্ট জয়ের অন্যতম দুই নায়কও বলা যায় এই দু’জনকে।
প্রথম টেস্টে মুশফিকুর রহিমের ১৯১ রানের অতিমানবীয় এক ইনিংস ভেঙে দিয়েছিল পাকিস্তান দলের মনোবল। বাংলাদেশের বিজয়ের পতাকা তখনই উঁকি দিয়েছিল রাওয়ালপিন্ডির বুকে। সেই মঞ্চে পাকিস্তানকে অল আউট করার নেতৃত্ব দেন সাকিব, দ্য ম্যাজিশিয়ান।
তিনটি উইকেট নেন সেই ইনিংসে সাকিব। পরিকল্পনা মাফিক বোলিং করেন, পাকিস্তানি ব্যাটারদের নিজের বানানো ফাঁদে পা দিতে বাধ্য করেন। আর দিন শেষে সেই সুফল ভোগ করে বাংলাদেশ। ফলাফল ১০ উইকেটের বিশাল জয়।
দ্বিতীয় টেস্টে সেই স্কোরবোর্ড দু’জনের বড় কোনো ভূমিকা দেখাতে পারবে না। তবে, দুই ইনিংস জুড়েই বুদ্ধিদীপ্ত বোলিং করে গেছেন সাকিব। প্রথম ইনিংসে চোটগ্রস্থ মুশফিক মীর হামজার যে ডেলিভারিতে আউট হন, সেটাতে নিজের সেরা দিনেও আউট হতে বাধ্য বিশ্বের বাঘা বাঘা সব ব্যাটার।
তবে,ম্যাচের চতুর্থ ইনিংসের শেষ ভাগে নিজেদের অভিজ্ঞতা দিয়েই জয় ছিনিয়ে এনেছেন দু’জন। ইনিংসে দু’জনের শুরুটা আবার দু’রকম। মুশফিক ক্রিজে এসেই দ্রুত রান আদায় করতে চেয়েছেন, দ্রুত ম্যাচ শেষ করতে চেয়েছেন। তবে, অপরপ্রান্তে উইকেট পতনের সাথে সাথেই নিজের অ্যাপ্রোচ পাল্টান।
সাকিব শুরু করেন রয়েসয়ে। কিন্তু, তিনি তো আর ব্যাকফুটে গিয়ে ডিফেন্স করার ব্যাটার নন। তাই, সাকিব আগ্রাসী হন সময়ের সাথে সাথে। আর সেই আগ্রাসনেই আসে জয়। বহুল কাঙ্ক্ষিত এক বাংলাওয়াশ। ক্রিকেটের ইতিহাসে এমন অভাবনীয় অধ্যায় এর আগে কোনোদিনও লিখতে পারেনি বাংলাদেশ।