কি সহজে হয়ে গেল বলা, কাঁপল না গলা এটতুকু, বুক ফেঁটে বের হল না দীর্ঘশ্বাস, চোখ ছলছল করল না। নামটা সাকিব আল হাসান বলেই সম্ভব। তিনি নিজেকে এতটাই চূড়ায় নিয়ে গেছেন যে, অবলীলায় বলে ফেলতে পারলেন, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তিনি শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচটা খেলে ফেলেছেন। আর টেস্ট ক্রিকেটেও শেষ বারের মত তিনি মাঠে নামবেন অক্টোবরেই, মিরপুরের ময়দানে।
ব্যস, এরই মধ্য দিয়ে অবসান ঘটতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে আলোচিত, সমালোচিত, রোমাঞ্চকর কিংবা সবচেয়ে বিতর্কিত অধ্যায়ের। সেই অধ্যায়ে নাম্বার ওয়ানের তকমা আছে, বিশ্বের বুকে বাংলাদেশের উত্থানের গল্প লেখার অহংকার আছে, বড় দলগুলোকে চোখ রাঙিয়ে দেওয়া বিশ্বকাপের হুঙ্কার আছে, আছে দর্শক পেটানোর বিতর্ক, বাজিকরদের সাথে যোগাযোগ গোপন করার মুহূর্ত, আছে রাজনীতির মহলে নাম লেখানোর পর পেশাদারিত্ব নিয়ে প্রশ্ন ওঠার কালিমাও আছে।
সেজন্যই তো তিনি সাকিব আল হাসান। তিনি সব সমস্যার সমাধান। কিন্তু, শেষ বেলায় সেই সমাধানটাই যে বড় সমস্যা হয়ে উঠছিল বাংলাদেশের জন্য। মাঠে ও মাঠের বাইরে বিতর্ক আর অফ ফর্ম ছেয়ে ধরেছিল তাঁকে। ফিটনেস ইস্যুতে তিনি নিজেও মানিয়ে নিতে পারছিলেন না সব কিছুর সাথে। তাই, প্রস্থানকেই তিনি সমাধান মেনে বুক পেতে দিলেন বিদায়ের মিছিলে।
ঠোঁটের কোণে সেই চির পরিচিত শিশুসুলভ হাসি ধরে রেখে তিনি বলে দিলেন, ‘আমার মনে হয় টি-টোয়েন্টি তে আমি আমার শেষ ম্যাচ খেলে ফেলেছি, মিরপুর টেস্টে খেলতে পারলে সেটি হবে আমার শেষ টেস্ট।’ ওয়ানডে ক্রিকেটে হয়ত খেলবেন আর ক’টা দিন। সম্ভবত আগামী বছরের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি, কিংবা তারও আগে।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মিরপুর টেস্ট মাঠে গড়াবে আসছে অক্টোবরেই। মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে প্রেম ধীরে মুছে হয়ত যাবে না, কিন্তু ভালবাসার সেই মানুষটা চিরতরে তুলে রাখবেন টেস্টের সাদা পোশাককে। বিদায়ের আগের পরিসংখ্যান বলবে, যতদিন খেলেছেন লড়ে গেছেন বাঘের মত, প্রতিপক্ষের চোখে চোখ রেখে। যাওয়ার আগে যতদিন খেলেছেন, ততদিনে বিশ্ব ক্রিকেটের ইতিহাসেই অন্যতম সেরা অলরাউন্ডারদের সংক্ষিপ্ত তালিকায় লেখা হয়ে গেছে তাঁর নাম।
তাঁর মত অলরাউন্ডার হওয়াটা প্রতিটা ক্রিকেটারেরই স্বপ্ন। তাঁর মত অলরাউন্ডার পাওয়াটা প্রতিটা দলেরই পরম আরাধ্য। বাংলাদেশ ক্রিকেটের অবিসংবাদিত সেরা ক্রিকেটার তিনি। তিনি বাংলাদেশ ক্রিকেটের সেরা আবিস্কার, বিশ্বের বুকে বাংলাদেশ ক্রিকেটের সম্ভাব্য সেরা বিজ্ঞাপন। সেই বিজ্ঞাপনে এবার নামবে বিজ্ঞাপন বিরতি। অনন্তকালের এক বিরতি। যে বিরতি দিতে মন সায় দেয় না, তবু দিতে হয়।
তবে, এই বিরতিতে নয়, সাকিব বেচে থাকবেন তাঁর দেওয়া সোনালী সব মুহূর্তে। এই মুহূর্তগুলোর জন্য বাংলাদেশের ক্রিকেটের সাকিবের কাছে চির-ঋণী হয়ে থাকবে চিরকাল। এই ঋণের কোনো শোধ নেই, এই অর্জনের কোনো বিদায় নেই।