নিজের ব্যাটিংয়ের ধরনে একটা পরিবর্তন এনেছিলেন। যার কারণে আগের থেকে অনেক বেশি শট খেলতে পারছিলেন। ব্যাট হাতে তিনি কতটা আগ্রাসী হতে পারেন সেটা প্রমাণ করেছেন কিছুদিন আগেই শেষ হওয়া বিপিএলে। মারমুখী ব্যাটিং করে সাকিব আল হাসান প্রশংসিতও হয়েছিলেন বেশ। নতুন দিনের ক্রিকেটের সাথে মানিয়ে নেয়ার জন্যই সাকিবের এই প্রয়াস।
ক্যারিয়ারের প্রায় শেষ সময়ে আছেন। আর কয়েকটা বছর বাদেই তুলে রাখতে হবে ব্যাট-বল। তবুও নিজেকে নিয়ে এই পরীক্ষা গুলো তিনি চালান নিয়মিতই। এই বয়সে এসে, এতকিছু অর্জন করে ফেলার পরেও সাকিব নিজের টেকনিকে পরিবর্তন আনেন। আধুনিক ক্রিকেটের সাথে মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন। আর এটাই সাকিব আল হাসানকে আলাদা করে অন্য ব্যাটারদের থেকে।
সাকিব বিপিএলের মত ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে পরীক্ষা চালিয়েছেন। সফলও হয়েছেন। তবে তাঁর মূল লক্ষ্য সেটা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কাজে লাগানো। আর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আজ সেটাই করলেন সাকিব। বোঝালেন এখনকার সময়ে ম্যাচে টিকে থাকতে হলে কী করে ব্যাট করতে হয়। যেটা করতে পারেননি মুশফিকুর রহিমরা।
চট্টগ্রামের উইকেট। ব্যাটারদের জন্য যথেষ্ট সুবিধাই থাকে এখানে। তবে বাংলাদেশ আগে ব্যাট করতে নেমে হোঁচট খেয়েছে শুরুতেই। লিটন দাস ও তামিম ইকবাল সাজঘরে ফিরেছেন ইনিংসের একদম শুরুতেই। সেখান থেকে পরে বাংলাদেশকে ম্যাচে ফিরিয়ে এনেছেন নাজমুল হোসেন শান্ত ও মুশফিকুর রহিম।
বিপদের সময় এই দুজন দলের হাল ধরেছেন ঠিকই। তাঁদের জুটি বাংলাদেশের মান বাঁচিয়েছে। তবে তাঁদের ইনিংসটা ঠিক কার্যকর হয়ে উঠতে পারেনি। ওই মান বাঁচানো পর্যন্তই সীমাবদ্ধ ছিল। দুজনেই বাইশ গজে অনেকটা সময় নিয়েছেন। ব্যাট করেছেন প্রচন্ড ধীর গতিতে। যা ওয়ানডে ফরম্যাটের সাথে ভীষণ বেমানান।
ফলে চট্টগ্রামের উইকেটেও বাংলাদেশ কখনো বড় স্কোরের জন্য খেলতে পারেনি। ইনিংসে তিনটা অর্ধশতকের পরেও বাংলাদেশের স্কোর সর্বসাকুল্যে ২৪৬। খেলতে পারেনি পুরো ৫০ ওভারও। ফলে তৃতীয় ওয়ানডে ম্যাচেও হারের শঙ্কায় বাংলাদেশ।
মুশফিকুর রহিম অনেকদিন ধরেই রানের দেখা পাচ্ছিলেন না। দলে জায়গাটা ধরে রাখার জন্য হলেও তাঁর একটা বড় ইনিংস খেলা জরুরি হয়ে পড়েছিল। মুশফিক সেটাই করেছেন। এই ইনিংস হয়তো তাঁর অফ ফর্মের আলোচনাটা চাপা দিবে। তবে এই ইনিংসে দলের উপকার হল কতটা সেই প্রশ্ন থেকেই যায়।
একটা ৫০ ওভারের ম্যাচের ৯৩ টা বল তিনি একাই খেলেছেন। তারপর সব মিলিয়ে তিনি করতে পেরেছেন মাত্র ৭০ রান। তাঁর ব্যাটিং স্ট্রাইক রেট ৭৫.২৬। একই কথা প্রযোজ্য নাজমুল হোসেন শান্তর ক্ষেত্রে। তিনিও রান আউট হবার আগে ৭১ বল থেকে করেছেন ৫৩ রান। তাঁর স্ট্রাইক রেটও ৭৫ এর কম।
অথচ বাংলাদেশ যখন নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাচ্ছে সেই সময়ই এক প্রান্ত সামলে ব্যাটিং করেছেন সাকিব। চাপের মাঝে ব্যাটিং করেও তিনি স্ট্রাইকরেটের সাথে আপোষ করেননি। কেননা সাকিব জানেন সাগরিকায় ম্যাচ জিততে হলে গড়তে হবে বড় স্কোর।
ফলে দলের যেমন প্রয়োজন সেই অনুযায়ীই ব্যাটিং করেছেন তিনি। জোফরা আর্চারের বলে আউট হবার আগে করেছেন দলের সর্বোচ্চ ৭৫ রান। তবে সাকিব এই রানের জন্য খেলেছেন মাত্র ৭১ বল। ব্যাটিং করেছেন ১০৫.৬৩ স্ট্রাইক রেটে।
আর এই স্ট্রাইক রেটটাই একটা ভালো ও খারাপ ইনিংসের মধ্যে পার্থক্য বলে দেয়। এখনকার সময়ে রান করাটাই সব সময় বড় কথা নয়। দলের প্রয়োজনে, কোন পরিস্থিতিতে, কীভাবে রান করছেন সেটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আর এই বার্তাটাই দিয়ে যায় সাকিবের ব্যাট, মুশফিক-শান্তদের কাছে পৌঁছাবে তো?