সাকিব আল হাসান, বাংলাদেশ ক্রিকেটের পোস্টার বয়কে রেকর্ড বয়ও বলা হয়। নিত্যনতুন রেকর্ড ভাঙ্গতে আর গড়তে জুড়ি নেই তাঁর। এই যেমন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি হাফসেঞ্চুরি করার মধ্য দিয়ে গড়েছেন বিরল এক কীর্তি। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ব্যাট হাতে ২০০০ রান আর বল হাতে ১০০ এর বেশি উইকেট আছে এমন ক্লাবের প্রথম এবং একমাত্র ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান।
অবশ্য সাকিবের এমন রেকর্ড গড়ার দিনে জিততে পারেনি বাংলাদেশ, এমনকি জেতার মত অ্যাপ্রোচে ব্যাটিংই করতে পারেনি টিম টাইগার্স। ১৯৪ রানের টার্গেটটা একটু বড়, তবে আধুনিক টি-টোয়েন্টিতে এখন এমন সংগ্রহ সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু এর বিপরীতে বাংলাদেশের ব্যাটাররা ছিলেন বড্ড নিষ্প্রাণ।
বিশেষ করে লিটন, বিজয় আর মাহমুদউল্লাহর দ্রুত বিদায়ের পর যেন খোলসে ঢুকে ব্যাটিং করেছিলেন সাকিব আল হাসান। অন্যদিকে আফিফও পারেননি টি-টোয়েন্টি সুলভ ব্যাটিং করতে। আফিফ-সাকিব এই দুই বামহাতির জুটি মোটামুটি দীর্ঘস্থায়ী হয়েছিল, কিন্তু দুইজনেই রান তুলেছেন শম্ভুক গতিতে। আরেকটু ভালভাবে লক্ষ্য করা যাক। মাহমুদউল্লাহ আউট হওয়ার পরে যখন আফিফ ক্রিজে এসেছিলেন তখন বাংলাদেশের রান ছিল তিন ওভারে ২৩।
পাওয়ার-প্লের বাকি তিন ওভার শেষে রান দাঁড়িয়েছিল ৪৪ এ। আরো তিন ওভার শেষে আফিফের একটি চার আর একটি ছয়ের সুবাদে বাংলাদেশ পৌঁছে যায় ৭২ রানে। তখন জয়ের জন্য সমীকরণ ছিল ১১ ওভারে ১২২। সাকিব এবং আফিফ দুইজনই ছিলেন সেট ব্যাটসম্যান। কঠিন হলেও তাই অসম্ভব ছিল না জয়টা।
কিন্তু এরপরই নিজেদের হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশি ব্যাটাররা। বিশেষ করে সাকিব আল হাসান যেন ভুলেই গিয়েছিলেন খেলাটা টি-টোয়েন্টি। ৮.৫ ওভারে আফিফের ছক্কার পর টানা ৪৫ বল আর কোন বাউন্ডারি আসেনি। এরপর ১৬.৩ ওভারে আরেকটা ছয় মেরেছিলেন সাকিব। আর এই ৪৫ বলে ডটবল এসেছিল ১৪টা, বিপরীতে ব্যাটাররা রান করেছেন মাত্র ৩৫ রান। অথচ এই ৪৫ বলে ৩৫ রানের জায়গায় ৭০ রান করতে পারতো বাংলাদেশ।
১০ এর একটু কম রান রেট, অকল্পনীয় কিছু না নিশ্চয়ই। ৩৫ থেকে ৭০, পার্থক্য ৩৫ রানের। এই ৩৫ রানেই কিন্তু হেরেছে বাংলাদেশ। তাই বলাই যায় ম্যাচের সেই ৪৫ বলে বাড়তি ৩৫ রান এলে হয়তো জিতেই যেতে পারতো বাংলাদেশ। অবশ্য ১১ তম ওভারে আফিফের আউট হয়ে যাওয়াটা রানের গতি কমে যাওয়ার কারণ হতে পারে, কিন্তু ২০ বলের বেশি খেলা সাকিবের মাঝে ছিল না বাউন্ডারি আদায়ের চেষ্টা। বরং ডটবলের পাশাপাশি সিঙ্গেল নিয়ে ধীরে ধীরে এগিয়েছেন তিনি। নতুন ব্যাটসম্যানরাও রান রেটের চাপ সামাল দিতে পারেনি।
একটা টি-টোয়েন্টি ইনিংসের তিনভাগের একভাগ ৪০ বল, আর যদি ৪৫ বলেই যদি বাউন্ডারি না আসে সেক্ষেত্রে জয়ের হিসাব করাও প্রহসন বটে। শেষদিকে সাকিব আল হাসান বাউন্ডারি মেরেছিলেন, নিজের হাফসেঞ্চুরি পূরণ করেছেন কিন্তু ততক্ষণে ম্যাচ উইন্ডিজের তালুবন্ধি।
ইনিংসের অর্ধেকের মত বল খেলার পরেও সাকিব আল হাসান ওয়ানডে মেজাজেই ব্যাটিং করেছেন। আস্কিং রানরেটের সাথে তুলনায় সেটাকে কিছুটা স্বার্থপরতা বললেও বাড়াবাড়ি হবে না। তাঁর একটু ইতিবাচক ব্যাটিং জেতাতে না পারলেও অন্তত নির্ধারিত লক্ষ্যের আরো কাছাকাছি পৌঁছে দিতে পারতো লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের।
১৯৪ রানের টার্গেটে ‘অ্যাংকর রোল’ পালনের নামে ক্রমাগত ডট বল দেয়া সমালোচনার কাঠগড়াতেই তুলবে যেকোনো ব্যাটসম্যানকে। সেটা সাকিবের জন্য যেমন সত্য, তেমনি সত্য তামিম, মাহমুদউল্লাহ কিংবা বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের ব্যাটসম্যানদের জন্য। টি-টোয়েন্টিতে ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলাটাই জয়ের মূলমন্ত্র; যতদিন এমন ব্র্যান্ড ক্রিকেট আয়ত্তে আসবে না বাংলাদেশের, ততদিন এই ছোট ফরম্যাটে জয়ের আশা করাটা অমূলক বটে।