শামীম হোসেন পাটওয়ারী যেন এক গ্ল্যাডিয়েটর। হাতের ব্যাটটা যেন উন্মুক্ত তরবারি, হেলমেটটা যেন রাজমুকুট। আবু হায়দার রনির বলটা স্ট্রেট ডাউন দ্য গ্রাউন্ডে বিশাল ছক্কা মেরে মাত্র ২৩ বলেই হাঁকালেন ফিফটি। এরপরেই গ্ল্যাডিয়েটর এর মত বিখ্যাত সেই সেলিব্রেশন করতে দেখা গেল তাকে।
উইকেটের চারদিকে চার ছক্কার বন্যায় ভাসিয়েছেন এদিন তিনি খুলনার বোলাদের। সম্প্রতিই ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ থেকেই ব্যাটিং অ্যাপ্রোচে পরিবর্তন এনেছেন তিনি। লেগ সাইডের দিকেই দক্ষ শামিম সুইপ আর স্কুপের উপরেই নির্ভরশীল ছিলেন এতদিন। উইকেটের সামনের দিকে রান করতেন খুবই কম। তবে ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে গিয়ে বদলে ফেলেছেন নিজের চিরচেনা খোলসটা ৷ ব্যাটের ব্যাকলিফট পজিশনটা নিয়েছে বেশ খানিকটা উঁচুতে, অনেকটা এবিডি ভিলিয়ার্সের মত।
সম্প্রতি গণমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমি এবিডির মত শট খেলতে চাইতাম। হাই পারফর্মেন্স ইউনিটের সাথে অস্ট্রেলিয়া সফরে থাকাকালীন ইউটিউবে তার হাইলাইটস দেখতাম। আমি তার কনুইের পজিশনটা ফলো করেছি। পরবর্তীতে অনুধাবন করলাম, আমার কনুই যদি সোজা থাকে তাহলে আমিও বড় বড় শট খেলতে পারব, তার জন্য আমার দরকার ছিল ভালো ব্যাকলিফটের।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি কখনো এক দিকে খেলতে পটু এমন ব্যাটার হতে চাইনি। যদিও এমন গুঞ্জন আমাকে নিয়ে অনেক আছে, তবে তা সত্য না। টিমের বাইরে থাকাটা সবার জন্যই কষ্টের, তবে আমি ফিরে আসার চেষ্টা করছি।’
ব্যাটিং অ্যাপ্রোচে পরিবর্তন এনে ফলাফল পেয়েছেন তিনি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে খেলেছেন দারুন দুইটি ক্যামিও ইনিংস। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগেও (বিপিএল) ২০২৫ বজায় রেখেছেন সেই পারফর্মেন্সের ধারাটা। মেহেদি হাসান মিরাজকে থার্ড ম্যানে চার আড় লং অনে ছক্কা মেরে বাউন্ডারির খাতা খুলেন শামিম। ২০৪ রানের বিশাল টার্গেটে চাপে পড়ে আট উইকেট হারিয়ে ততক্ষণে ধুঁকছে তার দল চিটাগং কিংস। তবে লড়াইটা চালিয়ে গেলেন তিনি একাই।
সবচেয়ে বেশি চড়াও হলেন নাসুম আহমেদের উপরে। ইনিংসের ১৩তম ওভারটার প্রথম চার বলে দুই ছক্কা আর দুই চার মেরে রীতিমতো পাড়ার বোলারই বানিয়ে ফেললেন তিনি। ফাইন লেগ, ডিপ মিড উইকেট, ডিপ এক্সটা কাভার দিয়ে বলগুলো আছড়ে পড়ল সীমানার বাইরে। ওভার দুয়েক পরে এবার চড়াও হন এনসিএল টি-টোয়েন্টির টুর্নামেন্ট সেরা খেলোয়ার আবু হায়দার রনির উপর। তার ওভারেও মারলেন এক ছক্কা, দুই চার।
এলিস ইসলাম, মোহাম্মদ নাওয়াজ কেওই বাঁচতে পারেননি এদিন শামীমের তাণ্ডব থেকে। শেষ অবধি ৩৮ বলে ৭৮ রানে থামে তার বিধ্বংসী ইনিংস। যাতে ছিল সাতটা বাউন্ডারি আর পাঁচটা ওভার বাউন্ডারি। যদিও এতে পরাজয়ের বেদনা এড়াতে পারেননি তিনি। তবুও শামীমের এই তুফানি ব্যাটিংয়ে আশা জাগছে দেশের ক্রিকেটের ভক্ত-সমর্থকদের মনে। তিনি যেন সত্যিকারের ফিনিশার হিসাবেই নিজেকে প্রস্তুত করে ফেলছেন।