সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে বাংলাদেশকে বড় লক্ষ্য ছুঁড়ে দিয়েছিল জিম্বাবুয়ে। আগের ম্যাচে রান তাড়ায় আত্মসমর্পণ করায় আজও ছিল শঙ্কার মেঘ। সেই বিপদে আলোর দিশা হয়ে ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসে দলের জয়ের ভিত গড়ে দেন সৌম্য সরকার। আর দারুণ ব্যাটিংয়ে শেষের সমীকরণ মিলিয়ে দলের জয় নিশ্চিত করেন শামিম হোসেন পাটোয়ারি।
ব্যাটসম্যানদের নৈপুণ্যে ৪ বল হাতে রেখেই সিরিজের শেষ টি-টোয়েন্টিতে জিম্বাবুয়েকে ৫ উইকেটে হারিয়ে টেস্ট ও ওয়ানডে সিরিজ জেতার পর টি-টোয়েন্টি সিরিজও জিতে নিলো বাংলাদেশ। আজ ৪৯ বলে ৬৮ রান করা সৌম্য পুরো সিরিজেই ছিলেন ব্যাটে বলে দুর্দান্ত। আগের ম্যাচে ঝড়ো ইনিংস খেলে দলকে জেতাতে না পারলেও আজ ১৫ বলে ৩১ রান করে দলের জয় নিশ্চিত করেই মাঠ ছাড়েন শামিম।
তবে ১৯৪ রান তাড়া করতে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি বাংলাদেশের। ইনিংসের তৃতীয় ওভারেই ব্লেসিং মুজারাবানির অফ স্টাম্পে পিচ করে বের হয়ে যাওয়া বলে টাইমিং মিস করে ফিরে যান নাঈম শেখ। দলীয় ২০ রানে ৭ বলে ৩ রান করে এই ওপেনার ফিরে যাওয়ার পর দলের হাল ধরেন সৌম্য সরকার ও সাকিব আল হাসান।
দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে দুজন যোগ করেন ৩২ বলে ৫০ রান। দারুণ ব্যাট করতে থাকা সাকিব টানা তৃতীয় ছয় মারতে গিয়ে ফিরে গেলে ভাঙে এই জুটি। লুক জঙ্গের অফ কাটারে টাইমিংয়ে গড়বড় করে সীমানায় ধরা পড়ার আগে এই অলরাউন্ডারের ব্যাট থেকে আসে ১৩ বলে ২৫ রান। সাকিব ফিরে যাওয়ার পরেও থেমে থাকেনি বাংলাদেশের রানের গতি।
তৃতীয় উইকেট জুটিতে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে নিয়ে দলকে মাত্র ৩৫ বলে ৬৩ রান এনে দেন সৌম্য। ক্যারিয়ারের চতুর্থ হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন এই ওপেনার। তবে এরপর বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি তিনি। জঙ্গের ফুল লেংথ বল হাঁটু গেড়ে ছয় মারতে গিয়ে মুসাকান্দার হাতে ধরা পড়ে সৌম্য বিদায় নেন ৪৯ বলে ৬৮ রান করে।
এরপর আফিফ হোসেন ৫ বলে ১৪ রান করে ফিরে গেলে ১৫০ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে বাংলাদেশ। তখনও জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ২৬ বলে ৪৪ রান। ১৮ বলে ৩৭ রান যোগ করে ম্যাচ নিয়ন্ত্রণে এনে দেন শামিম হোসেন পাটোয়ারি ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ২৮ বলে ৩৪ রান করে মাহমুদউল্লাহ ফিরে গেলেও দলের জয় নিশ্চিত করে মাঠ ছাড়েন শামিম।
মাত্র ১৫ বলে ৩১ রান করে অপরাজিত থাকেন শামিম। জিম্বাবুয়ের বোলারদের ভিতর দুটি করে উইকেট শিকার করেন লুক জঙ্গে ও ব্লেসিং মুজারবানি।
এর আগে টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে জিম্বাবুয়েকে উড়ন্ত শুরু এনে দেন দুই ওপেনার তাদিওয়ানাশে মারুমানি ও ওয়েসলি মাধেভেরে। মাত্র ৪.২ ওভারেই দলকে পঞ্চাশ রান এনে দেন দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান। উড়তে থাকা জিম্বাবুয়ের ইনিংসে পাওয়ার প্লের শেষ বলে আঘাত হানেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন।
এই পেসারের মিডল স্টাম্পে থাকা লেংথ বল খেলতে গিয়ে লাইন মিস করে বোল্ড হয়ে যান মারুমানি। ২০ বলে ২৭ রান করে এই ওপেনার ফিরে গেলে ভাঙে ৬৩ রানের উদ্বোধনী জুটি। উইকেট হারালেও রানের গতি থেমে থাকেনি জিম্বাবুয়ের। উইকেটে এসেই ঝড় তোলেন রেগিস চাকাভা আর তাকে সঙ্গ দেন মাধাভারে। মাত্র ২৮ বলেই পঞ্চাশ রান আসে এই জুটি থেকে।
শামিম হোসেন পাটোয়ারি ও নাঈম শেখের যৌথ প্রচেষ্টায় চাকাভার ঝড় থামে ইনিংসের দ্বাদশ ওভারে। সৌম্য সরকারের অফ স্টাম্পের বাইরের বল উড়িয়ে মারেন চাকাভা। সীমানায় বলের দিকে চোখ রেখে ক্যাচ ধরেন নাঈম। কিন্তু ব্যালেন্স রাখতে না পেরে বল ছুঁড়ে মারেন মাঠে। পেছন থেকে বল মুঠোবন্দী করেন শামিম।
২২ বলে ৪৮ রান করে চাকাভা ফিরে যাওয়ার পর ৩১ বলে টানা দ্বিতীয় হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন মাধেভেরে। তবে এরপর আর বেশি দূর যেতে পারেননি এই ওপেনার। সাকিব আল হাসানের মিডল স্টাম্পের বল রিভার্স সুইপ করে শর্ট থার্ড ম্যানে শরিফুল ইসলামের হাতে ক্যাচ দিয়ে ৩৬ বলে ৫৪ রান করে ফিরে যান তিনি।
এরপর সৌম্যর গুড লেংথের অ্যাঙ্গেলে ভেতরে ঢোকা বলে লাইন মিস করে সিকান্দার রাজা শূন্য রানে ফিরে যাওয়ার পর ডিয়ন মেয়ার্সকে শরিফুল ইসলাম ফিরিয়ে দিলেও রানের গতি থামেনি জিম্বাবুয়ের। শেষের দিকে রায়ান বার্লের ১৫ বলে অপরাজিত ৩১ রানে ভর করে ২০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ১৯৩ রানের বড় সংগ্রহ পায় জিম্বাবুয়ে। মেয়ার্স করেন ২১ বলে ২৩ রান।
বাংলাদেশের বোলারদের ভিতর সবচেয়ে সফল ছিলেন সৌম্য সরকার। ৩ ওভারে ১৯ রান দিয়ে ২ উইকেট শিকার করেন তিনি। এছাড়া সাকিব আল হাসান, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ও শরিফুল ইসলাম একটি করে উইকেট পেয়েছেন।
- সংক্ষিপ্ত স্কোর
জিম্বাবুয়ে: ১৯৩/৫ (ওভার: ২০; মাধেভেরে- ৫৪, মারুমানি- ২৭, চাকাভা- ৪৮, মায়ার্স- ২৩, বার্ল- ৩১) (সাকিব- ৪-০-২৪-১, সৌম্য- ৩-০-১৯-৩)
বাংলাদেশ: ১৯৪/৫ (ওভার: ১৯.২; নাঈম- ৩, সৌম্য- ৬৮, সাকিব- ২৫, মাহমুদউল্লাহ- ৩৪, আফিফ- ১৪, শামিম- ৩১*) (মুজারাবানি- ৪-০-২৭-২, জঙ্গে- ৩-০-৪২-২)
ফলাফল: বাংলাদেশ ৫ উইকেটে জয়ী।