শাণ দেওয়া শানের ব্যাট

গত কয়েক বছরে জীবনের বিভিন্ন রূপ দেখেছেন। প্রতিভাবান ব্যাটসম্যান হিসেবে জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছেন। আবার সুযোগ কাজে না লাগানোর মূল্য চুকাতে দল থেকে বাদও পড়েছেন। মাঝে বোনের মৃত্যু বদলে দিয়েছে তার জীবনদর্শন। তবু ফিরে এসেছেন, ঘরোয়া লিগ কিংবা কাউন্টি সবখানেই রান করে নির্বাচকদের বাধ্য করেছেন দলে ডাকতে। টপ অর্ডারে ধীরগতির ব্যাটিং কিংবা মিডল অর্ডারের ফর্মহীনতায় ভোগা পাকিস্তানের এবারের বিশ্বকাপে ট্রাম্পকার্ড হয়ে উঠতে পারেন শান মাসুদ।

জাতীয় দলে আসার আগেই প্রতিভাবান ব্যাটসম্যান হিসেবে ঘরোয়া ক্রিকেটে নামডাক ছিল শান মাসুদের। ফলে টেস্ট আর ওডিয়াইতে পাকিস্তানের হয়ে অভিষেক খুব একটা সময় লাগেনি। কিন্তু তরুণ মাসুদ সেসময় ভালো করতে পারেননি, ফলে ছিটকে যান জাতীয় দলের দৌড় থেকে। ঘরোয়া ক্রিকেটেও সে সময়টাতে পুরনো ছন্দ ফিরে পাচ্ছিলেন না। এরমাঝে পরলোকগমন করেন তার বোন।

বোনের মৃত্যুতে শুরুতে ভেঙে পড়েছিলেন শান, পুরো পৃথিবী যেন একাকী হয়ে গিয়েছিল তার জন্য। কিন্তু ধীরে ধীরে ফিরে পেয়েছেন নিজেকে, মানসিকভাবে আরো দৃঢ় হয়েছেন। বুঝতে শিখেছেন জীবনের অর্থ। গত একবছর ধরে ছিলেন নিজের চূড়ান্ত ফর্মে, যে টুর্নামেন্টেই খেলেছেন ছিলেন রান তালিকার শীর্ষে। ঘরোয়া কায়েদে আজম ট্রফি হোক কিংবা ইংল্যান্ডের কাউন্টি, সবখানেই রান করে গেছেন সমানতালে।

শান মাসুদ বলেন, ‘একটা সময় আমি ভেবেছিলাম আমি আর কখনো পাকিস্তানের হয়ে খেলতে পারবো না। কিন্তু জীবন আশ্চর্যময়। কখন কি ঘটবে আপনি কখনোই আন্দাজ করতে পারবেন না। জীবনকে বুঝতে পারার জন্য আমাকে খুব বেশি পেছনে ফিরে তাকাতে হয় না, গতবছর আমার বোনের মৃত্যু কথা মনে পড়ে।’

‘এরপরই আমি বুঝতে পারি জীবনের অর্থ এবং গুরুত্ব। এরপর আমি যেখানেই খেলার সুযোগ পেয়েছি, ক্রিকেটাকে উপভোগ করতে চেয়েছি। আর অবশ্যই জাতীয় দলের প্রতিনিধিত্ব করার চাইতে ভালো কিছু হতেই পারে না।’, যোগ করেন তিনি।

শান সর্বশেষ পাকিস্তানের হয়ে মাঠে নামেন ২০২১ সালের জানুয়ারি, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টে। এরপরই দল থেকে বাদ পড়েন। বোনের মৃত্যুর পর থেকে ক্রমাগত রান করতে শুরু করেন তিনি। সর্বশেষ কায়েদ ই আজম ট্রফিতে প্রায় ৭০ গড়ে রান করার পাশাপাশি পিএসএলের সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহকদের একজন ছিলেন তিনি। এরপর ডার্বিশায়ারের হয়ে খেলতে ইংল্যান্ডে পাড়ি জমান। সেখানেও রান করে গেছেন নিয়মিত। পাকিস্তান জাতীয় দলে ডাক পাবার আগে জাতীয় টি টোয়েন্টি লিগের নয় ম্যাচে করেছেন দুই ফিফটি। সমালোচক এবং পাকিস্তান ক্রিকেটের সমর্থকদের মতে শান আরো আগেই জাতীয় দলে ডাক পাবার যোগ্য ছিলেন, এতদিন তাঁকে অবহেলা করা হয়েছে। 

কুয়েতে জন্ম নেয়া শান অবশ্য এতকিছু ভাবেন না, অন্যের উপর দোষ না চাপিয়ে তিনি চান নিজের দায়িত্বটা ঠিকভাবে পালন করে যেতে। মূলত টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান হলেও শান এবার দলে সুযোগ পেয়েছেন মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান হিসেবে। তিনি অবশ্য এটাকে ইতিবাচকভাবেই দেখছেন। দল থেকে যে পজিশনই দেয়া হোক, নিজের সেরাটা দিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান।

‘শান মাসুদের মতে, ‘এটা আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার নয়, এটা পাকিস্তান জাতীয় দলের ব্যাপার। আমাকে যে পজিশনেই খেলতে বলা হোক, আমি সেখানেই প্রস্তুত। এবং ভালো করতে না পারলে সেটা একান্তই আমার ব্যর্থতা, ব্যাটিং অর্ডার কিংবা অন্য কারো নয়। এর আগেও আমি নিজের ভুলেই দল থেকে বাদ পড়েছি।’

নিজেকে ভিন্নরূপে ফিরে পেতে ইংল্যান্ডে কাটানো গত এক বছরের কথা স্মরণ করেন তিনি। তার ভাষায় কাউন্টি তাকে নিজেকে নিয়ে নতুন করতে ভাবতে সাহায্য করেছে। এছাড়া পিএসএলে বিশ্ব ক্রিকেটের বড় সব তারকার সাথে ড্রেসিংরুম শেয়ার করেও অনেক কিছু শিখেছেন বলে জানান তিনি। বলেন, ‘বিশ্বকাপের জন্য টি টোয়েন্টি দলে জায়গা পাওয়াটা অবশ্যই বিশেষ কিছু আমার ক্যারিয়ারের জন্য। পিএসএল এবং ভিটালিটি ব্লাস্টে (ইংল্যান্ডের ঘরোয়া টি টিয়েন্টি লিগ) পারফর্ম করাটা এক্ষেত্রে আমাকে নিজের আত্নবিশ্বাস ফিরে পেতে সাহায্য করেছে। বড় টুর্নামেন্টগুলোতে খেলা আমার অভিজ্ঞতা বাড়িয়েছে। ক্রিকেটার হিসেবে আমাকে আরো পরিণত হতে সাহায্য করেছে।’

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টি টিয়েন্টি সিরিজ কিংবা অস্ট্রেলিয়ায় টি টিয়েন্টি বিশ্বকাপ – দুই জায়গাতেই রান করতে চান শান। এশিয়া কাপের ফাইনালে হেরে ব্যাকফুটে থাকা পাকিস্তানও তাই চাইবে। এমনিতেই ওপেনিং জুটি আর ভঙ্গুর মিডল অর্ডার নিয়ে সমালোচনার মুখে আছে বাবর আজমের পাকিস্তান। শান মাসুদ যদি তার ঘরোয়া ক্রিকেটের ফর্ম জাতীয় দলে নিয়ে আসতে পারেন, তবেই হাসি ফুটবে পাকিস্তান সমর্থকদের মুখে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link