জুভেন্টাসের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ অভিশাপ

দলটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগে সর্বশেষ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ১৯৯৫/৯৬ মৌসুমে। এরপর থেকেই অদ্ভুত এক অভিশাপ এসেছে জুভেন্টাসের ভাগ্যে, ইউরোপীয় টুর্নামেন্টে বারবার ব্যর্থ হয়েছে তারা

উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ – ইউরোপীয় ফুটবলে সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ শিরোপা। কিন্তু আরাধ্য এই শিরোপা শেষ কবে জিতেছে ইতালিয়ান জায়ান্ট জুভেন্টাস, এমন প্রশ্নে সহসা উত্তর দিতে পারবেন এমন মানুষ বোধহয় হাতেগোনা কয়েকজন৷ কেননা চলতি শতকে এখন পর্যন্ত তুরিনের বুড়িরা রূপালি ট্রফির ছোঁয়া পায়নি। দলটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগে সর্বশেষ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ১৯৯৫/৯৬ মৌসুমে।

এরপর থেকেই অদ্ভুত এক অভিশাপ এসেছে জুভেন্টাসের ভাগ্যে, ইউরোপীয় টুর্নামেন্টে বারবার ব্যর্থ হয়েছে তারা। ২০২২/২৩ মৌসুমে ইতোমধ্যে দুই ম্যাচ খেলা জুভেন্টাস, দুইবারই পরাজয়ের স্বাদ পেয়েছে। দুর্দান্ত স্কোয়াড, প্রজন্মের সেরা খেলোয়াড় কোন কিছুই তাদের ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে বের করতে পারেনি।

  • ১৯৯৫/৯৬ (বিজয়) 

১৯৯৬ সালের ২২ মে ইতালির রোমে অনুষ্ঠিত হয়েছিল উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনাল। সেবার জুয়ানলুচা ভিয়ালি জুভেন্টাসের হয়ে উঁচিয়ে ধরেছিলেন ইউরোপীয় শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট। ডাচ ক্লাব আয়াক্সকে টাইব্রেকারে ৪-২ গোলে হারিয়ে এই গৌরব অর্জন করে তারা, কিন্তু সেটাই শেষ৷ এরপর আর এমন দৃশ্যের দেখা পায়নি জুভেন্টাস ভক্তরা। এই সময়ে মোট পাঁচবার ফাইনাল খেলে প্রতিবারই হয়েছে রানার আপ।

  • ১৯৯৬/৯৭ থেকে ১৯৯৯/২০০০ (হতাশা আর লজ্জা) 

চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরের আসরেই আবারো ফাইনালে উঠেছিল জুভেন্টাস। কিন্তু বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের কাছে ৩-১ গোলে হেরে যায় দলটি৷ ১৯৯৭/৯৮ মৌসুমে একটানা তৃতীয়বারের মত ফাইনালে জায়গা করে নেয় তুরিনের ক্লাবটি৷ কিন্তু এবারও হতাশায় শেষ হয় চ্যাম্পিয়ন্স লিগ মিশন, রিয়াল মাদ্রিদের কাছে ১-০ গোলে হেরে বসে তারা।

১৯৯৮/৯৯ মৌসুমের চ্যাম্পিয়ন্স লিগে শুরুটা ভালোভাবেই করেছিল জুভেন্টাস, তবে এবার থামতে হয়েছিল সেমিফাইনালে। হতাশাজনক তিন আসর কাটানোর পর ১৯৯৯/২০০০ মৌসুম ইতালিয়ান জায়ান্টদের উপহার দেয় লজ্জা। কেননা সেই মৌসুমে তারা ইউরোপীয় টুর্নামেন্টে খেলার যোগ্যতা-ই অর্জন করতে পারেনি।

  • ২০০০/০১ থেকে ২০০৯/১০ (একই গল্পের পুনরাবৃত্তি)

সব ব্যর্থতা ঝেড়ে ফেলে একুশ শতকে নতুন করে শুরু করতে চেয়েছিল জুভেন্টাস। কিন্তু এবারও মেলেনি ভাগ্যের সুদৃষ্টি, ২০০০/০১ মৌসুমে গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নেয় ডেল পিয়েরোর দল। পরের বছর জিয়ানলুইজি বুফন, ফ্যাবিও ক্যানভেরো, পাভেল নেদভেদ এর মত তারকা ফুটবলারদের দলে ভিড়িয়েছিল বিয়ানকোনেরিরা। কিন্তু ফলাফলে আসেনি পরিবর্তন।

২০০২/০৩ মৌসুমে পুনরায় শ্রী ফিরে আসে জুভেন্টাস শিবিরে, পৌঁছে যায় চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে। কিন্তু স্বদেশী ক্লাব এসি মিলানের বিপক্ষে আরো একবার হৃদয় ভাঙ্গে সমর্থকদের। গোলশূন্য ড্র শেষে টাইব্রেকারে ৩-২ গোলে পরাজিত হয় জুভেন্টাস। এর পরের তিন মৌসুমে জুভেন্টাস এর ভাগ্য ছিল একই রকম। তিন বারের দুইবার রাউন্ড অব সিক্সটিন এবং একবার কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় নেয় তারা।

২০০৬/০৭ এবং ২০০৭/০৮ মৌসুম অবশ্য আরো বাজে কেটেছে জুভেন্টাসের। এই দুই মৌসুমে তারা জায়গা করে নিতে পারেনি ইউরোপীয় টুর্নামেন্টটিতে। পরের আসরে খেলার সুযোগ পেলেও শেষ ষোলো থেকে ছিটকে যায় তুরিনের বুড়িরা। আবার ২০০৯/১০ মৌসুমে গ্রুপ পর্বের বাঁধাই ডিঙ্গাতে পারেনি।

  • ২০১০/১১ থেকে ২০১৯/২০ (ঘটনাবহুল এক দশক)

নতুন দশকের শুরুটা মোটেই সুখকর ছিল না জুভেন্টাসের জন্য। পরপর দুই আসরে তারা উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগে খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে ব্যর্থ হয়। তবে ২০১২/১৩ মৌসুমে আবারো মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে দেখা মেলে সাদা-কালো জার্সির৷ কিন্তু এবারও কোয়ার্টার ফাইনালে থেমে যায় আন্দ্রে পিরলো,বনুচ্চিরা। পরের বছর গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিলেও ২০১৪/১৫ মৌসুমে অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠে বিয়ানকোনেরিরা।

দীর্ঘ বারো বছর পর চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে উঠে আসে তারা, কিন্তু নেইমার-মেসির দাপটে বার্সেলোনার বিপক্ষে প্রতিরোধ গড়তে পারেনি ম্যাসেমিলিয়ানো অ্যালেগ্রির শিষ্যরা।

পরের মৌসুমে নাটকীয়তার মুখোমুখি হয় জুভেন্টাস। রাউন্ড অব সিক্সটিনে বায়ার্ন মিউনিখের বিপক্ষে দুই গোলের ব্যবধানে এগিয়ে থেকেও শেষ মুহূর্তে হারতে হয় তাদের। যদিও ২০১৬/১৭ মৌসুমে পুনঃরায় চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপার অন্তিম লড়াইয়ে মাঠে নামে ইতালির প্রতিনিধিরা। তবে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর জোড়া গোলে তাদের বিপক্ষে জয় তুলে নেয় রিয়াল মাদ্রিদ। আরো একটি ফাইনাল, আরো একবার মাথা নিচু করে মাঠে ছাড়ে বুফন,কিয়েলিনিরা।

পরের আসরেও পর্তুগিজ কিংবদন্তির দাপুটে পারফরম্যান্সে জুভেন্টাসকে হারিয়ে দেয় রিয়াল মাদ্রিদ। এবার অবশ্য লড়াইটা হয়েছিল কোয়ার্টার ফাইনালে

নিজেদের বিপক্ষে রোনালদোর এমন ফর্ম দেখে তাকেই কিনে নেয় জুভেন্টাস। কিন্তু তাদের ভাগ্য বদলাতে পারেননি এই ফরোয়ার্ড। নক আউট ম্যাচে নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। ২০১৮/১৯ মৌসুমে কোয়ার্টার ফাইনালে রোনালদোর গোল সত্ত্বেও আয়াক্সের কাছে হেরেছিল বিয়ানকোনেরিরা। পরের মৌসুমে শেষ ষোলোর ম্যাচে পর্তুগিজ তারকার জোড়া গোলও জুভেন্টাসকে বাদ পড়া থেকে রক্ষা করতে পারেনি।

  • ২০২০/২১ থেকে ২০২২/২৩ (অভেদ্য ব্যর্থতার বৃত্ত)

২০২০/২১ আসরে রোমাঞ্চকর এক ম্যাচে পোর্তোর বিপক্ষে ৪-৪ গোলে ড্র করলেও অ্যাওয়ে গোলের সুবাদে পরের রাউন্ডে চলে যায় পোর্তো, আর ছিটকে যায় রোনালদোর জুভেন্টাস। এরপরই ক্লাব ছাড়েন রোনালদো, দলে আসে আরেক তরুণ স্ট্রাইকার দুসান ভ্লাহোভিচ। কিন্তু কোন সাফল্য দেখা দেয়নি, ২০২১/২২ মৌসুমে ভিয়ারিয়ালের কাছে অপ্রত্যাশিত এক হারের তিক্ত অভিজ্ঞতা হয় জুভেন্টাসের। চলতি আসরেও টানা দুই পরাজয়ের ফলে এখন সুতোয় ঝুলছে তুরিনের বুড়িদের ভাগ্য।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...