নব্বইয়ের দশকে দক্ষিণ আফ্রিকা তথা ওই সময়ের অন্যতম সেরা স্টাইলিশ ব্যাটার হিসেবে পরিচিত ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার ড্যারিল কালিনান। পেসার বিপক্ষে ছিলেন দুর্দান্ত একজন। ক্রিকেট বিশ্বের প্রায় দলগুলোর বিপক্ষে কালিনানের রেকর্ড ছিল দুর্দান্ত। তবে ভিন্ন অবস্থান ছিলো অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে! অজিদের বিপক্ষে কালিনানের পরিসংখ্যান ছিলো চরম বাজে! আর এর পেছনের বড় কারণ ছিলো শেন ওয়ার্ন!
ক্রিকেট পাড়ায় সেরা দ্বৈরথগুলোর একটি ছিল ওয়ার্ন-কালিনান! পুরো ক্যারিয়ারে ১২ বার ওয়ার্নের হাতে ধরা খেয়েছেন কালিনান। ওয়ার্নের সামনে যেনো না পড়লেই বেচে যেতেন এই প্রোটিয়া তারকা। ওয়ার্নকে খেলার কোনো কৌশলই কখনো কাজে লাগেনি কালিনানের। অপরদিকে, কালিনানকে পেলেই যেন ওয়ার্নের উইকেট শিকারের ক্ষুধা আরো বেড়ে যেতো! কালিনানকে শিকারের এক ভিন্ন রকম লালসা সব সময়ই কাজ করতো ওয়ার্নের মাঝে।
দক্ষিণ আফ্রিকান এই ব্যাটার খেলেছেন ৭০-এর বেশি টেস্ট। ৪৪.২১ গড়ে ২০ হাফ সেঞ্চুরি আর ১৪ সেঞ্চুরি করেছেন তিনি। এছাড়া ১৩৮ ওয়ানডেতে ৩৩ গড়ে আছে ৩ সেঞ্চুরি ও ২৩ হাফ সেঞ্চুরি। তবে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে কালিনানের রেকর্ড বেশ হতাশাজনক! অজিদের বিপক্ষে খেলেছেন সাত টেস্ট। এই সাত টেস্টে ১৩ ইনিংসে মাত্র ১৩ গড়ে করেছেন মোটে ১৫৩ রান, সর্বোচ্চ স্কোর ৪৭!
অজিদের বিপক্ষে কালিনানের এমন হতশ্রী পারফরম্যান্সের পেছনে মূল ভূমিকাটা ওয়ার্নের! টেস্ট ও ওয়ানডে মিলিয়ে মোট ২৯ ম্যাচে ১২ বার কালিলানকে শিকার করেছেন ওয়ার্ন! ওয়ার্নের বিপক্ষে কখনোই থিতু হতে পারেননি এই প্রোটিয়া ব্যাটার। ওয়ার্ন জুজুতে অজিদের বিপক্ষে কালিনান কখনোই খেলতে পারেননি বড় ইনিংস! নব্বই দশকের সেরা এই প্রোটিয়া ব্যাটার ওয়ার্নের সামনে ছিলেন অসহায়।
কালিনান যদি কখনো ওয়ার্নের মুখোমুখি না হতেন তাহলে তাঁর ক্যারিয়ারে ব্যাটিং গড় হতো প্রায় ৪৯! লেগ স্পিনের বিপক্ষে সবসময়ই নড়বড়ে ছিলেন কালিনান। এমনকি লেগ স্পিনারদের বিপক্ষে খেলার জন্য মনোবিজ্ঞানীর সাথেও পরামর্শ করেছিলেন তিনি!
একবার এক টেস্টে ক্রিস হ্যারিসের প্রথম বলেই ব্যাকফুটে এসে ডিফেন্ড করেন কালিনান। এরপরই উইকেটের পেছন থেকে অ্যাডাম পেরোরে হ্যারিসকে লক্ষ্য করে বলেন, ‘ভাল বল ছিল, ওয়ার্নি!’, এক সাক্ষাৎকারে অবশ্য কালিনান স্বীকারও করেন ওয়ার্নের বিপক্ষে তিনি অসহায় হয়ে পড়েন। কালিনান বলেন, ‘ওয়ার্ন আমার জন্য খুব বেশিই ভালো!’
ওয়ার্ন-কালিনানের স্লেজিংও ক্রিকেট পাড়ায় বেশ পরিচিত। একবার দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে প্রথম ম্যাচেই কালিনানের উইকেট শিকারের পর ওয়ার্ন বলেন, ‘তোমার দেশের মানুষের সামনে তোমার উইকেট শিকারের জন্য দুই বছর ধরে অপেক্ষা করে আছি।’
প্রতিত্তোরে কালিনান বলেন, ‘দেখে মনে হচ্ছে তুমি এই সময়টা খেয়ে পার করেছো!’ কালিনানের এমন উত্তরের কারণ ছিল সে সময় ওয়ার্নের ওজন পূর্বের তুলনায় বেশ বেড়ে গিয়েছিলো!
কালিনান-ওয়ার্ন জুটি ক্রিকেট পাড়ায় সর্বকালের সেরা দ্বৈরথ হিসেবে টিকে থাকবে দীর্ঘসময়। কিছুদিন আগেই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে পরপারে পাড়ি জমান কিংবদন্তি অস্ট্রেলিয়ান লেগ স্পিনার শেন ওয়ার্ন। মাত্র ৫২ বছর বয়সেই হুট করে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি। কাকতালীয়ভাবে ওয়ার্নের মৃত্যুর দিনই ছিল তাঁর সবচেয়ে প্রিয় বানি ড্যারেল কালিনানের জন্মদিন! নিশ্চয়ই, মাঠের প্রতিদ্বন্দ্বীর এমন বিদায় চাননি কালিনান।