সাকিব আল হাসান, বাংলাদেশ ক্রিকেটের পোস্টার বয়কে রেকর্ড বয়ও বলা হয়। নিত্যনতুন রেকর্ড ভাঙতে আর গড়তে জুড়ি নেই তার। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটেও সেরাদের একজন তিনি। ক্রিকেটের এই সংস্করণে ব্যাট হাতে ২০০০ রান আর বল হাতে ১০০ এর বেশি উইকেট আছে এমন ক্লাবের প্রথম এবং একমাত্র ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান।
আসন্ন এশিয়া কাপ এবং টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপকে সামনে রেখে সাকিব আল হাসানকে বাংলাদেশের নতুন অধিনায়ক করা হয়েছে। আর এই ব্যাপারে এবার নিজের মতামত জানিয়েছেন আরেক কিংবদন্তি অলরাউন্ডার শেন ওয়াটসন। ‘দ্য আইসিসি রিভিউ’-এর একটি ভিডিওতে সাকিবের প্রতি নিজের মুগ্ধতা প্রকাশ করেন তিনি।
সাকিবকে বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক করার সিদ্ধান্তটি সঠিক হয়েছে কি না এমন প্রশ্নে শুরুতেই বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের নেতৃত্ব গুণের কথা তুলে ধরেন ওয়াটসন। সাকিবের অভিজ্ঞতা, মানসিকতা সতীর্থদের দারুণভাবে অনুপ্রাণিত করে বলে মনে করেন সাবেক এই ক্রিকেটার। তাই এই মুহূর্তে সাকিবের হাতে নেতৃত্বভার তুলে দিয়ে সঠিক কাজটি করেছে বাংলাদেশ এমনটাই ধারনা তাঁর।
তিনি বলেন, ‘সাকিবের নেতৃত্বগুণে ওরা (বাংলাদেশ দল) আবারও পুরো শক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারবে। ও খুব অভিজ্ঞ। আগেও বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়েছে। ফ্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটেও অধিনায়কত্ব করার অভিজ্ঞতা আছে।’
চাপের মুখে সাকিবের সিদ্ধান্ত গ্রহনের ক্ষমতা ঈর্ষণীয়। সেই সাথে বড় মঞ্চে নিজেকে প্রমাণ করার যে জেদ এই বামহাতির মাঝে আছে সেটাও অনন্য। এসব জানেন অজি অলরাউন্ডার। তাই সামনের এশিয়া কাপ এবং টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সাকিবকে নিজের সেরা ফর্মে দেখবেন বলেই আশা করছেন তিনি।
এই অজি গ্রেট বলেন, ‘চাপের মুখে ওর সিদ্ধান্ত দেওয়ার ক্ষমতাটা যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ – তা বলে বোঝানো যাবে না। আর ওর নিজেকে প্রমাণ করার তাগিদ আছে। আর বিশ্ব সেরাদের মাঝে যখন নিজেদের প্রমাণের আগুনটা থাকে তখন ওরাই আধিপত্য দেখায়। ও যদি এশিয়া কাপ আর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সাকিব পারফর্ম করতে না পারলে খুবই অবাক হবো।’
একজন অলরাউন্ডার হওয়ায় শেন ওয়াটসন জানেন মাঠে আসলে কতটা সংগ্রাম করতে হয় একজন অলরাউন্ডারকে। বিশেষ করে বর্তমানের ব্যস্ত সূচিতে প্রতিনিয়ত নিজের সেরাটা দিয়ে যাওয়া একজন অলরাউন্ড ক্রিকেটারের জন্য বেশ কঠিন কাজ। আর এই কঠিন কাজটাই বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে করে যাচ্ছেন বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি কাপ্তান।
এমনকি ক্যারিয়ারের এক পর্যায়ে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিলের অলরাউন্ডার র্যাংকিংয়ে শেন ওয়াটসন আর সাকিব আল হাসানের মাঝে হয়েছে প্রতিদ্বন্দ্বিতা। তবে ক্রিকেটের তিন সংস্করণ মিলিয়ে অজি ক্রিকেটারকে ছাড়িয়ে গিয়েছেন বাংলাদেশের সাকিব।
দলের ব্যাটিং লাইনআপে অন্যতম বড় ভরসা, বোলিংয়ের সময় আবার ফ্রন্টলাইন বোলার – এই বাড়তি দায়িত্বগুলো সাকিব আল হাসান পালন করছেন সুনিপুণভাবেই। এই কারনেই সাকিবের অর্জনগুলো শেন ওয়াটসনের কাছে আরো বেশি মোহনীয়।
তিনি বলেন, ‘নিজের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, অলরাউন্ডার হওয়া খুব চ্যালেঞ্জিং। বিশেষ করে যখন আপনি দিনের পর দিন খেলে যাচ্ছেন। নিজের শরীরের দিকে তাকিয়ে নিজের মধ্যে শক্তি জমিয়ে রাখতে হয়। সাকিব এই কাজটাই করেছে। মনে হতে পারে যে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি বাঁ-হাতি স্পিন করাটা খুব বড় ঝক্কি নয়। কিন্তু উপমহাদেশে আপনাকে স্পিনার হলে প্রচুর বোলিং করতে হয়, যেটা সাকিব করেছে। আর ও ব্যাটিংয়েও দলের মধ্যমণি।’
আধুনিক ক্রিকেটের এই যুগে ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটের দৌরাত্ম বেড়েছে। সেই সাথে বেড়েছে আন্তর্জাতিক ম্যাচ সংখ্যা। সাম্প্রতিক সময়ে ক্রিকেটে ব্যস্ত সূচির কারণে অনেক ক্রিকেটারই এখন কোন না কোন সংস্করণ থেকে অবসর নিয়ে নিচ্ছেন। সাম্প্রতিক সময়ে নিউজিল্যান্ডের পেসার ট্রেন্ট বোল্ট টানা ম্যাচ খেলার ধকল সামলাতে কিউই বোর্ডের চুক্তি থেকে নিজেকে সরিয়ে রেখেছেন।
আবার এর আগে ইংল্যান্ডের তারকা অলরাউন্ডার বেন স্টোকস ওয়ানডে ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছেন। অথচ ২০০৬ সালে অভিষেকের পর থেকে ক্লান্তিহীন ভাবে তিন ফরম্যাটে সমানতালে সফলতা অর্জন করে যাচ্ছেন সাকিব আল হাসান। আবার সেই সাথে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল), বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) আরো বেশ কিছু টি-টোয়েন্টি লিগেও খেলেছেন তিনি। এমন একজন খেলোয়াড়কে তাই ‘বিশেষ’ বলতেই হয়েছে শেন ওয়াটসনকে।
ওয়াটসন বলেন, ‘সাকিব তিনটা ফরম্যাটেই খেলে। আর এখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ম্যাচের সংখ্যা বেড়েছে। সাথে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট আছে। সাকিবের মত সব ফরম্যাট এত দিন সফলতার সাথে খেলতে পারা ক্রিকেটার এখন পাওয়া যায় না।’
টেস্ট, ওয়ানডে কিংবা টি-টোয়েন্টি সব ফরম্যাটেই সাকিবের ব্যাটিং গড় বেশ মানসম্মত। আবার বল হাতে সব ধরনের ক্রিকেটেই তাঁর গড় ত্রিশের নিচে। শেন ওয়াটসনের মতে বিশ্ব ক্রিকেটে সাকিবের মত এমন ‘কমপ্লিট অলরাউন্ডার’ কদাচিৎ পাওয়া যায়।