দুঃসময় পেরিয়ে দুর্দান্ত একটি বছর কাটালেন নাজমুল হোসেন শান্ত। একটা সময় পর্যন্ত যার জাতীয় দলে জায়গা পাওয়া নিয়ে হতো তির্যক সমালোচনা, সেই শান্তই এক বছরে ব্যবধানে হয়ে উঠেছেন বাংলাদেশের ব্যাটারদের মধ্যমণি। গোটা বছর ধারাবাহিকতায় দিয়েছেন আস্থার প্রতিদান। রানক্ষুধায় সম্মুখ গতিতে ছুঁটতে থাকা শান্তও এ সময়ের মধ্যে হয়ে উঠেছেন বাংলাদেশের এক পরিণত সেনানী।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পদচারণার ৬ বছর পেরিয়ে যাচ্ছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। অর্ধযুগের এ ক্যারিয়ারে অবশ্য খুব বেশি ম্যাচ খেলতে পারেননি। ৩ ফরম্যাট মিলিয়ে ৯৫ টি ম্যাচে ৩২৫৩ রান করেছেন এ বাঁহাতি ব্যাটার। মজার ব্যাপার হলো, এর মধ্যে ২০২৩ সালেই ১৬৫০ রান করেছেন শান্ত। যা শেষ হতে যাওয়া বছর বাংলাদেশি ব্যাটারদের মধ্যে সর্বোচ্চ।
এক পঞ্জিকা বর্ষে বাংলাদেশের মধ্যে শান্তর চেয়ে বেশি রানের রেকর্ডে রয়েছে কেবল দুজনের। এর আগে ২০২২ সালে ১৯২১ রান করেছিলেন লিটন দাস। আর ২০১৮ সালে ১৬৫৭ রান করেছিলেন মুশফিকুর রহিম।
বিশ্বকাপের বছরে ওয়ানডে ক্রিকেটেই ব্যস্ত ছিল বিশ্ব ক্রিকেট। নাজমুল হোসেন শান্তও নিজেকে প্রমাণের সুযোগটা পেয়েছেন এ বছরেই। আগের ৪ বছরে খেলেছিলেন মোটে ১৫ টা ওয়ানডে। এ বছরে খেলেছেন ২৭ টা ম্যাচ।
আর তাতে ২৬ ইনিংসে ৪১.৩৩ গড়ে ৯৯২ রান করেছেন এ বাঁহাতি ব্যাটার। শাহরিয়ার নাফিসের পর দ্বিতীয় বাংলাদেশি ব্যাটার হিসেবে এক পঞ্জিকাবর্ষে ওয়ানডে হাজার রান ছোঁয়ার হাতছানি থাকলেও, শেষ পর্যন্ত ৮ রানের আক্ষেপ নিয়েই বছর শেষ করতে হয়েছে শান্তকে।
তবে ২ সেঞ্চুরি ও ৮ হাফসেঞ্চুরিতে ব্যাট হাতে শান্ত ছিলেন দারুণ উজ্জ্বল। অবশ্য অর্জনের বছরে বিশ্বকাপে এসে খেই হারানো একটা ক্ষত হয়ে থাকবে শান্তর জন্য। এবারের বিশ্বকাপ যেমন বাংলাদেশের জন্য ছিল দুঃস্বপ্নে ঘেরা, তেমনি শান্তও এ সময়ে ব্যাট হাতে ছিলেন নিষ্প্রভ। গোটা বছর জুড়ে ব্যাট হাতে দারুণ ছন্দে থাকলেও বৈশ্বিক আসরে একদমই জ্বলে উঠতে পারেননি এ ব্যাটার।
লাল বলের ক্রিকেটে ২০২২ সালটা শান্ত শেষ করেছিলেন মাত্র ২১.৫৮ গড়ে। কিন্তু ২০২৩ সালটা যেন স্বপ্নের মতো কাটিয়েছেন এ ব্যাটার। ৪ টেস্টের মধ্যেই ৩ টি সেঞ্চুরি করেছেন। আর তাতে ৫৫ গড়ে করেছেন ৪৪০ রান। এর মধ্যে অধিনায়ক হিসেবে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জেতা ম্যাচে সেঞ্চুরিসহ ম্যাচসেরা হয়েছিলেন তিনি।
ওয়ানডে, টেস্টের মতো এ বছরে টি-টোয়েন্টিতে সেভাবে জ্বলে উঠতে পারেননি। ১০ ম্যাচে মাত্র ১ ম্যাচে পঞ্চাশ পেরিয়েছেন। তবে ১২০ এর উপরে স্ট্রাইকরেটে ব্যাটিং গড়টা রেখেছেন ৩০ এর উপরেই। ৯ ইনিংসে ৩৩.৫০ গড়ে করেছেন ২০১ রান।
২০২৩ সাল শেষ। এ বছরের মতোই সামনের বছরে ব্যস্ততায় কাটাবে বাংলাদেশ। নাজমুল হোসেন শান্তর জন্য ২০২৩ ছিল ভাগ্য বদলের বছর। এবার শুধু এগিয়ে যাওয়ার পালা। ২০২৩ এর মতো সামনের বছরেও নিশ্চিতভাবেই নিজেকে রাঙানোর দিকে ছুটবেন বাংলাদেশের এ বাঁহাতি ব্যাটার।