চেনা মঞ্চ, অচেনা তরুণ। মঞ্চটা অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপের। আর অচেনা তরুণের নাম আশিকুর রহমান শিবলী। বাংলাদেশ ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ বিবেচনায় বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে নজর থাকে অনেকেরই। বর্তমান বাংলাদেশ দলটার দিকে তাকালেই হয়। দলের সিংহভাগ ক্রিকেটারই বাংলাদেশের বয়সভিত্তিক ক্রিকেটের ফসল।
তবে সব বীজ তো আর অঙ্কুরোদগম হয় না। বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে দারুণ প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেও বাইশ গজের পথচলায় অনেকের ক্যারিয়ার থেমে গিয়েছে সীমিত পরিসরে। তবে আশিকুর রহমান শিবলী যেন এই চনমনে বয়সেই ব্যাট হাতে নিজস্ব একটা বৃত্ত আঁকছেন। রানক্ষুধায় পরিণত হওয়ার পথে হাঁটছেন। আর তাতে ফরিদপুরের অচেনা তরুণটাই এখন নিজেকে আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে যাচ্ছেন। ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি উইকেটকিপিংয়ে সিদ্ধহস্ত হওয়ায় ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের মুশফিক কিংবা লিটনের উত্তরসূরী হওয়ার পথে ছুটছেন।
দুবাইয়ে চলছে অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপের আসর। বয়সভিত্তিক সেই টুর্নামেন্টেই রীতিমত রানফোয়ার ছোটাচ্ছেন শিবলী। যুব ক্যারিয়ারে এর আগে চারটি ফিফটি। যার দুটিই আবার এবারের এশিয়া কাপ আসরে করেছিলেন। সংযুক্ত আর আমিরাতের বিপক্ষে ৭১ আর জাপানের বিপক্ষে অপরাজিত ৫৫ রানের ইনিংস খেলেছিলেন এ তরুণ ব্যাটার। কিন্তু এবার আগের দুটি ইনিংসকেও ছাপিয়ে গেলেন শিবলী। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২০০ রানের লক্ষ্যে ওপেনিংয়ে ব্যাটিংয়ে নেমে ছুঁয়েছেন শতক। খেলেছেন ১৩০ বলে ১১৬ রানের অপরাজিত একটি ইনিংস।
এ নিয়ে এবার যুব এশিয়া কাপে টানা ৩ ম্যাচে পঞ্চাশোর্ধ রানের ইনিংস খেললেন আশিকুর রহমান শিবলী। অবশ্য ব্যাট হাতে এমন প্রতাপের পূর্বাভাস আগেও দিয়েছিলেন এ তরুণ ক্রিকেটার। ২০২২ সালের নভেম্বরে পাকিস্তানের মাটিতে অনূর্ধ্ব-১৯ দলের বিপক্ষে সিরিজে তিন ম্যাচে ৭৪, ৪২ ও ৭২ রান করে হয়েছিলেন সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ব্যাটার। তাঁর ব্যাটিং নৈপুণ্যে বাংলাদেশও সিরিজ জিতেছিল ২-১ ব্যবধানে।
তবে বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচের আগে ৪ ফিফটি থাকলেও ছিল না কোনো সেঞ্চুরি। লঙ্কানদের বিপক্ষে সেই আক্ষেপটাই মিটিয়েছেন আশিকুর রহমান শিবলী। ব্যক্তিগত ইনিংসের ১১৯তম বলে সিঙ্গেল নিয়ে যুব ক্যারিয়ারের প্রথম শতক পূরণ করেন তিনি। সেঞ্চুরি পূরণের পথে খেলেন ৯ টি চার ও ২ টি ছক্কা।
অবশ্য শতক পূরণেই ক্ষান্ত থাকেননি এ ব্যাটার। দলকে জিতিয়েই মাঠ ছাড়েন তিনি। আর অনবদ্য ব্যাটিংয়েই ৫৫ বল আর ৬ উইকেট হাতে রেখে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ যুব দল। আর এ জয়ের ফলে গ্রুপ পর্বে অপরাজিত থেকেই শেষ ৪ নিশ্চিত করলো তাঁরা। সেমিফাইনালে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ভারত অনূর্ধ্ব-১৯ দল। গুরুত্বপূর্ণ সে ম্যাচেও নিশ্চিতভাবেই শিবলীর ব্যাটের দিকে তাকিয়ে থাকবে পুরো বাংলাদেশ।
অনূর্ধ্ব-১৯ থেকে জাতীয় দল, এমন উদাহরণ রয়েছে অনেক। শিবলী চাইলেই এমন অনুপ্রেরণা খুঁজে নিতে পারেন। তবে শিবলী নিশ্চিতভাবেই শুধু ‘জাতীয় দল’ স্বপ্নেই আটকে থাকবেন না, তাঁর চোখেমুখে থাকবে বিশ্বজয়েরও ছাপ। অবশ্য সামনেই তো যুব বিশ্বকাপ। ২০২০ সালে যে ইতিহাস আকবর, হৃদয়, শরিফুলরা গড়েছিলেন, তার পুনরাবৃত্তি এবার নাহয় ঘটুক আশিকুর রহমান শিবলীর হাত ধরে।