সবসময়ই বলা হয় যে লম্বা ক্রিকেটারকে ক্রিকেটে বাড়তি সুবিধা পান। লম্বা পেসাররা পিচ থেকে বেশি বাউন্স আদায় করে নিতে পারেন। লম্বা ব্যাটসম্যানদে পুল কিংবা হুক শট খেলতে সুবিধা হয় এমনকি লম্বা স্পিনাররাও পিচ থেকে বাড়তি সুবিধা নিতে পারেন। তবে এতকিছুর পরেও ক্রিকেটে মেধা আর পরিশ্রমটাই সবচেয়ে জরুরি।
ক্রিকেটে ইতিহাসে অনেক খাটো ক্রিকেটাররাও নিজেদের নিয়ে গিয়েছেন সেরাদের কাতারে। শুরুতে খানিকটা অসুবিধা হলেও তাঁরা তাঁদের দুর্বলতাকেই শক্তিকে রূপান্তরিত করেছেন। এখন আমরা তাঁদের নিয়ে আলাপ করবো যারা তুলনামূলক খাটো হয়েও যারা ক্রিকেট বিশ্বে নিজেদের দ্যুতি ছড়িয়েছেন। কেউ কেউ বনে গেছেন কিংবদন্তিও।
- সুনীল গাভাস্কার (ভারত)
ভারতের ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সফল ব্যাটসম্যান। যিনি দেশটির ক্রিকেটে ব্যাটিংটাকে নতুন করে লিখেছিলেন। ভারতের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটে ১০ হাজার রানের কোটা পূরণ করেন।
১৯৮০ সালে তিনি উইজডেন ক্রিকেটার অব দ্য ইয়্যারও ঘোষিত হয়েছিলেন। ভারতীয় ক্রিকেটের এই কিংবদন্তির উচ্চতা মাত্র ৫ ফুট ৫ ইঞ্চি। তবে এই উচ্চতা যে কোন বাঁধা হয়ে দাড়ায়নি সেটা তাঁর পরিসংখ্যান দেখলেই বোঝা যায়।
- টাটেন্ডা টাইবু (জিম্বাবুয়ে)
জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ নাম তাতেন্দা তাইবু। দেশটির অধিনায়কত্বের দায়িত্বও পালন করেছেন এই ক্রিকেটার। মাত্র ১৮ বছরেই অভিষিক্ত হয়েছিলেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। আর মাত্র ২১ বছর বয়সে তিনি কনিষ্ঠতম টেস্ট অধিনায়ক হন।
জিম্বাবুয়ের এই কিপার ব্যাটসম্যান দেশটি হয়ে মোট ১১৩ টি ওয়ানডে ও ২৮ টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন। ২০১১ ওয়ানডে বিশ্বকাপে নজর করেছিলেন এই ব্যাটসম্যান। অথচ তাঁর উচ্চতা ছিল ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি। ২৯ বছর বয়সে ক্রিকেটকে বিদায় জানান তাতেন্দা তাইবু।
- কেদার যাদব (ভারত)
২০১৪ সালে ভারতের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষিক্ত হন কেদার যাদব। ভারতের ২০১৯ বিশ্বকাপ দলেও জায়গা করে নিয়েছিলেন এই ক্রিকেটার। ওয়ানডে ক্রিকেটে আক্রমণাত্মক ব্যাটিং এর জন্য পরিচিত তিনি।
এই ফরম্যাটে তাঁর ব্যাটিং স্ট্রাইক রেট ১০৩। সবমিলিয়ে ভারতের হয়ে খেলা ৫৯ ওয়ানডে ম্যাচে ৪৩ গড়ে করেছেন প্রায় ১১০০ রান। এছাড়া তাঁর ঝুলিতে আছে ২৭ টি উইকেটও। অথচ এই ক্রিকেটারের উচ্চতাও মাত্র পাঁচ ফুট চার ইঞ্চি।
- শচীন টেন্ডুলকার (ভারত)
ক্রিকেটের এই মহাতারকা নিজেই লাখো ক্রিকেট ভক্তের অনুপ্রেরণার কারণ। প্রায় দুই যুগ লম্বা আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে ব্যাটিং এর সব রেকর্ড ভেঙেচুড়ে নতুন করে লিখেছেন।
এই কিংবদন্তিতে লিটল মাস্টার বা লিটল জিনিয়াস – অনেক নামেই ডাকা হয়। তাঁর ঝুলিতে আছে ৩৪ হাজারের বেশি আন্তর্জাতিক রান। বিশ্বের একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে করেছেন ১০০ টি সেঞ্চুরি করার রেকর্ড। এই সবই করেছেন পাঁচ ফুট চার ইঞ্চি উচ্চতা নিয়ে।
- মুশফিকুর রহিম (বাংলাদেশ)
বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সফল ব্যাটসম্যান তিনি। এই কিপার ব্যাটসম্যান প্রায় ১৬ বছর ধরে বাংলাদেশের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলে যাচ্ছেন। বাংলাদেশের অধিনায়ক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।
২২৭ ওয়ানডে ম্যাচে ৮ টি সেঞ্চুরি সহ তাঁর ঝুলিতে আছে ৬৫৮১ রান। এছাড়া টেস্টেও প্রায় ৫ হাজার রানের মালিক এই ব্যাটসম্যান। মুশফিকুর রহিমের উচ্চতা মাত্র ৫ ফুট ৩ ইঞ্চি।
- মুমিনুল হক সৌরভ (বাংলাদেশ)
মুমিনুল এই মুহুর্তে বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়ক। প্রাচীন এই ফরম্যাটে বাংলাদেশের অন্যতম সফল ব্যাটসম্যানও তিনি। বাংলাদেশের হয়ে এখন পর্যন্ত ৪৫ টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন তিনি। সেখানে ৪২.৯৩ গড়ে তিনি করেছেন ৩৩৪৯ রান।
এর মধ্যে টেস্ট ক্রিকেটে মুমিনুলের ঝুলিতে আছে ১১ টি সেঞ্চুরিও। অথচ বাংলাদেশের এই টেস্ট অধিনায়কের উচ্চতা মাত্র ৫.২৮ ফুট।
- পার্থিব প্যাটেল (ভারত)
মাত্র ১৭ বছর বয়সে ভারতের হয়ে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষিক্ত হয়েছিলেন এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান। তবে মহেন্দ্র সিং ধোনি আসার পর ভারত দলে তাঁর জায়গা পাওয়া বেশ কঠিন হয়ে পড়ে।
তাঁর নেতৃত্বে ২০১৭ সালে গুজরাট রঞ্জি ট্রফি জয় করে। ওদিকে ভারতের হয়ে পার্থিব ২৫ টেস্ট ও ৩৮ টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন। এই পকেট ডায়নামাইটের উচ্চতা ৫.২৫ ফুট।
- ওয়াল্টার কর্নফোর্ড (ইংল্যান্ড)
১৯৩০ সালে ইংল্যান্ডের হয়ে টেস্ট ক্রিকেট খেলেন ওয়াল্টার কর্নফোর্ড। কাউন্টি ক্রিকেটে এই ব্যাটসম্যানের ঝুলিতে ছিল প্রায় ৭ হাজার রান।
১৯২১ সালে পাঁচ ফুট উচ্চতার এই ক্রিকেটার অভিষিক্ত হয়েছিলেন কাউন্টি ক্রিকেটে। বিশ্বযুদ্ধের কারণে লম্বা সময় ক্রিকেট খেলতে পারেননি। ফলে মাত্র ৪ টেস্টেই থেমে যায় তাঁর আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার।
- ক্রুজার ভ্যান উইক (নিউজিল্যান্ড)
দক্ষিণ আফ্রিকায় জন্মগ্রহণ করলেও প্রোটিয়াদের হয়ে কখনো খেলতে পারেননি উইক। কেননা সেই সময় কিপার ব্যাটসম্যান হিসেবে ছিলেন মার্ক বাউচার। তাই ২০০৬ সালে ক্রিকেট খেলতে পাড়ি জমান নিউজিল্যান্ডের উদ্দেশ্যে।
অবশেষে ২০১২ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষিক্ত হন তিনি। তিনিই সবচেয়ে খাটো ক্রিকেটার হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছেন। তাঁর উচ্চতা ছিল ৪.৭৫ ফুট।