শ্রেয়াস আইয়ার, ব্যাট তাঁর রঙ-তুলি

খুব বেশিদিন আগের কথা না। এই চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতেই ৪৪ বলে অপরাজিত ৭৪ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে একটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ জিতিয়েছিলেন শ্রেয়াস আয়ার।

সেই ইনিংস দেখে সুনীল গাভাস্কার বলেছিলেন, ‘আইয়ারের শট দেখলে মনে হয় সে রজার ফেদেরার, জকোভিচদের মত টেনিসে ফোরহ্যান্ড শট খেলছে। দারুণ বুদ্ধিদীপ্ত ব্যাটিং।’ 

গাভাস্কারের পর্যবেক্ষণ যথার্থ। আইয়ার যেকোন বলে ফুল ফেসে ব্যাট চালাতে পারেন। ফিল্ডারদের প্লেসমেন্ট দেখে উদ্ভাবনী সব শট খেলতে পারেন।  এ ছাড়া শ্রেয়াস আয়ার যতক্ষণ ক্রিজে থাকেন, ততক্ষণ বেশ স্বাচ্ছন্দ্যেই থাকেন, নির্ভয়ে ব্যাট করেন- এমন কথা বহু বছর আগে থেকেই ক্রিকেট বিশ্লেষকরা বলে আসছেন।

তবে ব্যাটার হিসেবে সেঞ্চুরি না পেলে ঠিক পূর্ণতা মেলে না। এই যেমন দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে গত ম্যাচে সেঞ্চুরি করে আবারও নতুন করে লাইম লাইটে এসেছেন শ্রেয়াস আয়ার। অথচ ওয়ানডেতে বেশকিছু দিন ধরেই তিনি দুর্দান্ত ফর্মে রয়েছেন। 

সেঞ্চুরির আগের ৫ ইনিংস দেখলেই সেটা বুঝা যায়- ৮০,৫৪, ৬৩, ৪৪, ৫০। অর্থাৎ এই ৫ ইনিংসের মধ্যে ৪ টিতেই ফিফটি। শুধু সেঞ্চুরিটাই পাচ্ছিলেন না তিনি। অবশেষে প্রায় আড়াই বছর পর আবারও সেঞ্চুরি করে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় শতক তুলে নিয়েছেন আয়ার। রাঁচিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে খেলছেন ১১১ বলে অপরাজিত ১১৩ রানের দারুণ ইনিংস।

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ২৭৯ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই এ দিন চাপে পড়ে ভারত। ৪৮ রানের মাঝেই হারিয়ে ফেলে ২ উইকেট। তবে সেখান থেকেই ভারতের ইনিংসের ঘুরে দাঁড়ানোর যাত্রা শুরু হয়। প্রোটিয়া বোলারদের উপর পাল্টা আক্রমণ শুরু করে শ্রেয়াস আইয়ার আর ঈশান কিষাণ।

তড়িৎ গতিতে ১৬১ রানের জুটি গড়ে তারা। তবে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি থেকে মাত্র ৭ রান দূরে থাকতে আউট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরে যান ইশান কিষাণ। এর বাকি কাজটা সারেন শ্রেয়াস আইয়ার।

ঈশান কিশান যখন আউট হয়েছেন তখনও ভারতের প্রয়োজন ৭৪ বলে ৯৩ রান। তবে সেই সমীকরণও মুহূর্তে সহজ করে ফেলেন আয়ার। নিজের দ্বিতীয় সেঞ্চুরির পাশাপাশি ভারতকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যান হাতে ২৫ রেখেই। অর্থাৎ ভারত তাদের শেষ ৯৩ রান করে মাত্র ৪৯ বলে!

শ্রেয়াস আইয়ারের ১১১ বলে ১১৩ রানের ইনিংসে কোনো ছক্কা নেই, কিন্তু চার মেরেছেন ১৫ টি। এই ১৫ টি বাউন্ডারির মাঝে আয়ার ৭ টিই মেরেছেন কাট শটে। শুধু ঐ এক শটই যে তিনি ইনিংস জুড়ে খেলেছেন তা কিন্তু নয়।

কাট শটের পরে সবচেয়ে বেশি রান পেয়েছেন কাভার ড্রাইভ খেলে। এ ছাড়া লং অন, লং অফ- দুই অঞ্চলেই প্রায় সমান রান পেয়েছেন। অর্থাৎ পারফেক্ট ক্রিকেটিং শট খেলে সেঞ্চুরি তুলে নেওয়া বলতে যা বুঝায় সেভাবেই সেঞ্চুরি করেছেন শ্রেয়াস আইয়ার। 

এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ স্কোয়াডে জায়গা পাননি আইয়ার। এটা এক প্রকার দুর্ভাগ্যই বলা যায়। বছরের শুরুর ৪ টি-টোয়েন্টি ম্যাচের তিনটিতেই ফিফটি। কী দুর্দান্ত শুরু! কিন্তু এরপরেই কিছুটা ছন্দপতন। গড়পড়তা রান করে গেলেন।

কিন্তু, ভারতের স্কোয়াডে ঢুকতে গড়পড়তা পারফরম্যান্স তো আর যথেষ্ট নয়। তবে নিজের আরেক প্রিয় ফরম্যাট ওয়ানডেতে ঠিকই নিজের ছন্দ ধরে রেখেছেন। এখন পর্যন্ত এ বছরে ৯ ইনিংসে ৪ ফিফটি আর এক সেঞ্চুরিতে করেছেন ৪৫৮ রান। গড় ৫৭.২৫!

ভারতের ক্রিকেটে সব ফরম্যাটে এখনো অবিচ্ছেদ্য অংশ হতে পারেননি শ্রেয়াস আইয়ার। তবে এরই মধ্যে নিজের ব্যাটিংয়ে আলাদা একটা প্যাটার্নের স্বাক্ষর রাখতে পেরেছেন তিনি। ভারতের ক্রিকেট আকাশে হয়তো এখন শুকতারা হয়ে আছেন আইয়ার।

তবে, সবার অগোচরে ভোররাতে সূর্য ওঠার আগে সবচেয়ে উজ্জ্বলতম আলোটা ছড়িয়ে দেয় শুকতারাই। শ্রেয়াস আয়ারও বাইশ গজের ক্রিকেটে সেই আলো ছড়িয়ে যাচ্ছেন শুকতারার মতো নীরবে, নিভৃতে। 

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link