একবেলা ক্রিকেট খেলেন তো আরেকবেলা ফুডপান্ডায় ডেলিভারিম্যানের কাজ করেন। খেলা-৭১ এর নিয়মিত দর্শক যারা তাঁদের কাছে এই গল্পটা পরিচিত। একজন পেসার হিসেবে তৌহিদুল ইসলাম সিয়ামের জীবন সংগ্রাম তুলে ধরা হয়েছিল সেই রিপোর্টে। রোজ সকালে পেস বোলিং করে আবার দুপুরের পর সাত-আট ঘন্টা সাইকেল চালানোর কাজটা রীতিমত অমানবিকই। ক্রিকেটের প্রতি সিয়ামের এই ভালোবাসা, ত্যাগ ও একাগ্রতা দেখে অনেকেই তাঁকে সাহায্য করতে চেয়েছেন। তাঁদেরই একজন গায়ক ও সমাজকর্মী তাশরিফ খান।
সিয়ামের জীবনযুদ্ধটাকে খুব সহজ করে দিলেন তিনি। বলা যায় ছয় মাসের জন্য সিয়ামের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন তাশরিফ খান। নিজে সাথে গিয়ে সিয়ামের ছয় মাসের বাসা ভাড়া দিয়ে এসেছেন। এছাড়া দেশের বড় বড় ক্রিকেটাররা যেখানে জিম করেন সেই জিমেও ছয় মাসের টাকা পরিশোধ করে দিয়েছেন। প্রায় পুরো একটা দিন সিয়ামকে সাথে নিয়েই এই কাজগুলো করেছেন তাশরিফ। সাথে ছিল খেলা-৭১ ও।
সিয়ামের সাথে তাশরিফের যাত্রাটা শুরু হলো আবাহনী মাঠ থেকেই। সিয়ামের চিরচেনা উইকেটটায় একটু ক্রিকেট খেলা যাক। এরপরই শুরু হবে সিয়ামকে নিয়ে তাঁর স্বপ্নপূরণের যাত্রা।
সেখান থেকে সরসারি আমাদের গন্তব্য সিয়ামের বাসায়। বাড়ির মালিকের সাথে কথা বলে ছয় মাসের ভাড়া হিসেব করে দিয়ে দিলেন তাশরিফ। ঢাকা শহরে থাকা নিয়ে অন্তত এই ছয় মাস আর সিয়ামকে ভাবতে হচ্ছে না।
বাসা ভাড়া দিয়েই সিয়ামকে সাথে নিয়ে তাশরিফ ছুঁটলেন জিমের দিকে। যে জিমে নিজেদের ফিটনেস নিয়ে কাজ করেন তাসকিন আহমেদ-সহ বাংলাদেশের সেরা সব ক্রিকেটাররা। এই জিমের দেবাশীষ ঘোষ বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের জন্য সবচেয়ে বিশ্বস্ত নাম। ফলে পেসার সিয়ামকেও ভর্তি করে দেয়া হলো এই জিমেই।
মূলত কুড়েঘর ব্যান্ডের ভোকাল হিসেবেই একটা পরিচিতি পেয়েছিলেন তাশরিফ খান। তবে এরপর সমাজকর্মী হয়ে বাংলাদেশের অসহায় মানুষের অনেক কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছেন তিনি। বিশেষ করে সিলেটের বন্যার সময় নিজেদের জীবন বাজি রেখে কাজ করেছে তাশরিফ ও তাঁর দল। তবে একজন ক্রিকেটারের জন্য কেন এগিয়ে আসলেন তিনি সেই প্রশ্ন করা হয়েছিল তাঁকে।
এছাড়া এই ছয় মাস সিয়ামের খাবার ও ক্রিকেট সরঞ্জাম কেনার খরচও বহন করারও দায়িত্ব নিয়েছেন এই সমাজকর্মী। যেন সিয়াম শুধু ক্রিকেট খেলাটায় মনোযোগ দিতে পারে। অন্তত এই ছয়টা মাস যেন তাঁকে জীবনের এই কঠিন নির্মমতার মুখোমুখি হতে না হয়। তাশরিফ খানের এই অবদান আসলে দেশের ক্রিকেটের জন্যেও। সিয়াম এই সুযোগটা কাজে লাগাতে পারলে বদলে যেতে পারে তাঁর জীবন। এছাড়া সিয়াম ও তাশরিফের এই গল্প দেশের ক্রিকেটের জন্যও হতে পারে এক অনুপ্রেরণা।